মোহনবাগান দিবসে তিনি বিস্মৃতির অন্তরালে। ব্রাত্য তাঁর পরিবারও। এ বার নাম বিভ্রাটে নাজেহাল ময়দানের সেই ‘চাইনিজ ওয়াল’ গোষ্ঠ পাল। তবে এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি দায়ভার চাপানো যায় না মোহনবাগান কর্তাদের উপর।
ফুটবলে দেশের প্রথম পদ্মশ্রী তিনি। সঙ্গে মোহনবাগানরত্ন-ও। পরাধীন ভারতে সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে মোহনবাগান রক্ষণে তাঁর বিক্রমকে ভয় পেত বুট পরা ইংরেজ ফুটবলাররাও। সেই ইংরেজি বানানেই মোহনবাগান সমর্থকদের গর্ব গোষ্ঠ পাল এ জমানায় হয়ে গিয়েছেন ‘গোসটুয়া’। তা-ও আবার যে সে জায়গায় নয়। গোষ্ঠ থেকে গোসটুয়া হয়েছেন তাঁর যৌবনের উপবন আর বার্ধক্যের বারাণসী খোদ ময়দানেই। তাঁর নিজের নামাঙ্কিত রাস্তায় কলকাতা পুরসভার পথ নির্দেশক নামফলকে।
মোহনবাগান মাঠের পাশ দিয়ে সোজা বাবুঘাটের দিকে যে রাস্তা চলে গিয়েছে সেটাই গোষ্ঠ পাল সরণি। আগে যার নাম ছিল কিংসওয়ে। ইডেনের ক্লাবহাউসের সামনে যে রাস্তা ইস্টবেঙ্গল তাঁবুর দিকে চলে গিয়েছে ঠিক তার মোড়েই সেই ভুলে ভরা নামফলক। বাংলায় বানান ঠিক থাকলেও ইংরেজি বানান দেখলে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যেতে বাধ্য। ঠিক একই রকম ভুল রাস্তার শেষ প্রান্ত বাবুঘাটের দিকেও। |
ফলক-বিভ্রাট। ছবি: উৎপল সরকার |
“...বাবা ইংরেজিতে নিজের নাম
লিখতেন ‘GOSTHA’।
কী ভাবে
তা ‘GOSTUA’ হয় তা বোধগম্য নয়। বাবাকে
বোধহয় সবাই ভুলে যেতেই চায়। এক বছর ধরে
এই
ভুল শোধরানোর জন্য ক্রীড়ামন্ত্রীকে বলে যাচ্ছি।
চিঠিও দিয়েছি। যা ছিল তাই রয়ে গিয়েছে।”
—নিরাংশু পাল |
|
|
গো-বলয়ে জন্ম হয়নি তাঁর। ওপার বাংলার ফরিদপুরে জন্মানো গোষ্ঠকে বাড়ির কেউ কখনও গোসটুয়া বলে ডাকেনওনি। তা হলে পরপারে যাওয়ার পরে তিনি এই নতুন নাম পেলেন কী ভাবে? পুত্র নিরাংশু পাল বলছেন, “বাবা ইংরেজিতে নিজের নাম লিখতেন ‘GOSTHA’। কী ভাবে তা ‘GOSTUA’ হয় তা বোধগম্য নয়।” এখানেই থামছেন না নিরাংশুবাবু। “বাবাকে বোধহয় সবাই ভুলে যেতেই চায়। এক বছর ধরে এই ভুল শোধরানোর জন্য ক্রীড়ামন্ত্রীকে বলে যাচ্ছি। চিঠিও দিয়েছি। যা ছিল তাই রয়ে গিয়েছে। আবার দেখা হলে ফের অনুরোধ করব।”
আনন্দবাজারের কাছে পুরো ঘটনা শুনে ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র আবার বলছেন, “গোষ্ঠ পাল গোসটুয়া হয়ে গিয়েছেন! বড় ভুল। শহরের মহানাগরিককে এখনই বলছি শুধরে নেওয়ার জন্য। তবে আমি কিন্তু এ ব্যাপারে কোনও চিঠি বা অনুরোধ পাইনি। নিরাংশুবাবু হয়তো ভুল জায়গায় দরবার করেছেন।” পরাধীন ভারতে যে ক্লাবে খেলে গোষ্ঠ পাল ইংরেজদের কাছে ‘চিনের প্রাচীর’ নাম পেয়েছিলেন সেই মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্রও শুনে অবাক গলায় বললেন, “আমাদের ক্লাবের সামনের রাস্তায়? এক বছর ধরে রয়েছে? এখনই খোঁজ নিচ্ছি।”
কলকাতা পুরসভার যে দফতর এই নামফলক স্থাপন এবং লেখার কাজে নিয়োজিত, সেই দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরপিতা অতীন ঘোষ আবার মোহনবাগান ক্লাবেরই কার্যকরী সমিতির সদস্য। নিয়মিত যাতায়াত করেন সবুজ-মেরুন তাঁবুতে। আদ্যন্ত মোহনবাগান সমর্থক। তিনিও এক বছরেরও বেশি সময় গোষ্ঠ পালের গোসটুয়া হয়ে যাওয়ার বৃত্তান্ত শুনে অবাক। সব শুনে বললেন, “আমি তিন-চার মাস হল দায়িত্বে এসেছি। ওই রাস্তাটা পূর্ত দফতরের আওতায়। তবে কোনও অজুহাত নয়। দ্রুত ভুল শোধরানোর জন্য দফতরে খবর পাঠাচ্ছি।”
তা সত্ত্বেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, চব্বিশ ঘণ্টা আগের মোহনবাগান দিবসে গোষ্ঠ পালের পরিবারকে ভুলে থাকার মতোই বাগান সচিব কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরী কমিটি সদস্যের ক্লাবের সামনের রাস্তায় গোষ্ঠ পাল সরণিকে গোসটুয়া পাল সরণি হয়ে থাকতে না দেখাটা! তা-ও এক বছর ধরে! |