দু’বার স্কুল পরিচালন কমিটির ভোটে লড়া ছাড়া তেমন কোনও রাজনৈতিক লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মতো ছিল না কোনও রাজনৈতিক প্রতিপত্তিও। এমন এক প্রার্থী সুখেন মণ্ডল হারিয়ে দিলেন জেলা পরিষদের গত ২০ বছরের খাদ্য কমার্ধ্যক্ষ, সিপিআইয়ের অপূর্ব মণ্ডলকে।
ভোটের ফল বেরনোর পর থেকে তাই দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছে ‘হিরো’ বনে গিয়েছেন সুখেনবাবু। এলাকায় এখন রব একটাই “এক মণ্ডলকে হারিয়ে নক্ষত্র পতন ঘটালেন আর এক মণ্ডল!”
ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকে জেলা পরিষদের ২৬ নম্বর আসনটিতে গত তিনটে পঞ্চায়েত ভোটে জিতেছিলেন সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক তথা ডাকসাইটে নেতা অপূর্ববাবু। তার আগে ১৯৮৩ সালেও তিনি ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকে জেলা পরিষদ আসনে জিতেছিলেন। সেই অপূর্ববাবু গত পঞ্চায়েত ভোটেও প্রায় ১১০০ ভোটে নিকটতম তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়ে ছিলেন। স্বভাবতই জেলার এই ডাকসাইটে নেতাকে হারিয়ে এলাকায় রীতি মতো সাড়া ফেলে দিয়েছেন সুখেন মণ্ডল।
|
অপূর্ব মণ্ডল। — নিজস্ব চিত্র |
জেলা পরিষদের ওই আসনের আওতায় পড়ে বড়তুড়িগ্রাম, ডাবুক, দক্ষিণগ্রাম ও তালোয়া পঞ্চায়েত। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে বড়তুড়িগ্রাম ও ডাবুক পঞ্চায়তের ক্ষমতা দাপটের সঙ্গে দখল করেছিল বামফ্রন্ট। আর অন্য দু’টি পঞ্চায়ত পায় তৃণমূল-বিজেপি জোট। ওই দুই পঞ্চায়েতেনও বামফ্রন্টের সদস্য সংখ্যা খুব একটা কম ছিল না।
এমনকী গত বিধানসভায় মমতা-ঝড়ের পরেও ভোটের ফলের নিরিখে কিন্তু চারটি পঞ্চায়েতেই এগিয়ে ছিল বামফ্রন্ট। ফলে এমন একটি আসনে কী ভাবে হারলেন অপূর্ব মণ্ডল, তা নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে দলের অন্দরে। যদিও পরাজয়ের পরে অপূর্ববাবুর দাবি, “ভোটারদের মধ্যে বিপুল টাকা ছড়িয়ে এবং বুথে বুথে ছাপ্পা মেরে জিতেছে তৃণমূল। তা না হলে ভোটের ফল অন্য রকম হত।”
এ বারে বামফ্রন্টের কাছ থেকে ডাবুক ও বড়তুড়িগ্রাম পঞ্চায়তের ক্ষমতাও ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের কাছ থেকে আবার তালোয়া পঞ্চায়তটি কেড়ে নিয়েছে বামফ্রন্ট। আর দক্ষিণগ্রাম পঞ্চায়তের ফল হয়েছে ত্রিশঙ্কু। এই পরিস্থিতিতে জেলা পরিষদের আসনটিতে ১,৫৬৩ ভোটের ব্যবধানে সিপিআই প্রার্থীকে হারিয়েছে তৃণমূল। বড় পরিমাণের ভোট কেটেছেন বিজেপি প্রার্থী উৎপল রায়। পেয়েছেন ৬,৯২৭টি ভোট। কংগ্রেস প্রার্থী মোজাম্মেল হক খুব একটা দাগ কাটতে পারেননি। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ১,৬১৫।
সুখেনবাবু তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় এলাকার তেমন পরিচিত রাজনৈতিক মুখ ছিলেন না। দক্ষিণগ্রামের বাসিন্দা, পেশায় লোহা ব্যবসায়ী সুখেন মণ্ডল সিপিআইয়ের হেভিওয়েট প্রার্থীকে হারিয়ে চমকে দিয়েছেন কর্মী-সমর্থকদের। ফল বের হওয়ার পরে বড়তুড়িগ্রামের সজল দাস বা তালোয়া-র মুস্তাকিন শেখদের মুখেও অকপট স্বীকারোক্তি, “সুখেনদা অপূর্ববাবুক হারাতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয়েই ছিলাম। আমাদের ওই সংশয়কে অমূলক প্রমাণ করে জিতে দেখালেন সুখেনদা।”
আর বিজয়ী প্রার্থী বলছেন, “কয়েক যুগ ধরে খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ থেকেও অপূর্ববাবু এলাকার তেমন উন্নয়ন করতে পারেননি। মানুষ তাই উন্নয়নের তাগিদেই আমাকে ভোট দিয়েছেন।” আগামী দিনে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন করার স্বপ্ন দেখছেন দক্ষিণগ্রামের সুখেন মণ্ডল। |