|
|
|
|
সিপিএমের মুখ রাখল দাসপুর |
অভিজিত্ চক্রবর্তী • ঘাটাল |
একদা বামদুর্গ পশ্চিম মেদিনীপুরের তিনটি স্তরেই এ বার ঘাসফুলের জয়জয়কার। সিপিএম, কংগ্রেস-সহ অন্য দলগুলিকে দুরমুশ করে জেলা পরিষদে ও পঞ্চায়েত সমিতিতে একক ভাবে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। সবুজের একচ্ছত্র দাপটে অস্তিত্বসঙ্কট তৈরি হয়েছে লালের। এমনকী গত বিধানসভা ভোটে সিপিএমের দখলে থাকা গড়বেতা, চন্দ্রকোনার মতো বিধানসভা এলাকাগুলিতে গোষ্ঠীকোন্দল সত্ত্বেও সবক’টি স্তরেই নজরকাড়া ফল হয়েছে শাসকদল তৃণমূলের। এ সব সত্ত্বেও দাসপুর ২ ব্লকে সেই সার্বিক জয় পায়নি তৃণমূল। প্রবল তৃণমূল ঝড়েও সিপিএম ১৪টির মধ্যে ৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির ৩৯টি আসনের ১১টি আসনে নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পেরেছে।
সিপিএমের দাসপুর ২ জোনাল কমিটির সম্পাদক ললিতকুমার শী স্বাভাবিক ভাবেই এই জয়ে খুশি। তবে তিনি মানছেন, “এখানে আমদের সংগঠন দুর্বল ছিল। ২০০৮ সালে রাজ্যে আমরা ক্ষমতায় থাকলেও সেই সময় পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল ১১টি পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছিল। এখন শাসকদল তৃণমূল। তা সত্ত্বেও আমরা তৃণমূলের দখলে থাকা তিনটি পঞ্চায়েত এবং ১১টি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছি। এ ছাড়াও একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত সামান্য দু’টি-তিনটি আসনের জন্য হাতছাড়া হয়েছে। জেলার চিত্র অনুযায়ী মোটের উপর ফল ভাল হয়েছে। লোকসভা ভোটে যাতে আরও ফল ভাল করা যায় তার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, এ বারে দলের কোন্দলের জেরে দাসপুর ২ ব্লকে দল ভাল করতে পারবে না এই আশঙ্কা ছিলই। ফলে ভোটের আগে জেলা থেকে রাজ্য নেতৃত্ব একাধিকবার এলাকায় এসে কর্মী-নেতৃত্বদের নিয়ে কোন্দল মেটানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই চেষ্টাতেও ক্ষত পুরোপুরি মেরামত হয়নি। দলীয় সূত্রের খবর, দাসপুর বিধানসভার উপনির্বাচনেও ওই ব্লকের একাধিক নেতা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তখন থেকেই দলের কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। সেই সমস্যা ছাড়াও গত পাঁচ বছরে ১১টি পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতায় থাকলেও প্রতিশ্রুতি মতো কাজ না করা, আয়লার টাকা বিলিতে গড়িমসি, একাধিক দুর্নীতি, ঠিকাদারদের সঙ্গে গোপন আঁতাতের ফলে দলেরই একটি অংশ ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তৈরি হয়েছিল একাধিক গোষ্ঠী। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই সিপিএম বিধানসভা ভোটের উপ-নির্বাচনের সময় থেকেই ফের এলাকায় সংগঠন বাড়াতে শুরু করে। জনসংযোগ থেকে মিটিং-মিছিল, এমনকী ব্লকে অবস্থান বিক্ষোভ সবই করে। ফলে উপ-নির্বাচনে হারলেও ওই ব্লক থেকে সিপিএম ভাল সমর্থন পেয়েছিল। তাই দীর্ঘ দিন চুপচাপ বাসে থাকার পর এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে গোটা ব্লকেই সিপিএমের কর্মীরাও ভয় না পেয়ে প্রচার থেকে দলের হয়ে প্রকাশ্যেই কাজকর্ম শুরু করে। আর তাতেই জেলার মধ্যে শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত ব্লকটিতে সিপিএম তৃণমূলের দখলে থাকা রানিচক, খেপুত ও খুকুড়দহ অঞ্চলগুলি দখল করে। এবং আরও দু’টি অঞ্চলে সমান সমান ফল করে। তাই গোটা জেলায় দলের বিপযর্য় হলেও এই ব্লকে দলের মুখ রক্ষা করতে পেরে এক প্রকার খুশি এলাকার সিপিএম নেতৃত্ব। এই জয়কে অবশ্য বড় করে দেখতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের ব্লক সভাপতি তপন দত্তের কটাক্ষ, “মানুষ যা চেয়েছেন, তাই-ই হয়েছে। এতে অন্তত আমরা সন্ত্রাস করিনি, এটা প্রমাণ হল।” |
|
|
|
|
|