|
|
|
|
পূর্বের শুভেন্দু পশ্চিমেও সফল, মানছে সিপিএম |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
বিরোধীদের নিক্তিতেও নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর তো বটেই, পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরেও ভোট পরিচালনায় সফল তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী।
লালগড়ের জেলায় দলের ভরাডুবির পরে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ডহরেশ্বর সেন বলেছেন, “শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক কৌশলকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। জঙ্গলমহলের যুব সম্প্রদায়ের অধিকাংশ ভোট তাঁর কৌশলেই তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছে। বিনপুর, ঝাড়গ্রাম, নয়াগ্রাম এবং গোপীবল্লভপুরের দু’টি ব্লকে তৃণমূলের ভাল ফলের পিছনে শুভেন্দুর অবদান অস্বীকার করা যাবে না।” তবে নিজে কৃতিত্ব নিতে নারাজ যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি। তাঁর বক্তব্য, “মানুষ শান্তি আর উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সব কৃতিত্ব মুখ্যমন্ত্রীর।” |
|
পাশাপাশি জেলা হলেও দুই মেদিনীপুরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের অঙ্ক কিন্তু এক ছিল না। পূর্ব মেদিনীপুরে পঞ্চায়েতে ‘পরিবর্তন’ হয়েছিল ২০০৮-এ। ফলে, এখানে পরীক্ষা ছিল ‘শাসক’ তৃণমূলের। আর পশ্চিমে তৃণমূলের লক্ষ্য ছিল, আরও বেশি আসন দখল।
পঞ্চায়েত ভোটের ফল বেরনোর পরে দেখা গেল, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৬৭টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে ৬৪টি তৃণমূলের দখলে। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতেও তৃণমূলেরই দাপট। পূর্ব মেদিনীপুরেও সসম্মানে উত্তীর্ণ ‘শাসক’ তৃণমূল। জেলা পরিষদের ৬০টি আসনের মধ্যে ৫৪টিতে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। জেলার ২৫টা পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ২৪টিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ তৃণমূল। কমেছে শুধু তাদের দখলে থাকা পঞ্চায়েতের সংখ্যা। অথচ, এই জেলায়
তৃণমূলের বড় ভাবনা ছিল নির্দল-কাঁটা। নন্দীগ্রাম-সহ বহু জায়গাতেই প্রতীক না পেয়ে নির্দল হিসেবে লড়েছেন তৃণমূলের বিক্ষুব্ধরা। তবে তা তৃণমূলের সার্বিক সাফল্যে অন্তরায় হয়নি। সামান্য কিছু অংশে এবং মূলত পঞ্চায়েত স্তরেই তাঁদের আটকে রাখতে পেরেছেন নেতৃত্ব।
দলে কোন্দল ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরেও। গড়বেতা, কেশপুর থেকে শুরু করে বেলপাহাড়ি, জামবনি, কেশিয়াড়ি, নারায়ণগড়সর্বত্রই শুভেন্দু অধিকারী ও মুকুল রায়ের অনুগামীদের মধ্যে বিবাদ ছিল। সঙ্কট কাটাতে তৃণমূল নেতৃত্ব জোর দিয়েছিলেন একজোট হয়ে সংগঠন বাড়ানোয়। বুথ-স্তরে সংগঠন গড়া শুরু হয় বছর খানেক আগে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য ‘টাস্ক ফোর্স’ গড়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনী প্রচারের শেষ লগ্নে তৃণমূল নেত্রীর জনসভায় শুভেন্দু ও মুকুলের এক সঙ্গে উপস্থিতিও সর্বস্তরে ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেয়। জেলা সভাপতি দীনেন রায় প্রায় সব গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে সভা করেন। ভোটের ফলে এ সবেরই প্রভাব পড়েছে বলে মানছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে জনসংযোগের ধারাটা কিন্তু শুরু করেছিলেন শুভেন্দুই। ২০১১-র বিধানসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলে জনগণের কমিটির সঙ্গে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠতা’ নিয়ে বামেরা সরব ছিলেন। তৃণমূলের অন্দরের খবর, সেই ‘জনসংযোগ’ কাজে লাগিয়েই জনগণের কমিটির একটা বড় অংশকে ক্রমে তৃণমূলের দিকে টেনে আনেন শুভেন্দু। জোর দেন মাওবাদীদের জন-বিচ্ছিন্ন করায়। তৃণমূল-জমানায় মাওবাদী উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ এবং উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় গতি আসার পরে জঙ্গলমহলের সেই জমিতে পঞ্চায়েতে ঘাসফুল ফোটানো স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষে খুব কঠিন হয়নি।
কাজটা তো সহজ ছিল না?
সরাসরি জবাব না দিয়ে শুভেন্দু বলেছেন, “আমরা সাধারণ কর্মী।” |
|
|
|
|
|