যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এখন ঘরের মেয়ে কবে ঘরে ফেরে তারই অপেক্ষায় দিন গুনছেন রাজারহাটের বাদামতলার এক দম্পতি।
ফুলবাগানে লাভলি চাড্ডাদের বাড়িতে নির্যাতিতা কিশোরীর ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই মানসিক যন্ত্রণায় দিন কাটছে মাঝবয়সী স্বামী-স্ত্রীর। তাঁরা ওই কিশোরীর মাসি ও মেসো। পারিবারিক অশান্তির আবহে এক বছরের একরত্তি ওই মেয়েকে মাসি-মেসোর কাছেই রেখে গিয়েছিলেন তার মা। দীর্ঘদিন সেখানেই ছিল মেয়েটি। তার মাসির কথায়, “আমি বলতাম, ও হল আমার বড় মেয়ে। বড় হওয়ার সময়টায় কেন যে ওকে কাছছাড়া করলাম, এটা ভেবে এখন মানসিক অশান্তিতে ভুগছি।”
মেয়েকে নির্যাতনের অভিযোগে তার নিজের মাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মাসি-মেসোর উপরে নানা অভিমানের কথাও পুলিশকে সে জানিয়েছে। কিন্তু পুলিশও বলছে, মাসি-মেসো শাসন করেছেন মেয়ের ভালর জন্যই। মেয়েরও এখনও মাসি-মেসোর উপরে টান রয়েছে।
ওই কিশোরীটি খারাপ লোকের পাল্লায় পড়ে নানা রকম কষ্ট পেলেও এই মাসি-মেসোর কাছেই সে অভিভাবকের পরিচর্যা পেয়েছিল। মেয়েটির মায়ের বাবাও জানালেন, “ওর যখন এক বছর বয়স, তখনই মেয়েটির মা ওকে মাসির কাছে রেখে যায়। মাসি-মেসোই ওকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছে। নিজের সন্তানকে মা-বাবারা যেমন বকেন, তেমনই দরকারে ওরা ওকে শাসনও করত।”
শনিবার দুপুরে নিজের বাড়িতে বসে কাছছাড়া মেয়ের ছোটবেলার গল্পেই বিভোর ছিলেন তার মামনি অর্থাৎ মাসি। “নামেই বোনঝি! ও তো আমার বড় মেয়েই ছিল! ওকে আমাদের বাড়িতে ওর মা যখন রেখে গেল, তখনও আমার নিজের মেয়ে জন্মায়নি। ওকে নিয়েই মশগুল থাকতাম।” বরাবরই টানাটানির সংসার দম্পতির। স্বামী সামান্য গাড়ির চালক। নিজেদের সন্তান জন্মালেও ‘বড় মেয়ে’-র আদর এতটুকু কমেনি বলে জানালেন তাঁরা। মাসি বলছিলেন, “ছোট থেকেই খুব আঁকার নেশা ছিল আমার বোনঝির। তাই ও ক্লাস টু-তে পড়ার সময় ওকে আঁকার স্কুলেও ভর্তি করে দিই আমরা।” পরে রাজারহাট শিক্ষা নিকেতন ফর গার্লস স্কুলের ওই ছাত্রীকে টিউশন পড়ানোরও ব্যবস্থা করেন মাসি-মেসোই।
কিন্তু মেয়ে বড় হয়ে ওঠার সময়ে টুকটাক সমস্যাও হচ্ছিল। মাসি বলছিলেন, “স্কুলে পড়ার সময়ে ওকে মোবাইল কিনে দেওয়ায় আমার মত ছিল না। কিন্তু ওর মেসোই বলল, স্কুলের অন্য বন্ধুদের সবার মোবাইল রয়েছে, ওরও তো শখ হবেই!” ওই দম্পতির প্রতিবেশীরাও বলেছেন মেয়েকে আগলে রাখার কথা। পাড়ার এক মহিলা জানান, মেয়ে মোবাইলে বেশি কথা বললেই ওর মাসি বকাবকি করত! মেয়েটি তখন নবম শ্রেণির ছাত্রী। ওই পড়শি মহিলার কথায়, “টিউশন থেকে ফেরা বা স্কুল ছুটির সময়ে ওর মাসি ঠায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করত!” মাসির গলা বুজে আসে, অনেক চেষ্টা করেও মেয়েকে বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে পারলাম না।”
মাসির দাবি, তাঁর বোনঝি আইনজীবী লাভলি চাড্ডার সংস্পর্শে আসার পরেও তাঁদের মনে সংশয় ছিল। তিনি বলেন, “মেয়ে বার বার বলত দিদি (লাভলি) খুব ভাল! তবু আমি সাবধান করতাম। বলতাম, দিনকাল ভাল নয়। মানুষকে সহজেই বিশ্বাস করিস না।” মেয়েটির মেসোরও দাবি, “আমরা বলেছিলাম, আমাদের বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় যাস না! কিন্তু সে কথা শোনেনি। এই নিয়েই অশান্তি হত!”
আপাতত একটাই আশা ওই কিশোরীর মাসি-মেসোর। মাসি বলেন, “অতটুকু মেয়ের সঙ্গে যারা এমন নোংরা কাজ করল, তাদের চরম শাস্তি চাই।” এই চাওয়াটুকুর সঙ্গে একটা অপেক্ষাও আছে দম্পতির জীবনে। চোখের জল মুছে মাসি বললেন, “আমার মেয়ে যা-ই ভুল করুক, মা হয়ে আমি আর কোনও ভুল করছি না! ও বাড়ি ফিরলে ওকে প্রথমেই বুকে জড়িয়ে ধরব। আর কোনও দিন কাছছাড়া করব না।” |