|
|
|
|
|
ইলিশ বিরিয়ানি কিন্তু
সহজেই বানানো যায়
বর্ষা মানেই পার্টি জমাতে আপনার হাতে অব্যর্থ অস্ত্র।
স্বয়ং ইলিশ মাছ। লিখছেন ঋতা ভিমানি |
|
মল্লার রাগে যেমন রবীন্দ্রনাথের অজস্র মনভরানো গান রয়েছে, ঠিক তেমনই বৃষ্টির মরসুম চলাকালীন আমাদের রসনাও নানা ভাবে পরিতৃপ্ত হতে চায়। খুব শিগগিরই বাইশে শ্রাবণে আবার এক বার কবিগুরুকে আমরা তাঁর অসাধারণ সব সৃষ্টির মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানাব। গান-কবিতার মূর্ছনা বয়ে যাবে। কিন্তু যখন বাইরে অবিরাম বৃষ্টি চলবে তখন কী করবেন? বিশেষ করে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়াও তো ভরা বৃষ্টিতে অনিশ্চিত হয়ে যায়। আর অঝোর ধারে বৃষ্টি দেখতে দেখতে কত রকম ইচ্ছেই না মনে জেগে ওঠে!
বর্ষার মরসুমে যে খাবারটার কথা প্রথমেই মনে আসে, তা নিঃসন্দেহে খিচুড়ি। আর যদি সঙ্গে থাকে ইলিশ মাছ ভাজা, তবে তো কথাই নেই। প্রত্যেকটি পরিবারেই খিচুড়ি রান্নার একটা নিজস্ব কায়দা রয়েছে। যেমন গুজরাটি কায়দায় খিচুড়ির সঙ্গে খাওয়া হয় কারি (বেসন আর বাটারমিল্ক দিয়ে তৈরি একটা ডিশ যা আবার ভারতের নানা জায়গায় এক এক রকম পদ্ধতিতে বানানো হয়)। সঙ্গে অনেক রকম ভাজাও চলে।
খিচুড়ি খুব পুষ্টিকর খাবার হওয়ার পাশাপাশি কিন্তু ভীষণ ঘরোয়া একটা খাবার। তো এ রকম একটা খাবার নিয়ে পার্টি করা কি সত্যিই সম্ভব? কেন নয় বলুন তো? আজকের দুনিয়ার বিশেষত্বই তো একটা জিনিসকে নানা ভাবে উপস্থাপনা করা। কোনও দিন মাংসের খিচুড়ি বানিয়েছেন? বা মরাঠি কায়দায় প্রন খিচুড়ি?
পার্টি জমাতে গেলে কিন্তু খিচুড়ির সঙ্গে ইলিশের সঙ্গতটা খুব প্রয়োজন। ইলিশ মাছ ভাজা আর খিচুড়ি যাকে বলে সাতপাকে বাঁধা। ইলিশের ডিমটাও আলাদা করে ভেজে পরিবেশন করা যায়। ইলিশ বিরিয়ানি হলে কেমন হয় বলুন তো? যদি সেটা শেফ নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের কায়দায় বানানো যায়, তা হলে তো কথাই নেই। আর ওঁর বানানোর পদ্ধতিটাও বেশ সহজ। শেফ এই পদটি শুধুমাত্র তিনি যে হোটেল বা রেস্তোরাঁর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, সেখানেই বানাচ্ছেন এমনটা নয়। আমার জন্যও তিনিই বানান এই পদ। ওঁর রান্নার বিশেষত্ব এটাই যে ইলিশ মাছটাকে উনি কুমড়ো পাতায় মুড়ে দেন। এতে আলাদা করে আর পাতাটাকে বাদ দিতে হয় না। গোটাটাই বেশ রসিয়ে খেয়ে ফেলা যায়। ইলিশ বিরিয়ানিতে এটা একটা সম্পূর্ণ অন্য রকম স্বাদ এনে দেয়। ডিশটা সত্যিই খুব লোভনীয়। |
|
একবার তাইল্যান্ড প্রবাসী কয়েক জন ভারতীয় বন্ধুকে নেমন্তন্ন করে খাইয়েছিলাম ইলিশ মাছের বিরিয়ানি। ওঁদের এতটাই ভাল লেগেছিল খেয়ে যে, পরে তাইল্যান্ডে গেলে এই পদটি সঙ্গে নিয়ে যেতে বলেছে আমাকে।
যেহেতু ইলিশ নিয়েই আমরা কথাবার্তা বলছি, তাই স্মোকড ইলিশ পদটাই বা বাদ যায় কেন! বিশেষ করে আপনি যদি দুপুরবেলায় একটা লাঞ্চ পার্টি দিতে চান, তা হলে কিন্তু এই পদটা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতেই পারেন। কী? ভাবছেন তো কী কঠিন বানানো! শুধু আমাদের টলি ক্লাব, বেঙ্গল ক্লাব বা কিউপিতেই বানানো হয়? এত তাড়াতাড়ি হাল ছাড়বেন না প্লিজ।
এ বার যখন ঢাকা গিয়েছিলাম, আমার গৃহকর্তা জানতে চেয়েছিলেন রাত্রের খাবারে কী খাব। অন্যান্য পদের (রোস্ট মাটন আর পাঙাশ মাছের ঝোল) কথা বলার সময় স্মোকড ইলিশের কথা বলতে ভুলিনি। কোনও ব্যাপারই না, বলেছিলেন ওঁরা। সঙ্গে এটাও জানান এক ছোকরা রাঁধুনি আছে ওঁদের যে কিনা ওই রান্নাটা এক চুটকিতে করে ফেলবে। সত্যি বলতে শর্টকাট পদ্ধতিতে রাঁধা স্মোকড ইলিশ খেয়েছিলাম সেদিন ওঁদের ওখানে। (ওঁদের উঠোনটা যদিও বেশ বড়ই ছিল আর তোলা উনুনও ছিল। তবে ধোঁয়া ওঠা ব্যাপারটা আনতে খই ব্যবহার করার সময়টা পাওয়া যায়নি) স্মোকড ইলিশ বানাতে প্রয়োজন ধারালো একটা ছুরি। আর যে দক্ষতাটা চাই, সেটা তো একটুআধটু অভ্যেস করলেই হয়ে যাবে। মাছের কাঁটা সম্পূর্ণ বেছে ফেলার পর ওয়েস্টার সস আর টমেটো সসের সঙ্গে মিশিয়ে মাছটাকে ওভেনে পুরে দিতে হবে। মাছগুলোর রসালো ছবি নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন। বাকি মাছটা দিয়ে অনায়াসে চচ্চড়ি বানিয়ে ফেলতে পারেন।
ক্যালকাটা স্কুল অব মিউজিকের এক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বন্ধু দেবযানী মিত্র ঢাকায় আমার ইলিশ আখ্যান শোনার পর একটা আরও ভাল আর খাঁটি স্মোকড ইলিশের রেসিপি দিয়েছে। ও ওটা তন্দুরে বানায়। বাজার থেকে ইলিশের ফিলে কিনে এনে ফিশ অ্যান্ড ফিশ সসে (অ্যাঞ্চোভি সস না থাকলে) ম্যারিনেট করে। সসটা কলকাতায় সহজলভ্য। তার পর ইংলিশ মাস্টার্ড পাউডার, নুন, গোলমরিচ গুঁড়ো আর স্যালাড অয়েল দিয়ে এক ঘণ্টা ম্যারিনেট করার পর মার্কিটা ছোট তন্দুরে দিয়ে তাতানো হয়। ধোঁয়া বেরোতে শুরু করলে তন্দুরের ‘মেশ’-এর উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় ম্যারিনেট করে রাখা ইলিশ মাছের টুকরোগুলো। সাধের স্মোকড ইলিশ তৈরি! তবে মাছের তলার অংশের কাঁটাটা পুরোপুরি ছাড়িয়ে ফেলতে পারলে খেতে হয় লা-জবাব।
চলুন, দু’টো রেসিপি তো আপনারা পেয়েই গেলেন। একটা বানানো গঙ্গার ইলিশ দিয়ে। অন্যটা পদ্মার।
তবে দুপুরের লাঞ্চের পর্বটিতেই আবার ফিরি চলুন। খিচুড়ি, বিরিয়ানি, আর রকমারি ইলিশের পদ থাকলে বুফে নয়, পাত পেড়ে খাওয়ানোই ভাল। আপনার বাড়িতে যদি বারো জন একসঙ্গে বসা যায় এমন ডাইনিং টেবিল থাকে, তা হলে তো মুশকিল আসান। আর না থাকলে? তাতেও কুছ পরোয়া নেই। একটা টেবিলে ছ’জনকে বসান। আরও একটা টেবিল ভাড়ায় আনার বন্দোবস্ত করুন। বাকি ছ’জনকে জায়গা করে দিন সেটায়। ১২ জন অতিথি আমার মতে এই রকম পার্টির ক্ষেত্রে যথেষ্ট। লালি মজুমদার, আমার বন্ধু, এক অসাধারণ রাঁধুনিও বটে, ইলিশের গাদা-পেটি আলাদা করে পরিবেশন করত যাতে গেস্টরা নিজের নিজের পছন্দ অনুযায়ী খেতে পারেন।
তা হলে আমাদের বর্ষার পার্টির মেনু কিছুটা এ রকম: ইলিশ বিরিয়ানি, মাংসের কিমার খিচুড়ি, কড়াইশুঁটি-ফুলকপি দিয়ে একটা প্লেন খিচুড়ি, সাদা ভাত, ইলিশ মাছ ভাজা, ইলিশ মাছের তেলঝোল। গাদা-পেটি আলাদা ভাবে পরিবেশনের কথাটাও মাথায় রাখবেন। পার্টি জমাতে এই পদগুলোর জুড়ি মেলা ভার। সত্যি বলতে মাছগুলো এত টাটকা থাকে যে আমি প্রাণে ধরে ওদের সর্ষেবাটা দিয়ে রান্না করার কথা ভাবতেও পারি না। আপনি যদি স্মোকড ইলিশ রান্না করে থাকেন, তা হলে বাকি মাছ আর মাছের কাঁটা দিয়ে চচ্চড়িটা অবশ্যই রাঁধুন। আর চটজলদি একটা ইলিশের টক রাঁধতে পারলে তো কথাই নেই। টক ইলিশের প্রসঙ্গে মনে পড়ল আমার বন্ধু সুপ্রিয়া রায়-এর কথা। ইলিশ মাছ দিয়ে কী অসাধারণ তেঁতুলের টক বানায় ও! মনে পড়লেই জিভে জল এসে যায় আমার।
আপনারও নিশ্চয়ই কাহিল অবস্থা? |
|
|
|
|
|