কংগ্রেস সম্পর্কে আকছার যে কটাক্ষ করে তৃণমূল, নিজের দল সম্পর্কে সেই লব্জেই মন্তব্য করে বসলেন হুমায়ুন কবীর।
উপ-নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন আগেই। দলনেত্রীর নির্দেশে পঞ্চায়েতে ‘ভাল’ কিছু করে দেখানোর একটা সুযোগ জুটে গিয়েছিল তাও। মান বাঁচাতে না পেরে মঙ্গলবার সকালে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। সটান বলে বসলেন, “এ ভাবে চললে মুর্শিদাবাদে তৃণমূল অচিরেই সাইনবোর্ড হয়ে যাবে!”
তাঁর ক্ষোভ অবশ্য জেলা নেতাদের উপরেই। তাঁদের ‘অসহযোগিতা’র ফলেই এ ভাবে পর্যদুস্ত হয়েছে দল। এমনই মনে করছেন কংগ্রেস-ত্যাগী হুমায়ুন। তিনি বলেন, “ভোটের আগে মুকুল রায় জেলায় এসে পাঁচ জনের কমিটি তৈরি করে দিয়েছিলেন। চেয়ারম্যান করা হল সুব্রত সাহাকে। কোথায় তিনি? সাগরদিঘির বাইরে তাঁকে তো দেখাই গেল না।” সব হারিয়ে এখন রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী সুব্রতবাবুর দিকেই আঙুল তুলছেন হুমায়ুন। |
সাড়ে চার মাস মন্ত্রিত্বের মাথায় ভোটে হেরেছিলেন হুমায়ুন। তার পরে আরও দেড় মাস মন্ত্রী ছিলেন। মন্ত্রিত্ব হারানোর পরে দলের নেতারা তাঁকে বলেছিলেন, জেলায় ফিরে গিয়ে ‘মন দিয়ে’ পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে। আশ্বাস ছিল, জিতলে ‘তুই-ই হবি জেলা পরিষদের সভাধিপতি।’ কোথায় কী? এখন হুমায়ুন-ঘনিষ্ঠরা তাই আড়ালে বলছেন, ‘আমও গেল, ছালাও গেল!’ রেজিনগরের কংগ্রেসের শক্ত ভিতে জিতেছিলেন তিনি। তবে সে জয়ের পিছনে ছিল তাঁর এক সময়ের ‘দাদা’ অধীর চৌধুরীর দরাজ হাত। কিন্তু দাদা-ভাইয়ের বিরোধে দল ছেড়ে মন্ত্রিত্বের ‘লোভে’ তৃণমূলে যোগ দিলেও উপনির্বাচনেই হেরে গিয়েছিলেন হুমায়ুন। আর এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের দাপটে দূরবিন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তৃণমূলকে।
হতাশ তিনিও। জেলার অবিসংবাদী ‘ডন’ অধীর চৌধুরীর সঙ্গে টক্কর নিতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছেন যে। হুমায়ুন অবশ্য আক্ষেপ করছেন, ‘অধীরদা’ ভোটের আগে জেলা চষে বেড়িয়েছেন। আর জেলায় তাঁর দলের এক মাত্র মন্ত্রী সুব্রত সাহা নিজের বিধানসভা কেন্দ্র সাগরদিঘির বাইরে পা-ই রাখতে পারেননি।
তবে ভরাডুবির এটাই মূল কারণ বলে মনে করেন না বহু মামলায় অভিযুক্ত হুমায়ুন। তাঁর অভিযোগ, “অধীরবাবুর সঙ্গে সুব্রত সাহার অঘোষিত সমঝোতা সবাই জানেন। তাই রাজ্যে ক্ষমতায় থাকার পরেও বহরমপুর পুরসভার দুর্নীতি নিয়ে আমরা সোচ্চার হই না।” তাঁর সতর্কবাণী, “আগামী নভেম্বরে বহরমপুর পুরসভা ভোট। এখন থেকে পুরসভার দুনীর্তির বিরুদ্ধে সরব না হলে বাকি সম্মানও বাঁচবে না।”
হুমায়ুনের অভিযোগের উত্তরে সুব্রতবাবু বলেন, “মুর্শিদাবাদে যাঁরা তৃণমূল করেন তাঁরা আন্তরিক ভাবেই করেন। আমরা জেলায় সংঘবদ্ধ হয়েই কাজ করি। অধীর চৌধুরীর সঙ্গে আমার অঘোষিত আঁতাঁতের কথা আগে কারও কাছে শুনিনি। এই প্রথম শুনলাম।” আর অধীর চৌধুরী? মৃদু হেসে হুমায়ুনের এক সময়ের ‘দাদা’ বলছেন, “কী বলব বলুন তো, এ সব অভিযোগের কোনও উত্তর হয়!” |