খালে পড়ে থাকা উল্টোডাঙা উড়ালপুলের ভাঙা ডেক সরিয়ে নেওয়া হয়েছে মাসখানেকের বেশি আগে। কিন্তু এখনও হাত পড়েনি উড়ালপুল সারানোর কাজে। উল্টে উড়ালপুলের ওই ভাঙা অংশের দিকে ওঠার মুখে রাস্তায় এখন বড় বড় ঘাস ও আগাছা। অনেকটা অংশ জুড়ে জমে রয়েছে জল। সেতুর রাস্তা ধরে যে কেউ হেঁটে ভাঙা অংশের বিপজ্জনক জায়গাতেও চলে যেতে পারে। নিরাপত্তার বালাই নেই।
উল্টোডাঙা উড়ালপুলে ভিআইপি রোড থেকে বাইপাসের দিকে যাওয়ার ভাঙা অংশের দিকের হাল এখন এ রকমই। প্রশ্ন উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা উড়ালপুলের ওই অংশের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নিয়ে।
বর্ষায় সাধারণত রাস্তায় বেশি জল জমলে দিন কয়েক পরে নিকাশি নালার মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ভিআইপি রোডের দিক থেকে উড়ালপুলে ওঠার রাস্তায় জল জমে রয়েছে দিনের পর দিন। এমনকী দীর্ঘদিন ধরে জল জমে থাকায় আশপাশে জমে গিয়েছে কাদা ও বালি। ভরে গিয়েছে আগাছা ও বড় বড় ঘাসে। ভাঙা সেতু দিয়ে কিছুটা উঠে দেখা গেল, সেতুর কংক্রিটের দেওয়ালের ফাঁক দিয়ে বেরিয়েছে আগাছার শেকড়, এমনকী বট-অশ্বত্থের তরতাজা চারাও। আগাছা গজিয়ে কার্যত বুজে গিয়েছে নিকাশি নালার মুখগুলো। সেতুর লোহার গোলাকার রেলিং-এর কিছুটা অংশ কেটে নিয়ে গিয়েছে কে বা কারা। ওই দিকের রাস্তায় কোনও আলো না জ্বলায় সন্দেহজনক ব্যক্তিদের আনাগোনা হয় বলেও অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। |
উড়ালপুলে ওঠার পথে এ ভাবেই জমে রয়েছে জল। ছবি: শৌভিক দে |
ভিআইপি রোডের দিক দিয়ে সেতুর ওই ভাঙা অংশে ওঠার রাস্তায় কয়েকটি বড় বড় সিমেন্টের চাঙড় রাখা। একটি লোহার রেলিংও দেওয়া রয়েছে। বিধাননগর কমিশনারেটের বসানো সাইনবোর্ডে লেখা ‘রাস্তা বন্ধ’। কিন্তু অভিযোগ, ওই সাইনবোর্ড টাঙিয়েই দায় সেরেছে কমিশনারেটের পুলিশ। রেলিং-এর পাশ দিয়ে যে কেউ হেঁটে উড়ালপুলে উঠে যেতে পারেন।
স্থানীয় গোলাঘাটা এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাতায়াত না করায় পরিত্যক্ত হয়ে রয়েছে পুরো ভাঙা অংশের রাস্তা। সেখানে পুলিশের টহলও দেখতে পাওয়া যায় না। অভিযোগ, উড়ালপুলের ওই নির্জন রাস্তায় কোনও পথচারীকে যদি কোনও দুষ্কৃতী টেনেও নিয়ে যায়, তা হলে তাঁর চিৎকারও কেউ শুনতে পাবে না।
বিধাননগর কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তার অবশ্য দাবি, ভিআইপি রোডে টহল দেওয়ার সময়ে সেতুর ওঠা ও নামার দিকটা ভাল করে নজর রাখা হয়। বিশেষত রাতের দিকে নজরদারি থাকে বেশি।
প্রশ্ন উঠেছে, পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এই ভাঙা অংশটির রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেতুটি কি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না? বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশি দিন জল জমে থাকা সেতুর কংক্রিট ও রাস্তার পক্ষে ক্ষতিকর।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক তথা সেতু বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “জল জমে থাকলে সেতুর পিচের বিটুমিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তা ছাড়া, দেখতে হবে সেতুতে জমে থাকা জল কী ভাবে নামছে। সেতু দিয়ে জল যে ভাবে নামা উচিত, সে ভাবে না নেমে যদি অন্য পদ্ধতিতে জল নামে, তা সেতুর পক্ষে ক্ষতিকারক।”
ভাঙা সেতুর কাজ কবে থেকে শুরু হবে? এ ব্যাপারে কেএমডিএ-র চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার অরূপ সাহা বলেন, “টেন্ডার প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে কারা কাজ করবে সবই ঠিক হয়ে গিয়েছে। কিছু নিয়মরক্ষার কাজ বাকি আছে। সেগুলো শেষ হয়ে গেলেই সেতু সারাইয়ের কাজ শুরু হবে।” অরূপবাবু আরও বলেন, “সেতুর ভাঙা অংশের রাস্তা এবং কংক্রিট কী অবস্থায় আছে দেখে তার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |