সম্পাদকীয় ২...
মরিয়া হানাদারি
গুয়াহাটি শহরের পল্টনবাজার এলাকায় জঙ্গি সংগঠন আল্ফা আবার একটি বিস্ফোরণ ঘটাইয়াছে, যাহাতে বেশ কিছু মানুষ আহত হইয়াছেন। অনুমান করিবার কারণ আছে, এই অঘটনের নায়ক আল্ফার পরেশ বড়ুয়া গোষ্ঠী। কেননা সরকারের সহিত কোনও রূপ শান্তি-আলোচনার বিরোধী এই ক্ষুদ্র গোষ্ঠীটিই তাহার মায়ানমারের আত্মগোপনের ঘাঁটি হইতে সমর্থকদের অসমের ভিতর নাশকতা চালাইবার নির্দেশ দেয়। অন্য গোষ্ঠীটি অরবিন্দ রাজখোয়ার নেতৃত্বে সরকারের সহিত আপস-আলোচনার প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়াছে। তাহারা হিংসা ও অন্তর্ঘাতের পথ বর্জনও করিয়াছে। সাধারণ ভাবে আল্ফা নেতৃত্ব বুঝিয়া গিয়াছেন, অসমের জনসাধারণ তাঁহাদের সঙ্গে নাই। তাঁহারা শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই উন্নয়ন ও প্রগতির পথে অগ্রসর হইতে উৎসুক। কিন্তু পরেশ বড়ুয়ার মতো জঙ্গিদের মতে সমর্থকদের মনোবল চাঙা করিতে মাঝেমধ্যে ইতস্তত চমকপ্রদ ‘অ্যাকশন’ করাও জরুরি। তাই পল্টনবাজারে এই বিস্ফোরণ।
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও প্রকারান্তরে ইহাই বলিয়াছেন। তিনি এই ধরনের অ্যাকশনের মধ্যে বড়ুয়া গোষ্ঠীর হতাশা ও মরিয়া মনোভাবেরই পরিচয় পাইয়াছেন, যাহা আদতে একটি পরাজয়বাদী মনোভাব। পরেশ বড়ুয়ার সব সহযোদ্ধাই তাঁহার সঙ্গ ত্যাগ করিয়াছেন। বাংলাদেশের জেলে আটক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়াও রাজখোয়াদের শান্তি-আলোচনায় শামিল হওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করিয়াছেন। স্বল্প কালের মধ্যেই তাঁহাকে ভারতের হস্তে প্রত্যর্পণ করিবে বাংলাদেশ, সেই মর্মে দুই দেশের চুক্তিও পাকা। কোণঠাসা, হতাশ এবং মরিয়া পরেশ বড়ুয়াদের তাই থাকিয়া থাকিয়াই এই ধরনের নাশকতায় লিপ্ত হইতে হইবে। তাঁহার সার্বভৌম অসমের স্বপ্ন এখন দিবাস্বপ্নের নামান্তর। অসমবাসীরাই তাঁহার এই স্বপ্নকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছে। তাঁহার পূর্বতন সহযোদ্ধারাও উপলব্ধি করিয়াছেন, অসমের উন্নয়ন, অসমবাসীদের জীবনযাত্রা সহজতর করার জন্য জনপ্রতিনিধির শাসন প্রতিষ্ঠাই শ্রেষ্ঠ বাজি। পাশাপাশি কেন্দ্রের সহিত দরকষাকষি করিয়া উন্নয়নের তহবিল পুষ্টতর করার চেষ্টাও জরুরি। তাই রাজখোয়ারা পরিষদীয় নিয়মতন্ত্রের পথে হাঁটিতেছেন। জঙ্গি সন্ত্রাসের প্রতি জনজাতীয় শিক্ষিত যুব সমাজের আকর্ষণ তবু থাকিয়াই যাইবে। তাহার কারণ জনজাতির প্রতি, প্রত্যন্ত অন্ত্যেবাসীদের প্রতি কেন্দ্রের, মূল ভূখণ্ডের প্রধান রাজনৈতিক স্রোতোধারার ধারাবাহিক উপেক্ষা, অবহেলা, প্রতারণা ও নিপীড়ন-জনিত ক্ষোভ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য জনজাতীয় আত্মশাসনের আন্দোলনগুলির মতো অসমেও তাই কোনও-না-কোনও রূপে সন্ত্রাসবাদী হঠকারিতা মাঝেমধ্যেই মাথা-চাড়া দিবে। জনসাধারণের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধানের দায় যদি রাজ্যের নির্বাচিত সরকার পালন করিতে আগ্রহী হন, তবে আরও নিশ্ছিদ্র করিতে হইবে নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনি। পল্টনবাজারের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় কেন সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো ছিল না, সেই রহস্যের উত্তর অসম পুলিশকে দিতে হইবে। মরিয়া ও পরাজয়বাদী বলিয়াই কিন্তু পরেশ বড়ুয়ার অনুগামীরা বেশি-বেশি করিয়া জঙ্গি হামলার পথে যাইবে। এই অবস্থায় পুলিশ প্রশাসনের অপ্রস্তুত থাকার কোনও মার্জনা নাই। প্রতিবাদীরা মরিয়া বলিয়া সন্ত্রাস ঘটাইতেছে ইহা সত্য হইলেও প্রশাসনিক ব্যর্থতার যুক্তি হইতে পারে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.