|
|
|
|
শান্তি ফেরানোই চাবিকাঠি, দাবি তৃণমূল নেতাদের |
সুনন্দ ঘোষ • নন্দীগ্রাম |
২৬ মাসে বোমা ০, গুলি ০। নন্দীগ্রাম নিয়ে এমনই দাবি তৃণমূলের শীর্ষ নেতার।
পানীয় জল-রাস্তাঘাট-আলো, ইন্দিরা আবাস বা ১০০ দিনের কাজ এই সব পরিষেবার পাশাপাশি, নন্দীগ্রামের জেলায় তৃণমূলের সাফল্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যানটিও যথেষ্ট জরুরি বলে মানছেন দলের
শীর্ষ নেতৃত্ব।
সত্যিই তো! ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে যে অশান্তি শুরু হয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরে দিনে-দুপুরেও গুলি-বোমার শব্দে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন নন্দীগ্রাম-খেজুরির মানুষ। ‘কী হয়, কী হয়’ আশঙ্কা নিয়েই দিন কাটত। সেই নন্দীগ্রামে ফিরেছে শান্তি। তৃণমূলের মধ্যে কোন্দল থাকলেও দু’দলের সমর্থকদের আর ‘রণং দেহি’ মূর্তিতে দেখা যায় না। গুলি-বন্দুক-বোমা নিয়ে আলোচনাই করতে চায় না নন্দীগ্রাম।
দলীয় প্রতীকের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নন্দীগ্রামের সামসাবাদে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে জিতেছেন বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীরা। বিক্ষুব্ধদের পক্ষে রয়েছেন আনসার মিঞা। আর দলের ঘোষিত প্রার্থীর পক্ষে মেহেদি হাসান। দলের নীতি, নেতাদের কার্যকলাপ নিয়ে দু’জনের মধ্যে বিস্তর মত-পার্থক্য। কিন্তু চা দোকানের সামনে দু’জনেই হাসি-গল্পে মশগুল। “এই শান্তির ছবিটাই সত্যি” বলছিলেন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। সিপিএমের জেলা নেতা নিরঞ্জন সিহি অবশ্য অভিযোগ করছেন, “জেলা জুড়ে সন্ত্রাস হয়েছে। বিরোধীদের উপর আক্রমণ হয়েছে।” শুভেন্দুর মতে, “বিচ্ছিন্ন বিরোধিতা থাকবেই। কিন্তু, নন্দীগ্রাম থেকে
সন্ত্রাস শব্দটাকেই মুছে ফেলা গিয়েছে। এমন তো নয়, যে বিরোধীদের ভোট দিতে দিইনি। নইলে এ বার সব মিলিয়ে কী করে ৮৮ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে?”
পূর্ব মেদিনীপুরে ২০০৮-এ পঞ্চায়েত সমিতির ২৫টি আসনের মধ্যে ২০টি পেয়েছিল তৃণমূল। এ বার ২৪টিই তাদের দখলে। গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন কিছুটা কমলেও বেড়েছে জেলা পরিষদের আসন। নিয়মিত উন্নয়নমূলক কাজ না হলে এই ফলাফল সম্ভব হত না। তবে সেই সঙ্গে শান্তির পরিবেশ বজায় রাখাটাও সাফল্যের অন্যতম কারণ বলে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি। দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত নীতি, গ্রামের মানুষের মন জয় করতে হবে উন্নয়নের কাজ দিয়ে। উন্নয়নের কাজে রাজনীতির রং দেখা চলবে না। শীর্ষ নেতৃত্বের এই মত পুরোপুরি মানতে নারাজ দলের একাংশ। যেমন, শেখ খুশনবি। তিনি সামসাবাদের নেতা। কার্যত, তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেই ভোটে জিতে গিয়েছেন নির্দলেরা। খুশনবির কথায়, “সিপিএমকে এলাকায় থাকতে দিয়েই এই অবস্থা হয়েছে। সর্বসমক্ষে নয়, তলায়
তলায় সিপিএম রাজনীতির খেলা খেলছে। খেপিয়ে তুলছে দলের একাংশকে।” শুভেন্দু অবশ্য বলছেন, “কয়েকজন নেতা ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছেন। কিন্তু, রাজনৈতিক ভাবে নন্দীগ্রাম-খেজুরি তথা গোটা জেলা থেকেই আমরা সিপিএমকে উৎখাত করতে পেরেছি। আমরা ক্ষমতায় এসে মানুষকে শান্তিতে বাস করার সুযোগ করে দিয়েছি। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”
সিপিএম অবশ্য এই শান্তির ‘তত্ত্ব’ মানছে না। নন্দীগ্রাম ১ ব্লকে সিপিএমের প্রতীক নিয়ে লড়েছেন মাত্র ১৭ জন। জিতেছেন একমাত্র শামসুন নাহার। তিনি আটপৌরে গৃহবধূ। তাঁর অভিযোগ, “মনোনয়ন পেশের পর থেকেই শুরু হয়েছিল হুমকি। রাতে মোটরবাইক বাহিনী হামলাও চালিয়েছে বাড়িতে।” জেলা সিপিএমের নেতা অশোক গুড়িয়ার কথায়, “স্বৈরতন্ত্র কায়েম হচ্ছে। নইলে আমাদের প্রার্থীরা প্রতীক নিয়ে
লড়তে ভয় পান! এই অবস্থায় ওদের (তৃণমূল) দলের মধ্যে থেকে বিরোধিতার আওয়াজ উঠেছে। ভাল লক্ষণ বলতে এটাই।” তবে কি এক সময়ের বিরোধীশূন্য কেশপুর-গড়বেতায় সিপিএম যে শান্তির কথা বলত, এখন তৃণমূলও তা-ই বলছে? মানছেন না শুভেন্দু। বলছেন, “যদি সন্ত্রাসই হত, তা হলে বিরোধীরা গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতে জিতলেন কী করে?” |
|
|
|
|
|