তৃণমূল, বিজেপি কিংবা কংগ্রেস নয়। নয় কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কিংবা অন্তর্ঘাতও। সিপিএমকে হারিয়ে দিল খোদ সিপিএম-ই। অবিশ্বাস্য হলেও চমকপ্রদ ঘটনাটি ঘটেছে ময়ূরেশ্বরের গিধিলা গ্রামে।
তবে এখানে এক সিপিএম রাজনৈতিক দল হলেও, অন্য ‘সিপিএম’ আদতে নিছকই এক জন যুবকমাত্র। ঘটনাচক্রে তাঁর স্ত্রীকে এ বার ওই গ্রাম সংসদ থেকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। ব্যক্তি সিপিএমের পোশাকি নাম বুদ্ধদেব ভল্লা। এলাকায় বুদ্ধদেবের পরিবর্তে তাঁকে স্থানীয় মানুষজন সিপিএম হিসেবেই বেশি চেনেন ও জানেন। কারণ সিপিএমের সূচনা কাল অর্থাৎ ১৯৭৮ সালে জন্ম হয়েছিল বলে বুদ্ধদেববাবুর ‘সিপিএম’ নাম রেখেছিলেন বাবা একনিষ্ঠ সিপিএম কর্মী সাগর ভল্লা। এ বারে সিপিএমের ছায়ারানি ভল্লার বিরুদ্ধে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়ান ‘সিপিএমের স্ত্রী’ চিন্তারানি ভল্লা। দলীয় প্রচারে সিপিএমের নেতা কর্মীরা যখন ভোটের আগে বাড়ি বাড়ি সিপিএমকে ভোট দিতে আবেদন জানাছিলেন, তখন বিভ্রান্তিতে অনেকে বুদ্ধদেববাবুর স্ত্রীকেই ঠাওরাছিলেন বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।
এ বারের ভোটে ‘সিপিএমের’ স্ত্রীকে অবশ্য হারিয়ে দিয়েছেন, সিপিএম প্রার্থী ছায়ারানিদেবী। তবে জিততে না পারলেও চিন্তারানিদেবী অবশ্য সিপিএমের ভোটে ভালই থাবা বসিয়েছেন। কেটেছেন বিজেপির ভোটও। গত পঞ্চায়ত নির্বাচনে সিপিএমের বিরুদ্ধে তৃণমূল, বিজেপি, ফব, কংগ্রেস জোট করে লড়েছিল। তাতে জিতেছিলেন বিজেপি প্রার্থী। গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে ওই সংসদে ৫৫৬টি ভোট পেয়ে প্রথম স্থানে ছিল সিপিএম। ৪১৫টি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছিল বিজেপি। কংগ্রেস জোটের তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিল সাকুল্যে ২৫০টি ভোট। এ বারের পঞ্চায়ত নির্বাচনে, সিপিএম পেয়েছে ৪৮২টি এবং ৪০৭টি ভোট পেয়ে বিজেপিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল। ৩১৯টি ভোট পেয়েছে বিজেপি। কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছে মাত্র ২১টি ভোট। ছায়ারানিদেবী বলেন, “আগেই বলেছিলাম, নামে কী এসে যায়। মানুষ ভোট দেন প্রতীক দেখে।” তাঁর দাবি, “আর চান কাজ গতবারের জোট প্রার্থী বিজেপি এলাকায় তেমন কোনও কাজ করেনি। তারই প্রমাণ মিলল ভোটের ফলাফলে।”
চিন্তারানিদেবী অবশ্য বলেন, “বিজেপি তলায় তলায় সিপিএম প্রার্থীর হয়ে ভোট করায় ওদের মুখ রক্ষা হয়েছে। আমরা যে পরিমাণ ভোট সিপিএম থেকে কেটেছিলাম, বিজেপি সে পরিমাণ ভোট সিপিএমকে দিয়ে পুষিয়ে দিয়েছে। না হলে ওদের হার অনিবার্য ছিল।” বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য ওই অভিযোগ মানেনি।
|
অপ্রাকাশিত গ্রাম পঞ্চায়েতের ফল |
আমডোল: বামফ্রন্ট, (গতবার কংগ্রেস)। পাইকর-১: কংগ্রেস, (গতবার কংগ্রেস)। রুদ্রনগর: বামফ্রন্ট, (গতবার কংগ্রেস)। পাইকর-২: বামফ্রন্ট, (গতবার কংগ্রেস)। জাজিগ্রাম: ত্রিশঙ্কু, (গতবার বামফ্রন্ট)। কুশমোড়-১: ত্রিশঙ্কু, (গতবার কংগ্রেস)। কুশমোড়-২: ত্রিশঙ্কু, (গতবার কংগ্রেস)। মিত্রপুর: টাই, (গতবার কংগ্রেস)। নন্দীগ্রাম: ত্রিশঙ্কু, (গতবার সিপিএম)। |
|