টোপ দেওয়ার নালিশ তৃণমূলের বিরুদ্ধে
ত্রিশঙ্কু নিয়ে আশঙ্কা সব দলেই
৬৭টির মধ্যে ৪০!
রামপুরহাট মহকুমাতেই সেই সংখ্যা ছুঁয়েছে ২৫। এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে বীরভূমে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা এমনই।
কোথাও সিপিএম ও তৃণমূল পেয়েছে সমান সমান আসন। কোথাও কংগ্রেস-তৃণমূল, কোথাও বা সিপিএম-কংগ্রেস। আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতার ধারে কাছে নেই কোনও বড় দলই, এমন নজিরও তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতি ওই পঞ্চায়েতগুলির ভবিষ্যত কী হবে, তা নিয়ে কৌতুহলের অন্ত নেই বাসিন্দাদের মনে।
কারা দখল করবে ওই সব পঞ্চায়েত? জোর জল্পনা শুরু হয়েছে জেলার রাজনীতিতে। ইতিমধ্যেই ওই সব পঞ্চায়েতের জেতা প্রার্থীদের নিজেদের দিকে টানতে নানা কলকাঠি নাড়াও শুরু হয়েছে। মুরারই ২ পঞ্চায়েত সমিতির মিত্রপুর পঞ্চায়েতেই যেমন, ২০টি আসনের ওই পঞ্চায়েতে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট দু’ দলই পেয়েছে ১০টি করে আসন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পঞ্চায়েতের সদ্য জিতে আসা এক সদস্যের দাবি, “অনেকেই প্রধানপদ দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন। সব সময় ফোনেও যোগাযোগ রাখছেন।” এই পরিস্থিতিতে দলের অন্দরে কেউ কি ভাঙন ধরাতে পারবে? এ ক্ষেত্রে এককাট্টা হতে দেখা গেল মিত্রপুর পঞ্চায়েতেরই কংগ্রেসের দুই জয়ী দম্পতিকে। বিজয়ের উল্লাসের মাঝেই বকুল মোল্লা জানালেন, “আমরা চারজনই এখানে কংগ্রেসের একনিষ্ঠ সদস্য। কোনও প্রলোভন দেখিয়েই আমাদের মধ্যে কেউ ভাঙন ধরাতে পারবেন না।”
রামপুরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির কাষ্ঠগড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের চিত্রটাও কতকটা এক। দশটি আসনের মধ্যে সিপিএম পেয়েছে ৫টি, তৃণমূলও। এমন বিচিত্র পরিস্থিতিতে প্রবল অস্বস্তিতে দু’ দলের নেত্ৃত্বই। স্বাভাবিক ভাবেই দু’ দলেরই সিদ্ধান্ত কেউই কাউকে সমর্থন করবে না। সিপিএমের মুরারই জোনাল সম্পাদক বরকতুল্লাহ বলছেন, “কংগ্রেস আমাদের রাজনৈতিক শত্রু। আর তৃণমূল হচ্ছে রাজনৈতিক বিপদ। সুতরাং ওই দুই দলকে আমাদের প্রতীকে জিতে আসা সদস্যেরা কোনও ভাবেই সমর্থন জানাতে পারেন না।”
উঠে আসছে টাকা ছড়ানোর গল্পও। বিজয়ী সদস্যদের প্রভাবশালী দলগুলি টাকার প্রলোভন দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ বিজেপির। রাজ্যের শাসক দলের প্রতিই তাদের বেশি নালিশ। বিজেপি-র জেলা সহ-সভাপতি শুভাশিস চৌধুরীর দাবি, “রামপুরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির খরুণ ও নারায়ণপুর পঞ্চায়েতে আমাদের বিজয়ী সদস্যদের নানা ভাবে প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। তাদের ফাঁদে যাতে কেউ পা না দেন, তার জন্য সব রকমের সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।” এলাকার এক প্রবীণ সিপিএম নেতাও জানাচ্ছেন, “রাজ্যের শাসক দলের টাকার কাছে কি আমরা পেরে উঠব! তবুও দলের প্রতীকে জেতা কোনও প্রার্থী যাতে বিকিয়ে না যান, তাই সবাইকে একজোট করে রাখা হচ্ছে।”
এমন পরিস্থিতিতে বিজয়ী সদস্যদের অন্যত্র ‘লুকিয়ে’ রাখার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে সব পক্ষকেই!
এ দিকে প্রলোভন দেখানোর অভিযোগ তৃণমূল অবশ্য মানছে না। তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বরং দাবি, “আমাদের দল কাউকে কোনও প্রলোভন দেখাচ্ছে না। তবে আমরা দলে যোগ দেওয়ার জন্য যে কাউকেই আহ্বান জানাতে পারি। সেক্ষেত্রে কেউ যদি দলে যোগ দিতে ইচ্ছুক হন, তাঁকে আমরা সাদরে গ্রহণ করব।” আর দলের প্রতীকে জেতা কোনও পঞ্চায়েত সদস্য যদি অন্য দলে ঢুকে পড়েন, তাঁদের ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেই তাঁর হুঁশিয়ারি। অন্য দিকে, জেলা কংগ্রেসের সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি জানাচ্ছেন, “এই অবস্থায় কী করণীয়, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ব্লক নেতৃত্ব জানতে চাইছেন। আমি তাঁদের আগে স্থানীয় স্তরে আলোচনা করে জানাতে বলেছি। সেই বক্তব্য নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
কেউ যদি এই সুযোগে রং পাল্টে জার্সি বদল করেন? ওই সব সদস্যদের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়?
রাজ্যের এক প্রাক্তন প্রশাসনিক কর্তা কিন্তু জানাচ্ছেন, “পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে কোনও একটি রাজনৈতিক দলের এক তৃতীয়াংশ সদস্য যদি দলত্যাগ করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁরা দলত্যাগবিরোধী আইনের আওতায় পড়বেন না। তবে যদি একজন সদস্য দল ত্যাগ করেন, সে ক্ষেত্রে তিনি দলত্যাগবিরোধী আইনের মধ্যে পড়ে যাবেন। তাঁর ওই সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.