প্রশ্ন: একটা জনস্বার্থ মামলা যে আপনাকে এ ভাবে বিখ্যাত করে দেবে আন্দাজ করতে পেরেছিলেন?
আদিত্য: দেখুন, কতটা বিখ্যাত হব সেটা ভেবে মামলাটা করিনি। আমার মনে হচ্ছিল, ভারতীয় ক্রিকেটে যা ঘটছে সেটা অন্যায়। শ্রীনিবাসন নামক লোকটা ভারতীয় ক্রিকেটকে ছারখার করে দিচ্ছে। তাই মামলাটা করেছিলাম।
প্র: কিন্তু মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত তো কেউ আদিত্যপ্রতাপ বর্মা নামের কাউকে সে ভাবে চিনতই না। সে যে একটা মামলাও করেছিল শ্রীনিবাসন নিযুক্ত তদন্ত কমিশনের বিরুদ্ধে সেটাও তো লোকে ভুলে গিয়েছিল।
আদিত্য: একটা দিক থেকে কথাটা ঠিক। মঙ্গলবার সকাল থেকে যে ভাবে ফোনের পর ফোন পাচ্ছি, সেগুলো এত দিন পাইনি। গত কালও টিভিতে দেখছিলাম যে শ্রীনিবাসন ফিরছেন। কেউ নাকি আর আটকাতে পারবে না।
প্র: দেখে মনে হয়নি আমি হেরে গেলাম?
আদিত্য: না। মনে হয়নি। আমার বিশ্বাস ছিল নিজের উপর। জানতাম এক দিন না এক দিন ঠিকই আমি জিতব। আজ না হলে কাল। কাল না হলে পরশু। একটা ব্যাপার বিশ্বাস করে এসেছি। আমি কোনও অন্যায় করছি না। বরং যা করেছি সেটা একটা ঘোরতর অন্যায়কে আটকাতে। বিশ্বাস করেছি, আমাকে কেউ কিনতে পারবে না। সারা জীবন সত্যের রাস্তায় হেঁটেছি। আজও হাঁটছি। কোনও প্রলোভন দেখিয়ে কেউ আমাকে কিনতে পারবে না।
প্র: কিন্তু কেউ আওয়াজ তুলল না তদন্ত কমিশনের বিরুদ্ধে। জেনেশুনেও যে গুরুনাথ মইয়াপ্পনকে নিয়ে কমিশনের রায় একতরফা হতে চলেছে। শুধু আপনি তুললেন কেন?
আদিত্য: কেন মানে? কাউকে না কাউকে তো আওয়াজটা তুলতে হত। আমি তুললাম।
প্র: তবু এত কিছুর পরেও শ্রীনিবাসন আগামী ২ অগস্টের বোর্ড বৈঠকে আসতে চাইছেন। বলে দিচ্ছেন, কেউ আটকাতে পারবে না।
আদিত্য: এটা বলেছে? কিন্তু সেটা করলে তো আদালত-বিরোধী ব্যাপার হয়ে যাবে। যা-ই হোক সেটা বোর্ডের ব্যাপার। মিস্টার জগমোহন ডালমিয়ার ব্যাপার। শ্রীনি কেমন লোক, সেটা এর থেকেই বোঝা যায়।
প্র: কী বোঝা যায়? শ্রীনি কেমন লোক?
আদিত্য: লাজ-লজ্জাহীন! ন্যূনতম সম্মান থাকলে এই কথাটা কেউ বলতে পারত না। ও আসলে এ সব করে নিজেই নিজেকে ছোট করছে। একবার ও নয়াদিল্লি যাক। গিয়ে দেখুক। মিডিয়া ওকে ছিঁড়ে ফেলবে। ওর ওই বেইজ্জতিটাই দরকার।
আমার নাম করে শ্রীনিকে একটা ফোন করুন না। জিজ্ঞেস করুন, ও সাড়ে সাত বছর ধরে বোর্ডে এতগুলো পদ কেন আঁকড়ে বসেছিল? কার টাকায় ও চার্টার্ড ফ্লাইট নিয়ে ঘুরত? ফিক্সিং করতে? নিজের জামাইকে ম্যাচ গড়াপেটায় সাহায্য করতে?
প্র: আপনার শ্রীনি-বিরোধী মনোভাব নিয়ে লোকে কিন্তু অন্য কথা বলছে। বলছে আপনি পওয়ার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। কীর্তি আজাদেরও পরোক্ষ প্রভাব আপনার সিদ্ধান্তের উপর থাকতে পারে।
আদিত্য: একদম বাজে কথা। কেউ আমাকে প্রভাবিত করেনি। বরং আমাকেই কিনে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল!
প্র: মানে?
আদিত্য: মানে আমি যখন মামলাটা মুম্বই হাইকোর্টে তুলি তখন দক্ষিণ ভারতীয় কেউ একজন আমাকে এসে বলেছিল, এ সব আদালতে গিয়ে কী হবে? চলো বাইরে কোথাও বসে মিটিয়ে নিই। ও শ্রীনি-র লোক ছাড়া আর কে হবে?
প্র: আপনাকে কত টাকার অফার দেওয়া হয়েছিল?
আদিত্য: টাকার অঙ্ক নিয়ে কিছু বলেনি। বলছিল, এ রকম কত জনস্বার্থ মামলা আদালতের বাইরে রফা হয়ে গিয়েছে! চলো আমরাও কোথাও গিয়ে বসি। কথা বলি।
প্র: আপনি কী বললেন?
আদিত্য: একটাই কথা বলেছিলাম। তুমি আমাকে কীসের প্রলোভন দেখাচ্ছ? কী কথা বলব তোমার সঙ্গে? যে তোমাকে পাঠিয়েছে, সে-ই তো দুর্নীতি করে করে ক্রিকেটটাকে শেষ করছে। তোমার সঙ্গে কী কথা বলার থাকতে পারে আমার?
|
জোড়া ফাঁসে ভারতীয় বোর্ড
দিল্লি পুলিশের বাউন্সার
(ছ’হাজার পাতার চার্জশিট পেশ) |
এফআইআর নম্বর ২০/২০১৩
• দাউদ ইব্রাহিম ও ছোটা শাকিল ভারতে ক্রিকেট বেটিং ও গড়াপেটা চক্রের মূল পান্ডা।
• দাউদ ও ভারতীয় বুকিদের মধ্যে যোগাযোগ রাখে অশ্বিনী অগ্রবাল ওরফে টিঙ্কু মান্ডি।
• টিঙ্কু মান্ডির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত জাভেদ চোটানি, দাউদের অন্যতম শাগরেদ। এদের মধ্যে ফোনে কথোপকথনের টেপ রয়েছে দিল্লি পুলিশের হেফাজতে।
• চার্জশিটে অভিযুক্ত ৩৯ জনের মধ্যে ২১জন জামিনে মুক্ত। আট জন বিচারবিভাগীয় হেফাজতে ও ১০ জন নিখোঁজ।
• শ্রীসন্ত ও দুই কলঙ্কিত ক্রিকেটার অজিত চান্ডিলা ও অঙ্কিত চহ্বাণও অভিযুক্তদের তালিকায়। শ্রীসন্তের নাম দশ নম্বরে। ক্রিকেটারদের জামিন নাকচের আবেদন।
• ভারতীয় দণ্ডবিধি ও মকোকায় অভিযুক্ত সবাই।
• ক্রিকেটে গড়াপেটা রুখতে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি ভারতীয় বোর্ড।
• টিম হোটেলে জোরদার নিরাপত্তা না থাকার জন্যই বুকিরা অবাধে ক্রিকেটারদের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারেন। |
বিহার ক্রিকেট সংস্থার বিমার
(বম্বে হাইকোর্টের কাছে আবেদনে) |
|
আদিত্য প্রতাপ বর্মা |
• দুই সদস্যের কমিশন গঠনে বোর্ডের নির্দেশকে বাতিল করা হোক।
• তদন্ত কমিশন গঠন করুক আদালত।
• শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে বোর্ডকে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হোক। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বোর্ডের এবং তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে থাকুন শ্রীনি।
• প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন লড়ার জন্য শ্রীনিবাসনকে যেন অনুমতি না দেয় বোর্ড। আইসিসি-তেও যেন প্রতিনিধিত্ব করতে না পারেন।
• ইন্ডিয়া সিমেন্টস এবং বোর্ড-আইপিএলের মধ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তিতে স্থগিতাদেশ জারি করা হোক। একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক জয়পুর আইপিএল ক্রিকেটের সঙ্গে বোর্ড-আইপিএলের চুক্তি নিয়েও। |
|
|