এত দিন কানাঘুষোয় শোনা যাচ্ছিল। এ বার দিল্লি পুলিশ সরকারি ভাবে সামনে নিয়ে এল নামটা। মঙ্গলবার দিল্লি পুলিশ যে চার্জশিট পেশ করেছে, তাতে অভিযুক্ত হিসাবে রয়েছে দাউদ ইব্রাহিমের নাম।
আইপিএল স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে দিল্লি পুলিশের দেওয়া ছ’হাজার পাতার চার্জশিটে যে ৩৯ জনের নাম রয়েছে, তাদের মধ্যে মাত্র আট জন বিচারবিভাগীয় হেফাজতে। বাকিরা হয় জামিনে মুক্ত, নয় নিখোঁজ। এই ৩৯ জনের মধ্যে দাউদ ছাড়াও রয়েছে তাঁর কাছের লোক ছোটা শাকিলের নাম। রয়েছে রাজস্থান রয়্যালসের তিন অভিযুক্ত ক্রিকেটার শান্তাকুমারন শ্রীসন্ত, অঙ্কিত চহ্বাণ ও অজিত চান্ডিলার নামও। এ ছাড়া বেশির ভাগই গড়াপেটায় নিয়মিত জড়িয়ে থাকা বুকি ও অন্ধকার দুনিয়ার ছোট-বড় ‘ভাই’-রা। দিল্লির অতিরিক্ত দায়রা বিচারক বিনয় কুমার খন্নার এজলাসে পেশ হওয়া এই চার্জশিটের শুনানি হবে আজ, বুধবার।
একই সঙ্গে চার্জশিটে বলা হয়েছে, গড়াপেটা রুখতে সে ভাবে কোনও পদক্ষেপই নেয় না ভারতীয় বোর্ড। এমনকী প্লেয়ারদের হোটেলে সে রকম নজরদারির ব্যবস্থা না থাকায় বুকিদের সেখানে অবাধ যাতায়াত থাকে।
ভারতীয় ক্রিকেটে গড়াপেটার নেপথ্যে যে অনেক বড় মাথা রয়েছে, সেই অভিযোগই শুধু এত দিন ধরে উঠে এসেছে। এ বার দিল্লি পুলিশ রীতিমতো চার্জশিট দিয়ে সেই অভিযোগ আইনের দরবারে তুলে ধরল। চার্জশিটে পুলিশের বক্তব্য, অশ্বিনী অগ্রবাল ওরফে টিঙ্কু মান্ডি নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে গড়াপেটা চক্র চালান দাউদ। টিঙ্কুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা তাঁর শাগরেদ জাভেদ চোটানির কাজ। কোনও বড় ‘ডিল’ হলে তা সামলাতেন ছোটা শাকিল এবং মাঝে মাঝে সলমন নামের এক ব্যক্তিকেও গড়াপেটা নিয়ে টিঙ্কুর সঙ্গে কথা বলতে শোনা গিয়েছে, দাবি পুলিশের। এই সলমন এখন পাকিস্তানে।
তদন্তের সময় ফোনে আড়ি পেতে যে কলগুলি রেকর্ড করা হয়েছে, সেগুলি সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছিল। সেখানকার রিপোর্টেই বলা হয়েছে রেকর্ড হওয়া ফোন কথোপকথনের মধ্যে দাউদের কন্ঠস্বরও পাওয়া গিয়েছে। ওটা যে দাউদেরই গলা ও নম্বর, সে সাক্ষীও জোগাড় হয়েছে। শ্রীসন্তদের ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র। কিন্তু শ্রীসন্তরা জেনেশুনেই সে পথে পা রেখেছেন বলে পুলিশের দাবি। ৩৯টি নামের মধ্যে দশ নম্বর নাম কেরলের কলঙ্কিত স্পিডস্টারের। সবার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী প্রতারণা ও চক্রান্তের অভিযোগ ছাড়াও আনা হয়েছে মহারাষ্ট্র কন্ট্রোল অফ অর্গানাইজড ক্রাইম বা মকোকা আইন ভঙ্গের অভিযোগও।
মোট ২৯৫ পাতার নথি ও ১৬৮ জনের বক্তব্য শুনে তৈরি এই চার্জশিটে রাজস্থান রয়্যালসের প্রাক্তন ক্রিকেটার বাবুরাও যাদব, রমেশ ব্যাস, দীপক কুমার, সুনীল ভাটিয়া, ফিরোজ ফরিদ আনসারি, মনোজ গুড্ডেওয়ার, অমিত কুমার, জিজু জনার্দন, চন্দ্রেশ পটেলদের নাম রয়েছে। এঁদের অনেকের সঙ্গেই দাউদ ইব্রাহিম ও ছোটা শকিলের যোগাযোগ রয়েছে বলে পুলিশের অভিযোগ।
এ দিকে মঙ্গলবার দিল্লি পুলিশ আলাদা ভাবে আদালতের কাছে অভিযুক্ত দুই ক্রিকেটার শ্রীসন্ত, অঙ্কিত চহ্বাণ এবং এই মামলায় জড়িত ১৯ জনের জামিন খারিজ করার আবেদন করেছে। এই আবেদন মঞ্জুর হলে শ্রীসন্তকে ফের শ্রীঘরে প্রবেশ করতে হতে পারে।
|