ক্যাপ্টেন কুল বিশ্রামে। টিম ইন্ডিয়ার দায়িত্বে এখন এক জন ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’। রানের জন্য হোক বা মাঠের বাইরের কীর্তির জন্য, বিরাট কোহলি প্রায় সব সময়ই শিরোনামে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে টিমকে তোলার পরে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে গোটা সিরিজেই অধিনায়ক কোহলি। যে সিরিজের প্রথম ম্যাচে পনেরো নম্বর সেঞ্চুরি করলেন কোহলি। সইদ আনওয়ারের রেকর্ড টপকে কোহলিই এখন সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে পনেরোটা সেঞ্চুরির মালিক। কোহলির প্রশংসায় যখন গোটা দেশ উন্মত্ত, ঠিক তখনই জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচে আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়লেন তিনি। রবিবার যাদের হারালে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৩-০ জিতে নেওয়ার সুযোগ কোহলির ভারতের সামনে। |
|
|
ম্যান সিটিতে থাকার সময় কোচ মানচিনির সঙ্গে হাতাহাতি। সতীর্থকে লক্ষ্য করে মাটি ছোড়া,
বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটানো। সর্বশেষ ঘটনা, মিলানের সাপোর্ট স্টাফের ক্যামেরা কেড়ে
নেওয়ার চেষ্টা (পাশে ছবি)। এই মুহূর্তে বিশ্ব ফুটবলে বিতর্কের অন্যতম মুখ হলেন মারিও বালোতেলি। |
|
ক্রিকেট মাঠে মেজাজ হারানো নতুন কিছু নয়। বিরাটের কাছে তো নয়ই। অস্ট্রেলিয়া সফরে দর্শকদের দিকে অশালীন ইঙ্গিত করা আছে। ক্যাচ বা সেঞ্চুরির উৎসবের সময়ে গালাগালি করা আছে। আইপিএল সিক্সে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর নেতৃত্বে থাকাকালীন কলকাতা নাইট রাইডার্স ক্যাপ্টেন এবং তাঁর দিল্লি সতীর্থ গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে প্রকাশ্য ঝামেলাও আছে। কোহলির মেজাজ হারানোর অভ্যেস অনেককেই মনে করিয়ে দিচ্ছে ইতালীয় স্ট্রাইকার মারিও বালোতেলির কথা।
তাঁর ছোটবেলার কোচ রাজকুমার শর্মা কিন্তু কোহলির পাশে দাঁড়াচ্ছেন। ছাত্র নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “এমনিতেই বিরাট আক্রমণাত্মক প্লেয়ার। মেজাজটা ওর সহজাত, আর ওর অন্যতম শক্তি। এটাকে কাজে লাগিয়ে বিরাট দুর্দান্ত পারফর্মও করেছে।” সঙ্গে সংযোজন, “হ্যাঁ, মাঝে মাঝে ব্যাপারটা একটু বেশি আগ্রাসী হয়ে যায়। কিন্তু যে প্লেয়াররা চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসে, তারা এ রকমই হয়। জাভেদ মিয়াঁদাদ যেমন। সব সময় চার্জড থাকত, আর সেটা ওর খেলাটাকে আরও ভাল করত।” |
ভারতীয় ক্রিকেটের জেন ওয়াইয়ের মুখ বিরাট কোহলিকেও বিতর্ক
তাড়া করেছে। মাঠে সতীর্থদের সঙ্গে ঝামেলা করা থেকে আম্পায়ারদের
সঙ্গে তকাতর্কিমাথা গরমের উদাহরণ এখানেও কম নেই। |
নিজের কেরিয়ারে কখনওই চ্যালেঞ্জ থেকে পিছিয়ে আসতেন না মিয়াঁদাদ। কথা বলার সময়ও রাখঢাক করতেন না। তা হলে কি মেন ইন ব্লু তাদের নিজস্ব ‘মিয়াঁদাদ’ পেয়ে গেল? রাজকুমারের কথায়, “বিরাট এমন এক জন প্লেয়ার যে চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসে। অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ডের মতো বড় টিম বা চিরশত্রু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ও সব সময় দারুণ কিছু করতে চায়। যে কোনও বড় প্লেয়ারই বড় মঞ্চে নামার আগে নিজেকে এ ভাবে তাতিয়ে নেয়।” সঙ্গে শিষ্যের প্রতি তাঁর সতর্কতাবাণী, “আগ্রাসনটা বাড়াবাড়ি রকমের হয়ে গেলে অবশ্যই সেটাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। যদিও আমার মনে হয় না বিরাট কখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়েছে। এটা কিন্তু ওর কাছে ব্যক্তিগত কোনও ব্যাপার নয়। কারণ এমনিতে বিরাট খুব বিনয়ী।”
ক্রিকেটবিশ্বের কেউ কেউ আবার মনে করেন, প্রতিটা ম্যাচে প্রত্যাশার বিশাল চাপ ঘাড়ে নিয়ে নামতে হয় বলেই বিরাটদের প্রজন্ম এত আগ্রাসী। দিল্লিতে কোহলির রঞ্জি কোচ বিজয় দাহিয়া যেমন বলছিলেন, “এই তরুণ ক্রিকেটারদের উপর বড্ড বেশি চাপ দেওয়া হয়। হঠাৎ করেই ওরা প্রচারের আলোয় চলে আসে।” তাঁর আরও ব্যাখ্যা, “একটা ঘটনাকে ম্যাচের প্রেক্ষিতের বাইরে এনে বিচার করাটা ঠিক নয়। আর এ রকম ঘটনা তো খেলাটারই অংশ। বিরাটকে দেখে বেশি আগ্রাসী মনে হতে পারে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, ভারতীয় ক্রিকেটে এখন যত তরুণ ক্রিকেটার আছে, তাদের মধ্যে বিরাটই সবচেয়ে বেশি পরিণত। মানসিক ভাবে ধীরস্থির।” রঞ্জি টিমের ছাত্রকে দাহিয়ার টোটকা? “ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কিন্তু বিরাটই। তাই ওর পাশে দাঁড়ানোটা ভীষণ জরুরি।” |