বড়বাজারে ব্যবসা করি গানও গাই

ভূমি-র সৌমিত্র হিসেবে আজও আপনার পরিচয়। ‘রবি ও নবীন’ তৈরি হওয়ার পরেও এই পরিচয়ে আপনি কতটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
আমি কোনও ভাবেই ‘ভূমি’-র সৌমিত্র ছাড়া অন্য কিছু হতে পারব না। ‘ভূমি’ আমার রক্তে। ‘ভূমি’-র সৌমিত্র সকলে হতে পারে না। প্রচুর পরিশ্রমের ফল, মানুষের ভালবাসা, ঈশ্বরের কৃপা না থাকলে ‘ভূমি’-র সৌমিত্র হওয়া যায় না। এটা ভাগ্যের কথা। এই তো এখানে আসার আগে এক ম্যাটাডর চালক আমায় দেখিয়ে বলছিলেন, ‘ওই দেখ ভূমিদা’। আমি এটা এনজয় করি।

ম্যাটাডর চালক থেকে বিদগ্ধ সঙ্গীতপ্রেমী সকলেই ভূমি-র শ্রোতা। ভূমি মাঠ থেকে মেহফিলে যে ভাবে নিজেদের গান ছড়িয়ে দিতে পেরেছিল, সেটা কি ‘রবি ও নবীন’ পারবে?
এটা তুলনার প্রশ্ন নয়। প্রায় সত্তরের কাছাকাছি গান তৈরি করেছে ভূমি। তবে সেখানে মেঠো সুরের প্রাধান্য বেশি ছিল। কিন্তু ‘রবি ও নবীন’ আজকের শহুরে সুরের কথা বেশি বলবে। রিজওয়ানুর থেকে মালালা থাকবে এই ধারার গানে। বিষয়টা এখানেও গান, কিন্তু একটু অন্য ভাবনা থেকে দেখা।

ভূমি-র মধ্যে থেকেও তো অন্য ভাবনা ভাবা যেত। অন্য ভাবনার জন্যে অন্য দল কেন তৈরি করতে হল? এর পিছনে কি কোনও পারস্পরিক বিবাদ ছিল?
না, একেবারেই তা নয়। একসঙ্গে থাকতে গেলে মনোমালিন্য হবেই। সে তো নিজের বাবা-মা’র সঙ্গেও হয়। আমার আর সুরজিতের মধ্যে বিরোধের কোনও প্রশ্নই নেই। এই তো এ বছরেই প্রায় চব্বিশটা অনুষ্ঠান হয়ে গেল ভূমির। আসলে ভূমি-তে একা গান গাওয়া যায় না। ওদের অনুষ্ঠানে কেবল ভূমির গান গাইতে হয়, ইচ্ছে হলে রবীন্দ্রনাথ বা অন্য গান গাওয়া যায় না। এই কারণগুলোর জন্যেই ‘রবি ও নবীন’ করার কথা মাথায় আসে আমার। এখানে ‘রবি’-র গানও থাকবে, আবার রবীন্দ্রনাথের গানও গাওয়া যাবে।

গত দু বছর ভূমির অ্যালবাম কেন বেরোয়নি?
গত বছর সুরজিৎ অ্যালবাম করেছিল। সেখানে আবার যদি ভূমির অ্যালবাম বেরোত, তবে বাজারে যে কোনও একটা ধাক্কা খেত। এ বছরেও ও অ্যালবাম করছে। ‘রবি ও নবীন’ও করবে। সে ক্ষেত্রে পরের বছর ভূমির অ্যালবাম হবে।

তা হলে সুরজিতের সঙ্গে আগামী দিনে কবে গান গাইছেন?
১ অগস্ট ‘রবি ও নবীন’এর অনুষ্ঠানে সুরজিৎ একটি গানের সঙ্গে বাঁশি বাজাচ্ছেন। আর সেপ্টেম্বরে আমরা আবার একসঙ্গে মঞ্চে গাইছি। ’৯৩ সাল থেকে ওর সঙ্গে আমি আছি। থাকব। এ সম্পর্ক চিড় খাওয়ার নয়।

সিডির বাজার পড়তির দিকে, মিউজিক ওয়ার্ল্ড বন্ধ হয়ে গেল, এমন সময়ে আপনি একটি নতুন গান, অন্যটি রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে অ্যালবামের কথা ভাবছেন কী করে?
মিউজিক ওয়ার্ল্ড বন্ধ হয়েছে কারণ ওদের ব্যবসায় আয় আর ব্যয়ের সামঞ্জস্য ছিল না। ওরা তো মোবাইল, দুলও বিক্রি করছিল। তাতেও হল না। এখনও অনেক নতুন কোম্পানি সিডি করার জন্যে এগিয়ে আসছেন। আমি খুব আশাবাদী। দরকার হলে ‘রবি ও নবীন’-এর নতুন অ্যালবাম বিপণনের দায়িত্ব আমি নিজেও নিতে পারি। অরিজিনাল সিডি হাতে ধরার ফিলিংটাই অন্য রকম।

তা হলে রবীন্দ্রনাথের গান ব্যান্ডে চলে এল। তার উপস্থাপনা কি বদলাচ্ছেন?
না। উপস্থাপনায় কোনও বদল নেই কারণ রবীন্দ্রসঙ্গীতকে রক-য়ের মতো করে গাওয়া উচিত নয়। ‘পথ ভোলা এক পথিক এসেছি’ -র মতো গান আমরা দ্বৈত কণ্ঠে গাইছি। নতুনত্বটা গানের অনুভূতিতেই।

তার মানে রবীন্দ্রনাথের নিজস্ব ঘরানা থেকে বেরোচ্ছেন না?
না। একেবারেই না।

সোমলতার ‘মায়াবনবিহারিণী’ গানটিতে রক মিউজিকের আভাস আছে। এটা আপনার কেমন লেগেছিল?
সোমলতার কোনও দোষ আমি দেখি না। যিনি সঙ্গীত পরিচালক, তিনি কেন বহুশ্রুত এই গানটিকে রক মিউজিকের আদলে ওঁকে দিয়ে গাওয়ালেন? প্রশ্ন এটাই।
আমার পছন্দ হয়নি। এটা না করলেও পারতেন। ভাটিয়ালি গানে যদি রক মিউজিকের অ্যারেঞ্জমেন্ট করা হয় আমরা কি মানব? মানব না। তা হলে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে রকের মিশ্রণই বা মানব কেন? রবীন্দ্রনাথের গান স্বরলিপি ধরেই গাওয়া উচিত বলে মনে করি।

গানের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসাটাও তো চালিয়ে যাচ্ছেন আপনি। গান আর ব্যবসা মেলান কী করে?
আমি গানও করি, আবার ব্যবসাও করি। তবে ব্যবসাটা পরিবার সূত্রে পাওয়া। আমাদের উত্তরবঙ্গের রায় পরিবার। বাবা কলকাতায় ব্যবসা করতে আসেন। ব্যবসার দিকে আমার মন ছিল না। কিন্তু বড়বাজার হলেও ব্যবসার জায়গায় আমার একটা সুন্দর ওয়ার্ক প্লেস আছে, ওখানে বসেও নানান লেখা চলে আসে,আজও আসছে।

ব্যবসা থাকার জন্যে কি গানের জগতে টিকে থাকার ক্ষেত্রে কোনও সুবিধে হয়েছে?
একেবারেই না। প্রায় আঠেরো বছর ধরে ব্যবসা দেখছি, কিন্তু এক পয়সাও নিই না।

ব্যান্ড মানেই কি নিয়ম ভাঙা, ঝুঁটি বাঁধা?
নাহ,আজকাল ব্যান্ড মানে নিয়ম ভাঙা নয়, নিজেকে ভাঙা। যাঁরাই এখন ব্যান্ডের গান গাইছেন দেখি ইংরেজি অ্যাকসেন্টে বাংলা বলছেন। এটা খুব বিরক্তিকর। কালো জামা পরে, মাথা ঝাঁকিয়ে, ঝুঁটি বেঁধে চিৎকার করলেই ব্যান্ডের গান হয় না। গান ভাল না হলে বাঙালি শ্রোতা ঘাড় ধরে স্টেজ থেকে নামিয়ে দেবে।

সব ধারার গানের স্কুলিং আছে। ব্যান্ডের কেন নেই?
জানি না...আসলে ব্যান্ড ব্যাপারটা সহজাত, চলে আসে। শিখিয়ে হয় না।
ও! একটা কথা আপনাকে বলা হয়নি...

কী কথা?
আমি ইংরেজি গল্প লেখা শুরু করেছি। বিষয়টা বলব না। আগের বার জানাজানি হয়ে চুরি করে নামকরা সিনেমা হয়ে গিয়েছিল।

কী ছবি?
সেটা তো বলব না...( রহস্যের হাসি)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.