সম্পাদকীয় ১...
যস্মিন্ দেশে
রা গাঙে যদি বান আনিতেই হয়, তবে তেমন গাঙই বাছিয়া লওয়া উচিত, যেখানে আগে বান আসিবার যোগ্য খাত আছে। প্রেসিডেন্সি কলেজকে স্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় ও উৎকর্ষ-কেন্দ্র হিসাবে গড়িয়া তুলিবার সিদ্ধান্তের পিছনে এই যুক্তির নিশ্চয়ই বড় ভূমিকা ছিল। ঐতিহ্য ও উৎকর্ষ: দুই দিক হইতে ইহার তুল্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলায় সর্বকালেই বিরল। তদুপরি, এই প্রতিষ্ঠানের বহু কৃতী ছাত্রছাত্রী বিশ্বময় সারস্বত ক্ষেত্রে ছড়াইয়া রহিয়াছেন, যাঁহারা আজও তাঁহাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু করিতে চাহেন। তাই, বাম আমলের রাজনৈতিক কুক্ষি হইতে নিজেকে ছাড়াইয়া প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় যখন শ্রেষ্ঠত্বের অভিমুখে যাত্রার ঘোষণা করিল, তাহার সাফল্য কল্পনা করিতে কষ্ট হয় নাই। অতঃপর সেই আশা-শকট বারংবার হোঁচট খাইয়াছে, পুরাতন সমস্যা দূর না হইতেই নূতন সমস্যার ঝুলি দরজায় উঁকি মারিয়াছে। কিন্তু এই সকলই ছাপাইয়া গেল উপাচার্য নিয়োগ লইয়া সাম্প্রতিক কুনাট্য। বলা যায়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রাপথে প্রথম সত্যকারের পশ্চাদপসরণ ইহাই। বর্তমান রাজ্য সরকার কার্যত বুঝাইয়া দিল, মেন্টর গ্রুপ ইত্যাদি সকলই ফাঁকি, সত্য কেবল রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ। নতুবা, উপাচার্যের ৬৫ বৎসরে অবসর লইবার বিষয়টি এমন বিপুল গুরুত্ব ধারণ করিত না। কিংবা উপাচার্য বা মেন্টর গ্রুপকে না জানাইয়াই নূতন উপাচার্য খুঁজিতে সার্চ কমিটি তৈরি হইত না। কিংবা, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব মেন্টর গ্রুপ থাকিতেও তাহার পরামর্শের তোয়াক্কা না করিয়া রাজ্য সরকারই সার্চ কমিটি সাব্যস্ত করিয়া দিত না।
কিংবা যাঁহাদের লইয়া এই সার্চ কমিটির উদ্ভাবন, তাঁহাদের ডাকাও হইত না। তর্কের খাতিরে যদি ধরিয়া লওয়া যায় এখনই নূতন উপাচার্যের খোঁজ জরুরি, সে ক্ষেত্রেও কি ইহার অপেক্ষা যোগ্যতর কমিটি তৈরি করা যাইত না? কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কথা স্বতন্ত্র, কিন্তু বাকিদের এ ক্ষেত্রে যোগ্যতা বা অধিকার কতটা, সেই প্রশ্ন উঠিতেই পারে। তাঁহারা কোনও প্রতিষ্ঠানে পড়াইতে পারেন, কোনও বিষয়ে তাঁহাদের ব্যুৎপত্তি থাকিতে পারে কিন্তু বিষয়-ব্যুৎপত্তিই হউক, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিই হউক, আর সার্বিক মর্যাদাই হউক, সকল দিক হইতেই তাঁহাদের অপেক্ষা যোগ্যতর ব্যক্তি এই শহরেই অনেক। আর এই শহর হইতেই নির্বাচক নিয়োগ করিতে হইবে, এমন কথাও নাই। কলিকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে পরামর্শ যে কোনও শহর বা দেশ হইতে দেওয়া সম্ভব। আর, বাংলার কপালগুণে, বিদ্যাচর্চার নানা অঙ্গনে, এমনকী মৌল বিজ্ঞানেও, অত্যন্ত কৃতী ও প্রশ্নহীন মর্যাদাময় বাঙালির আজও অভাব নাই। তেমন কাহারও পরিবর্তে রাজ্য সরকারের একান্ত আপন দুই ‘বিদ্বজ্জন’ কমিটি-প্রধানকে এই গুরুদায়িত্ব তড়িঘড়ি সঁপিয়া দিবার মধ্যে যে স্পষ্ট রাজনৈতিক প্রণোদনা, তাহা অতি দুর্ভাগ্যজনক। দগ্ধললাট পশ্চিমবঙ্গ। পুরাতন জমানাতেও ঠিক এই রাজনীতির জাঁতাকলেই পিষিয়া মারা হইয়াছিল তাহার অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠানটির শ্বাসবায়ু। আজ পরিবর্তনের চাকা ঘুরিয়া আবারও সেই জাঁতাকলের পেষণেই নিমজ্জিত হইতেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়, বিপরীত পক্ষের তদারকিতে। এই সবে নূতন পাঠ্যক্রম, নূতন অধ্যাপক ও নূতন উদ্দীপনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক চেহারাটি স্পষ্ট হইতেছিল, মেন্টর গ্রুপ ও নবনিয়োজিত শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রয়াস চোখে দেখিবার সুযোগ আসিতেছিল। চারা পুঁতিলেও জলসেচনের সময়টি দিতে হয়। এ রাজ্যে কি সেই সময়টুকুও মিলে না? প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় নামক স্বপ্নটির বিনাশের অর্থ তো কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের অকালমৃত্যু নহে, এই রাজ্যের নূতন বিদ্যোৎকর্ষের আশাতেও তাহা শেষ পেরেক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.