জেলা পরিষদে ক্ষমতায় এসেও কাটল না অস্বস্তি
কামদুনির ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয়েছে রাজ্য। নজর পড়েছে গোটা দেশেরও। সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের সাক্ষী বরুণ বিশ্বাসকে খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাসক দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমেছে স্থানীয় মানুষের। গাইঘাটায় কিশোরীকে খুনের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা তুঙ্গে। শাসন-সহ সন্ত্রাসের অভিযোগ বিভিন্ন এলাকায়। সবশেষে, ভোটের ঠিক আগের দিন রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তাল আমডাঙা।
এত সব কিছু সামলেও ভোটের ফলাফলে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদে ক্ষমতায় এল তৃণমূল। সার্বিক চিত্রটা আশাব্যঞ্জক হলেও জেলার কিছু প্রান্তে সামান্য ব্যাকফুটে তারা। কারণ কী, খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবারই মধ্যমগ্রামে জেলা পার্টি অফিসে আলোচনায় বসেছেন দলের নেতারা।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদে গত বার আসন ছিল ৫১টি। এ বার তা বেড়ে হয়েছে ৫৭। গত বার তৃণমূল-কংগ্রেস মিলে পেয়েছিল ২৪টি আসন (কংগ্রেস- ৮টি)। বামেদের হাতে ছিল ২৭টি। এ বার বামেদের দৌড় থমকেছে ২০টি আসনে এসে। তৃণমূল পেয়েছে ৩৭টি। তৃণমূলের দাবি, লাগাতার উন্নয়ন ও সুশাসনের জোয়ারেই এই সাফল্য। অন্য দিকে, ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে হিমসিম বামেদের অন্দরে।
দলের জয়োল্লাসে সামিল হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ দিনেশ ত্রিবেদী। কাঁকিনাড়ায় ছবি তুলেছেন সজল চট্টোপাধ্যায়।
বস্তুত, গত বিধানসভা ভোটের পর থেকেই এই জেলা পরিষদে বামেরা ক্রমশ কোণঠাসা হয়েছে। জেলা পরিষদের আসন সংখ্যার নিরিখে তাদের আধিক্য থাকলেও স্থায়ী সমিতিতে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছিল বামেরা। সাংসদ-বিধায়কদের সংখ্যা ধরে স্থানীয় সমিতির এই গঠনতন্ত্রের জেরে উন্নয়ন এক রকম স্তব্ধই হয়ে পড়েছিল এই জেলায়। বামেরা অভিযোগ তোলে, তাদের কাজ করতে দিচ্ছে না তৃণমূল। তৃণমূল অবশ্য তত দিনে রাজ্যে ক্ষমতায় এসে গিয়েছে। স্বভাবতই অভিযোগ মানেনি তারা। দায় যারই হোক না কেন, উন্নয়নের কাজ যে থমকে গিয়েছিল, তা মেনে নেয় সব পক্ষই।
সমস্যা মেটাতে গত বছর এপ্রিল মাসে জেলা পরিষদে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ করে রাজ্য সরকার। যা এক অর্থে শাসক দলের ‘মাস্টারস্ট্রোক’ ছিল বলেই মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহল। বাস্তবিকই, অ্যাডমিনিস্ট্রার নিয়োগে জেলায় উন্নয়নের কাজে গতি আসে। সেই সঙ্গে জেলা পরিষদে গৌণ হয়ে যায় সিপিএম। একশো দিনের কাজ, বিভিন্ন ভাতার টাকা বিলি, রাস্তা তৈরি, পানীয় জলের ব্যবস্থা প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রচুর কাজ হয় কিছু দিনের মধ্যেই। খরচ হয় বিস্তর টাকা। যা তৃণমূলের ভাবমূর্তিকে এক ধাক্কায় অনেকটাই এগিয়ে দেয় বলে দলের নেতাদের একাংশ মনে করছেন। এ বার ভোটের ফলেও তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “উন্নয়নের ধারা বজায় রেখে ভাল ফল হয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, বহু সমালোচনার পরেও মানুষ আসলে তৃণমূলের উপরেই ভরসা রেখেছেন।”
কিন্তু কোথাও কোথাও অস্বস্তি কিছুটা থেকেই গেল তৃণমূলের অন্দরে। বিশেষত, বসিরহাট এলাকায়। এখানে জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতে বামেদের প্রাপ্তি সেই ইঙ্গিতই করছে। বনগাঁর কিছু ক্ষেত্রেও ফলাফল অস্বস্তিতে রাখল তৃণমূলকে।
গত বার ২০০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ১৩৪টি। এ বার ৪২টি ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েতের হিসাব বাদ দিলে তৃণমূল এখনও পর্যন্ত পেয়েছে ৯৯টি। গত বার বামেদের হাতে ছিল ৬৪টি পঞ্চায়েত। এ বারা তারা ইতিমধ্যেই পেয়ে গিয়েছে ৫৭টি। পঞ্চায়েত সমিতির ২২টির মধ্যে গত বার ১৮টি পেয়েছিল তৃণমূল। এ বার তাদের দৌড় থেমেছে ১৪টিতে। অন্য দিকে, বামেরা গত বার পেয়েছিল ৪টি পঞ্চায়েত সমিতি। এ বার ৬টির দখল পেয়েছে তারা। ২টি অবশ্য এখনও ত্রিশঙ্কু অবস্থায় আছে। এর মধ্যে উল্লেখ করা যায় কংগ্রেসের কথা। যারা গত বার পঞ্চায়েত ভোটে ২টি পঞ্চায়েত ধরে রাখতে পারলেও এ বার শূন্য অঙ্কে নেমে এসেছে। বসিরহাট মহকুমায় জেলা পরিষদের ৬টি আসনে জয়ী হয়েছিল তারা। এ বার তাদের ঝুলি একেবারেই ফাঁকা। কয়েকটি পঞ্চায়েত সমিতিও হারিয়েছে তারা।
বসিরহাটে জেলা পরিষদে ভাল ফল করেছে সিপিএম। গত বার ২২টি আসনের মধ্যে ১২টি পেয়েছিল তারা। এ বার ২৫টি আসনের মধ্যে ১৫টিই গিয়েছে তাদের দখলে। তৃণমূলেরও অবশ্য আসন বেড়েছে। গত বার ৪ থেকে এ বার তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৯টিতে।
অন্য দিকে, তৃণমূলের হাতে থাকা হাসনাবাদ, স্বরূপনগর, হিঙ্গলগঞ্জ এবং সন্দেশখালি ২ পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে বামেরা। এই মহকুমার ১০টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে কংগ্রেসের হাতে ছিল ৩টি। তৃণমূল বাকি ৭টিতে ক্ষমতায় ছিল। সিপিএমের হাতে কোনও পঞ্চায়েত সমিতির দখল ছিল না আগের পঞ্চায়েত ভোটে। এ বার ৪টি পঞ্চায়েত সমিতিতে জিতে গিয়েছে তারা।
বসিরহাট মহকুমার ১০টি ব্লকের ৯০টি পঞ্চায়েতে ১৪৬০টি আসনের মধ্যে সিপিএম পেয়েছে ৫৯৪টি। অন্য দিকে, তৃণমূলের দখলে গিয়েছে ৫৮৫টি আসন। কিছু আসনে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস ও বিজেপি।
বনগাঁ মহকুমায় ৯টি জেলা পরিষদের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ৮টি। সিপিএম একটি। তিনটি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে তিনটিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। ৩৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের দখলে গিয়েছে ২৩টি। ১০টি পেয়েছে বামেরা। মহকুমায় পঞ্চায়েতে মোট ৭২৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৪০১টি আসন পেয়েছে। ২৯২টি পেয়েছে বামেরা। যা আগের নির্বাচনের তুলনায় বেশি।
দেখা যাচ্ছে, গত বার যে সব পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল, সেগুলির কয়েকটিতে এ বার পরাজিত হয়েছে তারা। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, মানুষ উন্নয়ন ভালই বোঝেন। ঠিকঠাক কাজ না করলে তাঁরা ছেড়ে কথা বলবেন না, এটাই আমাদের বুঝতে হবে। পাশাপাশি সিপিএমের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা। যদিও সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, তাঁদের যথেষ্ট কোণঠাসা অবস্থা। শাসক দলের এ সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।
জেলা সিপিএম নেতা অমিতাভ নন্দী বলেন, “আমাদের দীর্ঘ দিন উন্নয়নের কাজই করতে দেয়নি তৃণমূল। সেই ফলই ভুগতে হচ্ছে আমাদের। তা ছাড়া, শাসক দলের সন্ত্রাস তো ছিলই।” যথারীতি এই অভিযোগ মানতে চাননি তৃণমূল নেতৃত্ব।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.