জিটি রোড
পদে পদে মরণফাঁদ, সারাই নিয়ে তরজা
কার জল কোথায় গড়ায়, তা নিয়েই চাপান-উতোর। তাতেই কার্যত চাপা পড়েছে জিটি রোডের ভাগ্য!
হাওড়া পুরসভা বলছে, জমা জল বার করার জন্য নতুন নিকাশি নালার পরিকল্পনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আবার বালি পুরসভা বলছে, তাদের এলাকার জমা জল বেরোনোর জন্য যে নিকাশি নালা রয়েছে, তার দায়িত্ব হাওড়া পুরসভার। তাই জল জমার বিষয়ে যা করণীয়, তা হাওড়াকেই করতে হবে। আর এই দুই পুরসভার নিকাশি ব্যবস্থা ও উদাসীনতাকে দায়ী করে স্থায়ী ভাবে রাস্তা সারানো সম্ভব নয় বলেই সাফ জানিয়েছেন পূর্ত দফতরের কর্তারা।
যদিও এই জল জমাকেই রাস্তার খারাপ অবস্থার জন্য মূল কারণ বলে মনে করেন নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ইঞ্জিনিয়ারেরা। দুর্গাপুরের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষক তথা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার অলোক সরকারের মতে, “ভারী গাড়ির চাপে পিচ বসে গিয়ে রাস্তায় ফাটল হয়। জমা জল সেই ফাটল দিয়েই ভিতরে ঢুকে রাস্তার ‘ফাউন্ডেশন বডি’-কে নষ্ট করে দেয়। তাতে কোনও সময়ে রাস্তার নীচে থাকা বোল্ডার ভেঙে যায়, কখনও আবার তা সরে যায়। তার উপরে প্রতি মুহূর্তে ভারী জিনিসের চাপেই রাস্তায় গর্ত হয়।” তবে রাস্তায় পিচ করার সময়ে গুনগতমান বজায় না রাখার জন্যই জল জমে পিচ বসে যায় বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা। অনিলবাবুই বলেন, “যে উচ্চ তাপমাত্রায় রাস্তার পিচ করতে হয়, সেই তাপমাত্রা ভারতের কোথাও মেনে চলা হয় না। তাই পিচ করা হলেও তার বাঁধন ক্ষমতা কমে যায়।”
হাওড়ার কাজীপাড়া থেকে বালি খাল পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিমি এলাকা জুড়ে রয়েছে এই জিটি রোড। প্রতি বছর বর্ষার শুরুতেই গোটা রাস্তা জুড়ে তৈরি হয় খানাখন্দ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, জিটি রোডের বেলুড় ডনবস্কো মোড়, বজরংবলী, লিলুয়া টি এল জয়সোয়াল হাসপাতাল মোড় প্রায় এই পাঁচশো মিটার রাস্তায় প্রতি বছরই মরণফাঁদ তৈরি হয়। হাওড়া সিটি পুলিশের তথ্য বলছে, প্রতিদিন গড়ে কয়েক হাজার গাড়ি যাচ্ছে এই পথে। এখানেই রয়েছে তিনটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, কলেজ, অফিস, ব্যাঙ্ক।
পিচ উঠে তিনটি জায়গাতেই তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। বর্ষার জল জমে তা ছোটখাটো পুকুরে পরিণত হয়েছে। বাসিন্দাদের কথায়, জল জমে থাকায় গর্তের ব্যাপ্তি বোঝা দায়। ফলে প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এক ট্রাফিক পুলিশকর্মীর কথায়, “সব থেকে ভয় হয় স্কুল ছুটির সময়ে। ভাঙা রাস্তায় ছুটে চলা যানবাহনের মধ্যেই অতি সতর্ক হয়ে পড়ুয়াদের রাস্তা পার করতে হয়।” সম্প্রতি এক স্কুলছাত্র সাইকেলে চেপে যাওয়ার সময়ে গর্তে পড়ে লরির ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে মারা যায়। আবার বেহাল রাস্তার প্রতিবাদে স্থানীয়দের সঙ্গে অবরোধে সামিল হন ক্রিকেটার লক্ষ্মীরতন শুক্ল।
রাস্তা সারানো নিয়ে গত বৃহস্পতিবার পূর্ত দফতর, হাওড়া জেলা প্রশাসন, হাওড়া পুরসভা ও বালি পুরসভার কর্তাদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, আপাতত রাস্তায় জোড়াতালি দেওয়া হলেও দীর্ঘস্থায়ী মেরমতির দায় নিতে রাজি হয়নি পূর্ত দফতর। দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার করুণ দে বলেন, “রাস্তার দু’পাশের নর্দমা উঁচু। দীর্ঘ দিন তা সাফাই হয়নি। ফলে গঙ্গার জোয়ার কিংবা বর্ষার জল সহজেই রাস্তায় জমে যাচ্ছে। তাই রাস্তা দ্রুত খারাপ হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “দুই পুরসভা যতক্ষণ না নিকাশি নালা ঠিক করবে, জল জমা বন্ধ না হবে, ততক্ষণ রাস্তার মেরামতির স্থায়িত্ব নিয়ে নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়।”
অভিযোগ অস্বীকার করে হাওড়া পুরসভার চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবপ্রসাদ দত্ত জানান, যে জায়গাগুলিতে রাস্তা খারাপ, সেখানকার নিকাশির দায়িত্ব বালি পুরসভার। প্রতি বছর ওই এলাকায় যে জল জমে, তা ধারণ করার মতো ক্ষমতা কেএমডব্লিউএস-এর স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের নেই। তিনি বলেন, “নর্দমাগুলির কোনও অভিমুখ গঙ্গার দিকে নয়। গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানে কাজ করার সময়ে সব নর্দমাই ট্রিটমেন্ট প্লান্টের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিকাশি নালা সম্পর্কে নতুন করে পরিকল্পনা করা আমাদের পক্ষেও সম্ভব নয়।”
বালির পুর-চেয়ারম্যান অরুণাভ লাহিড়ী বলেন, “আমরা নালা সাফাই করেছি। কিন্তু আমাদের নিকাশি নালার জল হাওড়া পুরসভার নালা দিয়েই যায়। তাই জল জমে থাকার বিষয়ে বালির কিছু করার নেই।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.