কামদুনি-কাণ্ডে ফরেন্সিক রিপোর্ট মিলল
ধর্ষক সইফুলই, বাকিদেরও একই ধারা দেবে সিআইডি
কামদুনি-কাণ্ডে চার্জশিট জমা দেওয়ার মাসখানেক পরে অবশেষে কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির ‘ডিএনএ প্রোফাইল’ রিপোর্ট পৌঁছল সিআইডি-র হাতে। সেই পরীক্ষায় ছাত্রীর দেহ ও পোশাকের নমুনায় অন্যতম অভিযুক্ত সইফুল আলিরই বীর্যের অস্তিত্ব মিলেছে বলে তদন্তকারী সংস্থার দাবি। সিআইডি-র এক কর্তা শনিবার বলেন, “ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ধৃত আট জনেরই নখ, চুল, চামড়া, বীর্য, রক্ত এবং সে দিনের পোশাকের ৫৭টি নমুনা কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছিল। তারা জানিয়েছে, ওই ছাত্রীর পোশাকে শুধু সইফুলেরই বীর্যের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে।”
তা হলে বাকিরা কি ধর্ষণ-কাণ্ডে জড়িত নয়? সিআইডি বলছে, নিহতের দেহে ও পোশাকে এক জনের বীর্যের নমুনা পাওয়া গিয়েছে মানেই সে-ই কেবল দোষী, তা নয়। ওই ষড়যন্ত্রে অন্যরাও একই ভাবে দোষী বলে ইতিমধ্যেই আমরা চার্জশিটে জানিয়েছি। সিআইডি সূত্রের বক্তব্য, গণধর্ষণের সংজ্ঞাটাই এখন বদলে গিয়েছে। সেই সঙ্গে বদলেছে সংশ্লিষ্ট আইনও। তাতে ধর্ষণে সাহায্য করা, দলগত ভাবে কাউকে জোর করে ধর্ষণে বাধ্য করা কিংবা অপরাধের সময়ে ঘটনাস্থলে হাজির থাকা ধর্ষণেরই নামান্তর। রাজ্যের এক পুলিশকর্তা বলেন, “এ ক্ষেত্রে মূলত অভিযুক্তদের উদ্দেশ্য বিবেচনা করা হয়। কেউ যদি ধর্ষণের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেও বাধা না দেয় বা পুলিশকে না জানায়, তা হলে ধরেই নেওয়া হয়, ওই অপরাধের পিছনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মদত আছে।” কামদুনির প্রসঙ্গ টেনে ওই পুলিশকর্তার ব্যাখ্যা, পরবর্তী কালে জেরায় অভিযুক্তেরা একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজের অপরাধ লঘু করার চেষ্টা করলেও তাদের কেউই ঘটনার পরে পুলিশকে বিষয়টি জানায়নি। তার মানে, সকলেই বিষয়টি চেপে যেতে চেয়েছিল। সেটাই যে উদ্দেশ্য ছিল, তার প্রমাণ, ধর্ষণের পরে ছাত্রীর অচেতন দেহ পাচারে সইফুল ছাড়াও বাকিরাও হাত লাগায়। আইন এই ঘটনাকে সঙ্ঘবদ্ধ ষড়যন্ত্র বলেই মনে করে বলে জানান ওই পুলিশকর্তা।
বারাসত আদালতে অতিরিক্ত চার্জশিটের সঙ্গে রাজ্য ফরেন্সিক গবেষণাগারের যে রিপোর্ট সিআইডি জমা দিয়েছিল, তাতেও ওই ছাত্রীর দেহে নখের আঁচড়ের অস্তিত্ব মিলেছিল। কয়েক জনের মাথার চুলও নিহত ছাত্রীর পোশাকে লেগে থাকার প্রমাণ ছিল। এক পুলিশকর্তা বলেন, “কোনও মহিলার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাঁর সঙ্গে যৌন সংসর্গের চেষ্টা হলে তিনি নিজেকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করবেন, এটাই ধরে নেওয়া হয়। যেমন, চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিলে মৃত্যু হতে পারে জেনেও শ্লীলতাহানির হাত থেকে বাঁচতে ক’দিন আগেই বেলুড় স্টেশনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এক যুবতী। তাই কামদুনির মেয়েটি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, এটা মাথায় রেখেই অভিযুক্তদের দেহের ক্ষতচিহ্নের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, মেয়েটির সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময়েই যে অভিযুক্তদের দেহে ক্ষতচিহ্নগুলি হয়েছিল, ফরেন্সিক রিপোর্ট তারই ইঙ্গিত দিয়েছে। সিআইডি-র আইজি বিনীত গোয়েল বলেন, “কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের রিপোর্ট এ বার অন্য একটি অতিরিক্ত চার্জশিটের সঙ্গে জুড়ে আদালতে জমা দেওয়া হবে।”
৭ জুন কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার সময় কামদুনির ছাত্রীকে একটি পাঁচিল ঘেরা এলাকায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে খুন করে এক দল দুষ্কৃতী। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সইফুল আলি, আনসার আলি, ইমানুল মোল্লা, ভুট্টো মোল্লা, গোপাল নস্কর, ভোলানাথ নস্কর, নূর আলি ও আমিন আলি নামে আট জনকে পুলিশ ধরলেও এখনও ফেরার মহম্মদ রফিক নামে এফআইআরে নাম থাকা এক অভিযুক্ত।
বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শেষ করে চার্জশিট জমা দিতে গিয়েই বিতর্কে জড়ায় সিআইডি। ২৯ জুন বারাসত আদালতে তদন্তকারী যে চার্জশিট পেশ করে, সেখানে অভিযুক্ত ছ’জনের নাম রাখা হলেও বাদ দেওয়া হয় ধৃত আমিন, নূর ও পলাতক রফিকের নাম। ফরেন্সিক রিপোর্টও ওই চার্জশিটের সঙ্গে ছিল না। তাতেই আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়েন তদন্তকারী অফিসারেরা। চার্জশিটে বহু অসঙ্গতির নমুনা তুলে তা সংশোধন করে ফের আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। সেই নির্দেশ মেনে পরবর্তী কালে ওই তিন জনের নামও চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করে সিআইডি।
তার আগেই অবশ্য মূল চার্জশিটে সিআইডি বলেছিল, সইফুল আলি-ই একা ওই ছাত্রীকে পাঁচিলঘেরা ডেরায় টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও খুন করেছিল। ঘটনার পরে বাকিরা ঘটনাস্থলে এসেছিল ও মৃতদেহ পাচারে সইফুলকে সাহায্য করেছিল। কিন্তু সিআইডি-র সেই দাবি মানছেন না কামদুনির মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, আনসার আলিকে তাঁরা ঘটনাস্থলেই হাতেনাতে ধরেছিলেন। কিন্তু রিপোর্টে শুধু সইফুলকেই মূল দোষী হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
কামদুনির দুই প্রতিবাদী চরিত্র মৌসুমি কয়াল ও টুম্পা কয়াল এ দিনও বলেন, “রাজ্যবাসী এই তদন্তের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সিআইডি যা বলছে, তা তদন্তের মোড় ঘোরানোরই চেষ্টা বলে আমরা মনে করছি।” সিআইডির তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিহত ছাত্রীর বাড়ির লোকও। মেয়েটির বাবা এ দিন বলেন, “যে সিআইডি হাইকোর্টে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছিল, তার রিপোর্টে আমাদের আর কোনও আস্থা নেই। আমরা সিবিআই তদন্তই চাই।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.