প্রত্যাশা মতোই টাকাকে চাঙ্গা করতে সুদ কমানোর রাস্তায় হাঁটল না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তবে একই সঙ্গে শীর্ষ ব্যাঙ্কের প্রতিশ্রুতি, দামে স্থিতি ফিরলেই নগদের জোগানে রাশ টেনে টাকার দাম বাড়ানোর নীতি থেকে সরে আসবে তারা। তবে এর জন্য কোনও সময়সীমা বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন আরবিআই গভর্নর ডি সুব্বারাও।
সুব্বারাও মঙ্গলবার ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের জন্য ঋণনীতির পর্যালোচনা পেশ করে বলেন, “অর্থনীতির উপর সজাগ দৃষ্টি রেখে এবং মূল্যবৃদ্ধিকে আর বাড়তে না-দিয়ে স্থিতি ফিরিয়ে আনাই আমাদের লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতি।” যা গত অর্থবর্ষে জাতীয় আয়ের ৪.৮% ছুঁয়েছে। ২.৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে কেন্দ্রকে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান সুব্বারাও। প্রসঙ্গত, তাঁর কাজের মেয়াদ আগামী ৪ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার কথা। মেয়াদ আর বাড়ানো না-হলে এটাই তাঁর করা সর্বশেষ খণনীতি। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের মধ্যবর্তী পর্যালোচনা ১৮ সেপ্টেম্বর।
ব্যাঙ্কের হাতে নগদের পরিমাণ কমিয়ে অর্থনীতিতে টাকার জোগানে রাশ টানতে এর আগে ১৫ ও ২৩ জুলাই ব্যবস্থা নেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যার মধ্যে ছিল শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের ধার নেওয়ার খরচ বাড়ানো ইত্যাদি। তখনই ঋণনীতিতে সুদের হারে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার ইঙ্গিত মেলে। এ দিন সিআরআর, ব্যাঙ্ক রেট, রেপো, রিভার্স রোপো রেট, সবই অপরিবর্তিত রেখেছে আরবিআই। |
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ না-কমানোয় অবশ্য আদৌ খুশি নয় শেয়ার বাজার। সেনসেক্স এ দিন ২৪৫ পয়েন্ট পড়ে নামে ১৯,৫০০ পয়েন্টেরও নীচে। এমনকী টাকার পতন রুখতেই আরবিআই এই কড়া মনোভাব নিলেও ঠেকানো যায়নি ডলারে টাকার দামের ফের ৬০-এর নীচে নেমে যাওয়া। এ দিন টাকা ১০৬ পয়সা পড়ায় দিনের শেষে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬০.৪৭ টাকা। চলতি অর্থবর্ষে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫.৭% থেকে কমিয়ে ৫.৫% করায় তার প্রভাবও পড়ে বাজারে। সেনসেক্স ও টাকার পতনে ইন্ধন জোগায় অর্থনীতি নিয়ে উৎকণ্ঠা। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পদক্ষেপ সত্ত্বেও বিশ্ব বাজারে চাঙ্গা হয়ে ওঠা ডলার এবং দেশে তেল, সোনা ইত্যাদি আমদানি করার অত্যধিক খরচ সামলে চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতিকে এই মুহূর্তে বাগে আনা মুশকিল। ফলে টাকার উপর চাপ অব্যাহত থাকবে।
অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা রঘুরাম রাজন অবশ্য এ দিনই জানান, চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতি (বৈদেশিক মুদ্রা আয়-ব্যয়ের ফারাক) কমাতে কয়েক সপ্তাহেই নির্দিষ্ট ব্যবস্থা ঘোষণা করবে কেন্দ্র।
শিল্প ও ব্যাঙ্কিং মহলও এ দিন হতাশা জানিয়েছে। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে তারা ঋণে সুদ বাড়াবে না। কারণ ঋণের চাহিদা এমনিতেই কম। সুদ বাড়ালে তা আরও কমবে। তবে নগদ সংস্থানের খরচ মেটাতে আগামী এক মাসে সুদ বাড়ানো হবে কি না, সেই নিশ্চয়তা তারা দিতে পারছে না।
|