মহানগরের জল-নিকাশি ব্যবস্থার ‘মাস্টার প্ল্যান’ এক সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
২০০৭ সালের জুলাই মাসে ভারী বৃষ্টির পরে তিন দিন জলমগ্ন ছিল মহানগরী। তার পরেই শহরের জল-নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানি ছিল। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকার ও কলকাতা পুরসভাকে ৬ অগস্টের মধ্যে ‘মাস্টার প্ল্যান’ জমা দিতে বলেছেন। ওই দিনই এই মামলার শেষ শুনানি হবে।
জনস্বার্থ মামলার জেরে কলকাতা হাইকোর্ট ২০১২ সালে শহরের নিকাশি ব্যবস্থার সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছিল। পুর-কর্তৃপক্ষ ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে হাইকোর্টে জানায়, বর্তমানে শহরে যে নিকাশি ব্যবস্থা রয়েছে, তা পুরনো। চলতি নিকাশি ব্যবস্থায় বর্ষার অতিরিক্ত জল সরানো কষ্টসাধ্য। এই নিকাশি ব্যবস্থায় এক দিকে যেমন পরিবেশের দূষণ হচ্ছে, তেমনই জনস্বাস্থ্যেও তার প্রভাব পড়ছে। তা ছাড়া, যে সব নিকাশি-খাল দিয়ে জল বেরোয়, সেগুলিতে প্রচুর পলি পড়ে রয়েছে। ফলে নিকাশি পাম্পগুলিও ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। সেই কারণে বর্ষায় প্রায়ই শহর জলমগ্ন হয়ে পড়ছে। |
নদী হয়ে বইছে আমহার্স্ট স্ট্রিট।—ফাইল চিত্র |
পুর-কর্তৃপক্ষ আদালতে আরও জানান, পুর-এলাকার ৭ থেকে ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের পরিস্থিতি মন্দের ভাল হলেও সংযোজিত এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা আরও খারাপ। সংযোজিত এলাকায় অধিকাংশ জায়গাতেই খোলা নিকাশি ব্যবস্থা রয়েছে। বর্ষার জল খোলা নর্দমা দিয়ে নিচু এলাকায় গিয়ে পড়ে। সংযোজিত এলাকায় কিছু ক্ষেত্রে নালার মাধ্যমে নিত্যদিনের নিকাশি ও বর্ষার জল হুগলি নদীতে গিয়ে পড়ে।
পুর-কর্তৃপক্ষ আরও জানান, সংযোজিত এলাকার অল্প কিছু জায়গায় ‘গঙ্গা অ্যাকশান প্ল্যান’ অনুযায়ী নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি করা গেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম।
এ দিন পরিবেশকর্মী সুভাষবাবু আদালতে জানান, শহরের নিকাশি ব্যবস্থার বেহাল দশার কথা তিনি মামলার আবেদনেই জানিয়েছিলেন। পুর-কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে এ ব্যাপারে যা জানিয়েছেন, তাতেই বোঝা যাচ্ছে, শহরের নিকাশির মান কত খারাপ।
পুরসভা সূত্রের খবর, কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থার মাস্টার প্ল্যান ১৯৬২ সালে তৈরি করা হয়েছিল। তার পরে শহরের আকার বেড়েছে, বেড়েছে লোকসংখ্যাও। কিন্তু মূল নিকাশির ক্ষেত্রে পুরনো নকশার উপরেই অনেকটা নির্ভর করতে হয়।
এ দিন হাইকোর্ট জানায়, ‘মাস্টার প্ল্যান’ জমা দেওয়ার পাশাপাশি তার কতখানি কার্যকর করা হয়েছে, তা যেমন জানাতে হবে, তেমনই কতটা কার্যকর করা যায়নি, তা-ও রাজ্য সরকার এবং কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষকে আদালতে জানাতে হবে।
|