ভোল পাল্টেও রেহাই পেল না দেবশঙ্কর
পুলিশের তৈরি স্কেচ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতেই নিজের ভোল বদলাতে নাপিতকে দিয়ে মোটা গোঁফ সরু করিয়েছিল সে। মাথার সামনের দিকের চুলও ছাঁটিয়েছিল। কিন্তু কাল হল নীল-সাদা রংয়ের চেক লুঙ্গি আর ঘিয়ে রংয়ের হাফ শার্ট পরে শুক্রবার রাতে উত্তরপাড়া স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকাটাই! ঘটনার ছ’দিন পরে রেল পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল হাওড়ামুখী দিল্লি-জনতা এক্সপ্রেসে এক তরুণীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টার ঘটনায় একমাত্র অভিযুক্ত ব্যক্তি।
সম্ভ্রম বাঁচাতে ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেওয়া তরুণী পুলিশকে আগেই জানিয়েছিলেন, তাঁর উপর হামলা চালানোর সময় দুষ্কৃতী নীল-সাদা রংয়ের চেক লুঙ্গি ও ঘিয়ে রংয়ের হাফ শার্ট পড়েছিল। ফলে সেই একই পোশাক আর আর মুখের স্কেচ মিলিয়ে অভিযুক্ত দেবশঙ্কর সাহু ওরফে পাগলাকে ধরতে অসুবিধা হয়নি পুলিশ অফিসারদের।
শনিবার রেল পুলিশ জানায়, দেবশঙ্করের গ্রামের বাড়ি বিহারের ছপরায়। বর্তমানে থাকে উত্তরপাড়ার মাখলায়। সে মোটরচালিত ভ্যান চালায়। তবে, তার কাছ থেকে ওই তরুণীর মোবাইল ফোনটি পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। এ দিন ধৃতকে হাওড়া আদালতে তোলা হলে আদালত তাকে ৭ দিন পুলিশি হেফাজতে থাকার নির্দেশ দেয়।
রেল পুলিশের দাবি, প্রাথমিক জেরায় ওই দুষ্কৃতী জানায়, ২১ জুলাই বিকেলে সে শ্রীরামপুর স্টেশন থেকে হাওড়ামুখী দিল্লি জনতা এক্সপ্রেসের মহিলা কামরায় উঠেছিল। তবে, তরুণীর শ্লীলতাহানি করা তার উদ্দেশ্য ছিল না। সে চেয়েছিল তাঁর দামি মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিতে। তরুণীর সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময়েই সে তাঁর মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয়। ভয় পেয়ে তরুণী ট্রেন থেকে ঝাঁপিয়ে ছিটকে পড়েন লিলুয়ার দিকের বেলুড় স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে। ট্রেন যখন প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্ত পেরিয়েছে, তখন দেবশঙ্করও চলন্ত ট্রেন থেকে লাফিয়ে নেমে যায়।
ধৃত দেবশঙ্কর সাহু। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
রেল পুলিশের দাবি, দুষ্কৃতী জানিয়েছে, শ্রীরামপুরের এক যুবকের কাছে সে মোবাইলটি বিক্রি করেছে। সেই সূত্রে শ্রীরামপুরের ওই যুবকের খোঁজ শুরু করছে রেল পুলিশ।
দেবশঙ্কর অবশ্য পুলিশের খাতায় পরিচিত নাম। রেল পুলিশ সূত্রের খবর, তার বিরুদ্ধে হুগলির সিঙ্গুর থানা এলাকায় ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে। ওই অভিযোগে তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। আবার, বিভিন্ন লোকাল ট্রেনের মহিলা কামরায় উঠে চুরি ছিনতাইয়েরও অভিযোগ রয়েছে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে।
২১ জুলাই বিকেলে বেলুড় স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্ত থেকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয় এক তরুণীকে। আসানসোলের বাসিন্দা ওই তরুণী রেল পুলিশকে জানান, মহিলা কামরায় তাঁকে একা পেয়ে এক দুষ্কৃতী জড়িয়ে ধরে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করছিল। তার হাত থেকে বাঁচতে তিনি চলন্ত ট্রেনের মহিলা কামরার আপৎকালীন জানলা খুলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মাথায় ও হাতে গুরুতর চোট পান তিনি। তাঁকে ভর্তি করা হয় কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে। সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী ওই তরুণী এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রেল পুলিশকে দিয়ে তদন্ত শুরু করান রাজ্য পুলিশের ডিজি।
কী করে ধরা পড়ল দেবশঙ্কর?
হাওড়ার রেল পুলিশ সুপার মিলনকান্ত দাস জানান, ধৃত ব্যক্তি প্রায় মিনিটি দশেক ওইকামরায় থাকায় তরুণী নিখুঁত ভাবে দেবশঙ্করের চেহারার বিবরণ, পোশাকের রং পুলিশকে জানান। সেই মতো দুষ্কৃতীর ছবি আঁকানো হয় প্রশিক্ষক গোয়েন্দা শিল্পী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে। শুক্রবার ছবিটি (স্কেচ) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতেই অন্য এক দুষ্কৃতী তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের এক জনকে ফোন করে জানায়, যার ছবি কাগজে বেরিয়েছে, তার নাম দেবশঙ্কর। তাকে সে চেনে বাড়ি উত্তরপাড়ার মাখলায়।
রেল পুলিশ জানায়, মাখলায় যেখানে মোটরচালিত ভ্যানের স্ট্যান্ড রয়েছে সেখানে গিয়েও ওই দেবশঙ্করের ছবি দেখানো হয়। তাতেই পুলিশ জানতে পারে, ঘটনার দিন অর্থাৎ ২১ জুলাই এবং তার পরের দিন সে ভ্যান চালায়নি। তার বাড়িতে লোক পাঠিয়ে পুলিশ জানতে পারে, মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সে বাড়িতেও ছিল না। শুক্রবার ভোরে সে বাড়িতে ফিরতেই পুলিশের কাছে খবর যায়। এর পর থেকেই তার উপর নজর রাখতে শুরু করে পুলিশ। অবশেষে রাত ৮টা নাগাদ উত্তরপাড়া স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়াতেই তাকে ঘিরে ফেলে পুলিশ।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.