তেলেঙ্গানার ফায়দা উঠবে কি, প্রশ্ন দলে
অন্য ছোট রাজ্যের কথা ভাবছে না কংগ্রেস
প্রায় ছয় দশকের দাবি মেনে অবশেষে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের সিদ্ধান্ত নিলেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। তাদের এই সিদ্ধান্তের হাত ধরেই দেশ জুড়ে নতুন গতি পেল ছোট রাজ্য গঠনের অন্যান্য আন্দোলনও। কংগ্রেস তথা ইউপিএ-র অন্দরেও তাদের নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। তবে এখনই বাকিদের নিয়ে বিশেষ ভাবতে চায় না কংগ্রেস। দলের এখন একটাই ভাবনা, এই সিদ্ধান্তের ফায়দা কি তোলা যাবে?
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে তেলেঙ্গানা গঠনের সিদ্ধান্তের পরেই পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে শনিবার থেকে পাহাড়ে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বনধের ডাক দিয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। যা নিয়ে অশান্তির আশঙ্কায় কেন্দ্রকে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএমের প্রকাশ কারাটের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ বা অন্য কোথাও আর যাতে রাজ্যভাগ না হয়, সেই দায়িত্ব এ বার কেন্দ্রকেই নিতে হবে।
প্রশ্ন উঠছে, এ বার কেন্দ্র কী করবে? ইউপিএ-শরিক ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা তথা জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার আশঙ্কা, তেলেঙ্গানার সিদ্ধান্ত অন্য আন্দোলনগুলিতে ঘৃতাহুতি দেবে। বস্তুত তা দিয়েওছে। তেলেঙ্গানা নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত জানার পরেই বিদর্ভ, বুন্দেলখণ্ড, হরিৎপ্রদেশ, বড়োল্যান্ডের মতো একাধিক ছোট রাজ্যের দাবি ফের মাথাচাড়া দিয়েছে। কংগ্রেস তথা ইউপিএ-র অন্দরমহলেও ছোট রাজ্যের দাবি উঠেছে। মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতা বিলাসরাও মুত্তেমওয়ার সনিয়া গাঁধীকে চিঠি লিখে পৃথক বিদর্ভ রাজ্য গঠনের দাবি তুলেছেন। রাষ্ট্রীয় লোক দল-প্রধান তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজিত সিংহ আবার হরিৎপ্রদেশের জন্য চাপ বাড়াতে চাইছেন। রাহুল গাঁধী নিজে যে বুন্দেলখণ্ডের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন, তার পরিণতি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
তেলেঙ্গানার দাবি মানলে যে এই অবস্থায় পড়তে হবে, তা কংগ্রেস নেতৃত্বেরও অজানা ছিল না। কিন্তু কোনও একটা সিদ্ধান্ত তাঁদের নিতেই হত। না হলে তেলেঙ্গানা-পন্থী এবং বিরোধী, দুই শিবিরের রোষের মুখেই পড়তে হত। বিজেপি বলতে শুরু করেছিল, কংগ্রেস না পারলে তারা ক্ষমতায় এসে পৃথক রাজ্য গঠন করবে। কিন্তু উল্টো দিকটাও দেখতে হচ্ছিল কংগ্রেসকে। প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী রাজশেখর রেড্ডির পুত্র জগন্মোহন তো বটেই, রাজ্যের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী কিরণ কুমার রেড্ডিও তেলেঙ্গানার ঘোর বিরোধী। তার মধ্যেই একটা হাতছানি ছিল কংগ্রেসের সামনে। তা হল, তেলেঙ্গানায় সায় দিলে চন্দ্রশেখর রাওয়ের টিআরএস মিশে যেতে পারে কংগ্রেসের সঙ্গে। যা আখেরে দক্ষিণের এই রাজ্যে প্রচুর ‘ডিভিডেন্ট’ দেবে দলকে।
এই অবস্থায় আজ বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ইউপিএ-র সমন্বয় কমিটির বৈঠক বসে। এর পর দশ জনপথে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক শেষে অন্ধ্রের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি-নেতা দিগ্বিজয় সিংহ জানান, “ইউপিএ-র সমন্বয় কমিটি ও কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে সর্বসম্মতি ক্রমে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
কিন্তু পৃথক রাজ্যের দাবিতে অন্যান্য আন্দোলনের কী হবে? দিগ্বিজয়ের যুক্তি, “তেলেঙ্গানার দাবির সঙ্গে অন্যগুলির তুলনা করা যায় না। প্রথম রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের রিপোর্টেও তেলেঙ্গানার উল্লেখ ছিল।” গত সপ্তাহেই দিল্লিতে এসে গোর্খা নেতারা কেন্দ্রীয় সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের কাছে দাবি তুলেছিলেন, গোর্খাল্যান্ড নিয়েও আলোচনা হোক। দিগ্বিজয় জানিয়েছেন, আজ কেবল তেলেঙ্গানা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে ছোট রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনকারীদের শান্ত রাখতে দ্বিতীয় রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠনের সম্ভাবনাও খোলা রেখেছেন তিনি।
তেলেঙ্গানা গঠনের সিদ্ধান্ত কংগ্রেসকে আদৌ কোনও ফল দেবে কি না, তা সময়ই বলবে। কিন্তু কংগ্রেসের আজকের সিদ্ধান্ত অন্তত বিজেপির হাওয়া কেড়ে নিতে পেরেছে। নরেন্দ্র মোদী আগামী সপ্তাহে হায়দরাবাদে যাচ্ছেন। বিজেপির পরিকল্পনা ছিল, সেই সফরে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তেলেঙ্গানা না হওয়ার ক্ষোভকে কাজে লাগানো। বিজেপি এখন বলছে, ২৯৪ সদস্যের বিধানসভায় তেলেঙ্গানার ১১৭ জন। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠই তেলেঙ্গানার বিরুদ্ধে। বিজেপি মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, “কংগ্রেস ঘোষণা করল। কিন্তু রাজ্যের বিধানসভার উপরে ছেড়ে দিল। যার সংখ্যাগরিষ্ঠই তেলেঙ্গানার পক্ষে নয়। তা হলে কী করে পৃথক রাজ্য গঠন হবে?” দিগ্বিজয়ের জবাব, বিধানসভা কী মত দিচ্ছে, তা মানাটা কেন্দ্রের কাছে বাধ্যতামূলক নয়।
আজ ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্তের পরে দলের তরফে কেন্দ্রকে অনুরোধ করা হবে। কেন্দ্র রাজ্যকে এ বিষয়ে প্রস্তাব গ্রহণের অনুরোধ করবে। সেই প্রস্তাব কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আসার পর একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন হবে। তারা রাজ্য ভাগের খুঁটিনাটি বিষয় চূড়ান্ত করার পর আইন মন্ত্রক বিল তৈরি করবে। সেই বিল ফের রাজ্যের কাছে পাঠানো হবে। রাজ্যের মত আসার পরে রদবদল করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এর পর বিল যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে। রাষ্ট্রপতি তা সংসদে পাঠাবেন। সংসদে পাশ হওয়ার পর তা রাষ্ট্রপতির সম্মতি ও বিজ্ঞপ্তি জারির জন্য পাঠানো হবে।

তেলেঙ্গানা কাহিনি
১৯৪৮ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হল হায়দরাবাদ প্রদেশ। তারই অংশ তেলেঙ্গানা।
১৯৫৩ তৈরি হল অন্ধ্রপ্রদেশ।
১৯৫৬ হায়দরাবাদ অন্ধ্রের রাজধানী।
১৯৯৯ তেলেঙ্গানার দাবি তুলল কংগ্রেসই।
২০০১ পৃথক রাজ্যের দাবিতে টিআরএস গঠন কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের।
২০০৪ কেন্দ্র ও রাজ্যে কংগ্রেসের জোটশরিক টিআরএস।
২০০৬ তেলেঙ্গানা হয়নি। জোট ছাড়ল টিআরএস।
২০০৯ তেলেঙ্গানা স্থগিত রাখার ঘোষণা কেন্দ্রের। বিক্ষোভ শুরু।
২০১০ শ্রীকৃষ্ণ কমিটি গঠন। রিপোর্ট জমা দিল কমিটি।
২০১১-১২ তেলেঙ্গানায় আন্দোলন তীব্র। ইস্তফা বিধায়কদের।
২০১৩ তেলেঙ্গানার দাবি মানল কেন্দ্র।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.