পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের বিপর্যয়ের জন্য দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই দায়ী করছেন অধীর চৌধুরী। যাঁর জেলা মুর্শিদাবাদেই একমাত্র জেলা পরিষদ দখল করতে পেরেছে কংগ্রেস। যেখানে অধীরের নিজস্ব ক্যারিশমা ও সংগঠনই সাফল্যের মূল রসায়ন।
পরিবর্তনের হাওয়ার বিরুদ্ধে গিয়েও গত বিধানসভা ভোটের মতোই এ বার নিজের সাংগঠনিক শক্তিতে বামফ্রন্টের হাত থেকে মুর্শিদাবাদের বেশির ভাগ পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ কেড়ে নিয়েছেন অধীর। সংগঠনের ভিত শক্তিশালী হলে যে সন্ত্রাস বা বিরোধী শক্তিকেও পরাস্ত করা সম্ভব, তা মনে করিয়ে দিতেই মঙ্গলবার অধীর হাওড়ায় রেলের এক অনুষ্ঠানের অবসরে সাফ বলেছেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিততে গেলে সংগঠন ছাড়া হয় না। যার যেখানে সংগঠনের জোর রয়েছে, সে-ই লড়াই করতে পেরেছে। যার ওই জোর নেই, সে পারেনি!” |
মুর্শিদাবাদে জেলা পরিষদের ৭০টির মধ্যে ৪২টি আসনে জিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে কংগ্রেস। বামফ্রন্ট এবং তৃণমূলকে অনেকটাই পিছনে ফেলে জেলার গ্রাম পঞ্চায়েতেও ১০৭টি আসন দখলে রেখেছে তারা। যেখানে মালদহ,উত্তর দিনাজপুরের মতো কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটিতে এ বার তুলনায় ভোটের ফল অনেকটাই খারাপ।
সামগ্রিক ভাবে সংগঠনের শক্তি বাড়ানো ছাড়া যে গত্যন্তর নেই, অধীরের এই বক্তব্যের পরে তা মেনে নিচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারাও। ঘনিষ্ঠ মহলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “অধীর-তত্ত্বই একমাত্র পথ!” তৃণমূলের বিরুদ্ধে শুধু মৌখিক আক্রমণ বা নালিশ করে যে কোনও সুরাহা হবে না, তা স্বীকার করে প্রদীপবাবু বলছেন, “অধীর যে ভাবে সংগঠনকে তৈরি করে মুর্শিদাবাদে মাটি আঁকড়ে রয়েছে, সেটাই অনুসরণ করতে হবে।”
আগামী লোকসভা ভোটে সম্মানজনক ফল পেতে এখন থেকেই দলের সংগঠনকে ঢেলে সাজতে চান প্রদেশ সভাপতি। সে জন্য জেলাওয়াড়ি পঞ্চায়েত ভোটের ফলের কারণ ব্যাখ্যা করে জেলা সভাপতিদের দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলেছেন তিনি।
হাইকম্যান্ডের পরামর্শ নিতে আগামী সপ্তাহেই দিল্লি যাওয়ার কথা প্রদীপবাবুর। প্রদেশ দফতর থেকে এ দিনই ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে দলের ফলাফল জানানো হয়েছে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী এবং রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক সি পি জোশীকে। আগামী ৪-৫ অগস্ট জেলা কংগ্রেস সভাপতি এবং জেলার দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত আর এক এআইসিসি নেতা শাকিল আহমেদ খানের। ওই বৈঠকেও জেলাওয়াড়ি সাংগঠনিক হালহকিকত নিয়েই কথা হতে পারে।
প্রয়াত বরকতের খাস তালুকে ফল আশাব্যঞ্জক না হওয়ায় অধীরের সংগঠন সংক্রান্ত মন্তব্যের তির তাঁর পাশের জেলা মালদহের দিকেও বলে মনে করছে কংগ্রেসের একাংশ। তবে মালদহের কংগ্রেস জেলা সভাপতি আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরীর যুক্তি, “মালদহে কংগ্রেসের সংগঠন শক্তিশালীই রয়েছে! পুলিশ-প্রশাসনকে দিয়ে সন্ত্রাস চালিয়ে এখানে তৃণমূল ভোট করেছে। বহু জায়গায় আমাদের কর্মীরা ভোট দিতেই পারেনি।”
তবে আর দেরি না করে বুথ স্তর থেকে কমিটি গড়ে এগোলেই কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়ানোর অক্সিজেন পাবে বলে মনে করেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা ও বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। তাঁর বিশ্লেষণ, “এত দিন জোটে থাকায় মানুষকে কংগ্রেসের চিহ্নটা চেনানোই যায়নি। সংগঠনও মজবুত হয়নি।”
মানসবাবুর নিজের তালুক সবংয়ে এই প্রথম পঞ্চায়েত সমিতি জিতেছে কংগ্রেস। মানসবাবুর ঘাঁটি আগলে পড়ে থাকাই তার কারণ বলে কংগ্রেসের মত।
সাংগঠনিক দুর্বলতার পাশাপাশি শাসক দলের সন্ত্রাসেও কংগ্রেস পঞ্চায়েতে ব্যাকফুটে গিয়েছে বলে অবশ্য অভিযোগ করেছেন অধীর। তাঁর কথায়, “এ রাজ্যে উন্নয়ন করতে না পারার ব্যর্থতা ঢাকতেই সন্ত্রাস হচ্ছে। রাজ্য সরকার শুধু ভোটে সন্ত্রাস নয়, নিজেদের উপর আস্থা না থাকায় গণনাতেও কারচুপি করেছে।” তবে সন্ত্রাসের মোকাবিলা করেও সাংগঠনিক শক্তির জোরে অধীর যে কংগ্রেসের দুর্গ রক্ষা করেছেন, মেনেই নিচ্ছেন প্রদেশ নেতৃত্ব।
|