‘গরিবির’ রাজনীতিতে রাতারাতি ভোল পাল্টে ফেলল কংগ্রেস। দেশে গরিবের সংখ্যা কমার ব্যাপারে যোজনা কমিশনের পরিসংখ্যান হাতে নিয়ে তিন দিন আগেই কৃতিত্ব কুড়োতে নেমেছিলেন কংগ্রেস নেতারা। তা নিয়ে চতুর্দিক থেকে সমালোচনার মুখে পড়ে আজ যোজনা কমিশনের সেই সংখ্যাতত্ত্বকেই চ্যালেঞ্জ জানালেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। এ ব্যাপারে দলের সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ আজ প্রকাশ্যেই বলেন, যোজনা কমিশন এই সব হিসাব কী করে পায়, সেটাই বোধগম্য নয়। মানুষের দারিদ্র কেবল সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে হিসাব করলে চলবে না, অপুষ্টির পরিমাণই তার সূচক হওয়া উচিত।
সম্প্রতি যোজনা কমিশন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে জানায়, দেশে দরিদ্রের সংখ্যা কমে ২২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে তেন্ডুলকর কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে কমিশন এও জানায়, শহরে মাথাপিছু দিনে ৩৩ টাকা এবং গ্রামে ২৭ টাকা খরচ করতে পারলেই তাকে আর গরিব বলে বিবেচনা করা যাবে না। যোজনা কমিশনের এই সংখ্যাতত্ত্ব হাতে নিয়েই ভোটের আগে রাজনৈতিক কৃতিত্ব নিতে নেমেছিল কংগ্রেস। এমনকী কমিশনের রিপোর্টের পক্ষে সওয়াল করে কংগ্রেসের নেতারা এও বলতে শুরু করেছিলেন, মুম্বইয়ে ১২ টাকায় এবং দিল্লিতে মাত্র পাঁচ টাকাতেই পেট ভরে খাওয়া যায়! কংগ্রেস নেতাদের সেই বেঁফাস মন্তব্য নিয়ে গত ৪৮ ঘণ্টা তুলকালাম চলে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে। সেই প্রেক্ষাপটে দিগ্বিজয় সিংহের আজকের মন্তব্যকে ক্ষত পূরণের চেষ্টা হিসাবেই দেখছেন অনেকে।
দিগ্বিজয় একা নন, যোজনা কমিশনের পরিসংখ্যানকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী কপিল সিব্বলও। তাঁর কথায়, “যোজনা কমিশনের গণনা প্রক্রিয়াতেই ভ্রান্তি। ৩৩ টাকা, ২৭ টাকা দূরস্থান, মাসে ৫ হাজার টাকাতেও পাঁচ জনের সংসার চলে না।” তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই অবস্থায় দারিদ্রের ওই সংখ্যাতত্ত্ব থেকে দূরত্ব বাড়াতে সচেষ্ট হয়েছেন মন্ত্রীরাও। যোজনা প্রতিমন্ত্রী রাজীব শুক্ল আজ বলেন, “রিপোর্টটি যোজনা কমিশন প্রস্তুত করেনি, করেছে তেন্ডুলকর কমিটি।” সেই সঙ্গে কৌশলে বিজেপি-কে আক্রমণ করে রাজীব এও বলেন, “বিজেপি জমানায় গরিবি ছিল আরও ভয়াবহ।”
দারিদ্র নিয়ে এই রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যেই খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প নিয়ে আজ দশ নম্বর জনপথে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিদের বৈঠকে ডেকেছিলেন রাহুল গাঁধী। সূত্রের খবর, দারিদ্র নিয়ে কংগ্রেস নেতাদের বেফাঁস মন্তব্য প্রসঙ্গে আজ রাহুল রীতিমতো অসন্তোষ প্রকাশ করেন। খাদ্য সুরক্ষা বিলকে সমর্থন করলেও কংগ্রেস নেতাদের মন্তব্যের আজ সমালোচনা করেছেন বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী। তাঁর বক্তব্য, “ওই নেতাদের সঙ্গে বাস্তবের কোনও যোগ নেই।”
পশ্চিমবঙ্গের তরফে আজ ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ও এআইসিসি-র সম্পাদক শুভঙ্কর সরকার। বৈঠকের পর তিনি বলেন, “রাজ্যে তৃণমূল সরকার খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প নিয়ে বেসুরো গাইতে শুরু করেছে। কিন্তু রাজ্যে প্রকল্পটি যথাযথ ভাবে রূপায়ণের জন্য রাজ্য জুড়ে প্রচার চালাবে কংগ্রেস। |