ভিড়ে ঠাসা বিচারকের এজলাস। সরকারি আইনজীবীদের আসনের পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বাদামি চুড়িদার পরা বছর ছাব্বিশের এক যুবতী। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎই ধপ করে বসে পড়লেন তিনি। তাঁকে তুলে ধরে বেঞ্চে বসানো হল। কিছু পরে বেঞ্চে বসে থাকা অবস্থাতেই পাশে বসা মহিলা পুলিশকর্মীর গায়ে পড়লেন তিনি। তাঁর নিরাপত্তায় থাকা এক মহিলা পুলিশকর্মী অন্য পুলিশকর্মীদের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলেন, “দাঁতকপাটি লেগেছে। চোখ খুলছে না। চামচ নিয়ে আসুন!”
বিধাননগর আদালতে বিচারকের এজলাসে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ অসুস্থ হয়ে পড়েন সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত, সংস্থার ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়। দাঁতকপাটির মোকাবিলায় মুখে চামচ ঢুকিয়ে দেন মহিলা পুলিশকর্মী। তাঁর চোখেমুখে জলের ঝাপটাও দেওয়া হয়। কিছু ক্ষণ সংজ্ঞাহীন থাকার পরে উঠে বসেন সারদা গোষ্ঠীর অন্যতম অংশীদার। বিচারকের নির্দেশে তাঁকে এজলাসের মধ্যেই চা-বিস্কুট খেতে দেওয়া হয়। |
মঙ্গলবার সল্টলেক আদালতে দেবযানী।—নিজস্ব চিত্র |
দেবযানী যখন জ্ঞান হারিয়ে মহিলা পুলিশকর্মীর গায়ে ঢলে পড়ছেন, এজলাসে আসামিদের আসনে বসে থাকা সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন উৎকণ্ঠায় উঠে দাঁড়ান। পুরো ঘটনাটি দেখে আপনমনেই বিড়বিড় করতে থাকেন তিনি। কিছুটা সুস্থ বোধ করার পরে দেবযানী বিচারককে জানান, তিনি নানা ধরনের রোগে ভুগছেন। স্ত্রীরোগ ছাড়াও পিঠের ব্যথা তাঁকে মাঝেমধ্যেই কাবু করে ফেলে। তাই বেল্ট পরে থাকতে হয়। আলিপুরে মহিলা জেলে চিকিৎসা চলছে। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁর বেশ কিছু শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষা করাতে বলেছেন জেল-কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু বিভিন্ন মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় তাঁকে ক্রমাগত রাজ্যের বেশ কিছু জেলে ঘুরতে হচ্ছে। ওই সব পরীক্ষাই হচ্ছে না। দেবযানী নিজের শারীরিক অবস্থার কথা জানানোর পরে বিচারক আলিপুর মহিলা জেলের কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁর চিকিৎসার যাবতীয় রিপোর্ট চেয়ে পাঠান।
বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় ন’টি মামলায় সুদীপ্ত, দেবযানী ছাড়াও সারদার অন্য অংশীদার মনোজ নাগেল এবং অরবিন্দ চৌহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। বিধাননগর আদালতে তোলা হয় চার জনকেই। বিচারক তাঁদের ১৩ অগস্ট পর্যন্ত হাজতবাসের নির্দেশ দেন।
অভিযুক্তদের আইনজীবীরা এ দিন অভিযোগ জানান, তাঁদের চার্জশিটের সমস্ত তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। সরকার পক্ষের তরফে পাল্টা আবেদনে বলা হয়, নির্দিষ্ট কয়েকটি তথ্য যাতে অভিযুক্তদের আইনজীবীদের দেওয়া না-হয়, সেই নির্দেশ দেওয়া হোক। যদিও আইনের যে-ধারা মোতাবেক ওই আবেদন করা হয়েছে, তা ভুল বলেই প্রতিপন্ন হয়। পরে তদন্তকারী অফিসার ভুল স্বীকার করে নেন।
সারদা কাণ্ডে বিধাননগর ছাড়াও কলকাতার হেস্টিংস থানা এলাকায় তিনটি মামলা রয়েছে সুদীপ্ত ও দেবযানীর বিরুদ্ধে। সেই সব মামলার চার্জশিটও এ দিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করেছে কলকাতা পুলিশ।
|