একটি দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু নতুন এক সমস্যার সামনে দাঁড় করিয়ে দিল বিমানসংস্থাগুলিকে।
বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে বিমানের দরজা খুলে রাখলে খোলা দরজার সঙ্গে সিঁড়ি বা র্যাম্প লাগানোর দাবি উঠছে। প্রতিটি বিমানসংস্থাই রোজ রাতে কলকাতায় গড়ে সাত-আটটি বিমান দাঁড় করিয়ে রাখে। কিন্তু প্রতিটির চারটি দরজায় লাগানোর মতো সিঁড়ি বা র্যাম্প তাদের নেই। দ্বিতীয়ত, যত সংখ্যক র্যাম্প বা সিঁড়ি রয়েছে তা এক দিক থেকে অন্য দিকে নিয়ে গিয়ে বিমানের খোলা দরজার সামনে লাগাতে গেলে সময় নষ্ট হবে। তাতে সময়সূচি মেনে বিমান চালাতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর তিনটি দরজা বন্ধ রেখে রাসায়নিক দিয়ে পরিষ্কার করাটা স্বাস্থ্যকর নয় বলে মনে করছেন বিমানসংস্থার কর্মীরাই।
এত দিন দরজা খুলে সেখানে আড়াআড়ি ভাবে (উদ্বোধনী ফিতে যে ভাবে লাগানো থাকে) একটি সেফ্টি বেল্ট লাগিয়ে সাফাইয়ের কাজ হতো। এমনকী ছোট-খাটো রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রেও ইঞ্জিনিয়ারেরা ওই একই ভাবে কাজ করতেন। কিন্তু, মঙ্গলবার রাত তিনটের সময়ে বিমানবন্দরে একটি বিমানের পিছনের দরজার সেফ্টি বেল্ট গলে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় ইন্ডিগোর কর্মী দেবাশিস দেবের। তার পর থেকেই বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। রাতে দাঁড়িয়ে থাকা বিমানের খোলা দরজায় শুধু সেফ্টি বেল্ট লাগাতে এখন রাজি নয় বিমানসংস্থাগুলি। ইন্ডিগোর তরফে বলা হয়েছে, পাঁচ মিনিটের জন্য দরজা খোলা রাখলেও সিঁড়ি বা র্যাম্প লাগাতে হবে। একই বক্তব্য অন্য সংস্থার কর্তাদেরও। কিন্তু কারওর হাতেই বেশি সিঁড়ি বা র্যাম্প না থাকায় সাফাইয়ের সময়ে একটির বেশি দরজা খুলে রাখা যাবে না বলে জানিয়েছেন কর্তারা। তাতেই আপত্তি উঠছে।
মঙ্গলবারের ঘটনার তদন্তে নেমে বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর কর্তারা খানিকটা বিভ্রান্ত। প্রশ্ন উঠেছে, সিঁড়ি বা র্যাম্প কম থাকায় কি এ বার থেকে একটি দরজা খুলে রেখে বিমানের ভিতরে পরিষ্কারের কাজ করবেন কর্মীরা?
রাতে দাঁড়িয়ে থাকা বিমানে বাতানুকুল ব্যবস্থা কাজ করে না। আর বিমানের ভিতর পরিষ্কার করতে ব্যবহৃত হয় কীটনাশক রাসায়নিক। এই সময়ে হাওয়া চলাচলের জন্য চারটি দরজা খুলে রাখলে সুবিধা হয়। বিমানসংস্থার এক অফিসারের কথায়, “একটা দরজা খুলে কীটনাশক মেশানো বাষ্প দিয়ে পরিষ্কার করলে রাসায়নিকের গন্ধ থেকে যেতে পারে। ভোরে সেই বিমানে উঠলে গন্ধ এসে লাগতে পারে যাত্রীদের নাকে।”
বিমানসংস্থার অফিসারদের কথায়, বিমানের দরজা খোলা থাকলে সেখানে সিঁড়ি বা র্যাম্প লাগাতে হবে এ রকম কোনও নির্দেশ ডিজিসিএ-এর নেই। নির্দেশ অনুযায়ী, সেফ্টি বেল্ট লাগালেই হবে। কিন্তু মাটি থেকে প্রায় ১৫ ফুট উপরে বিমানের দরজা কি একটি মাত্র সেফ্টি বেল্ট দিয়ে খোলা অরক্ষিত অবস্থায় রেখে দেওয়া যায়? দরজায় সিঁড়ি বা র্যাম্প লাগানো থাকলে দেবাশিস মাটিতে পড়ে যেতেন না।
এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, “বিমানের বাঁ দিকের দু’টি দরজা খুলে কাজ করা হয়। ডান দিকের দরজা দু’টি খোলা হয় খাবার ওঠানো ও রাতে পরিষ্কারের সময়ে। ডান দিকের দু’টি দরজা বন্ধ রেখে শুধু সামনের বাঁ দিকের দরজায় সিঁড়ি বা র্যাম্প লাগানো থাকলেও ছোট-খাটো কাজে পাঁচ মিনিটের জন্য হলেও পিছনের বাঁ দিকের দরজা খুলতে হবেই। তখন সেখানে সিঁড়ি বা র্যাম্প এনে লাগাতে হলে পাঁচ মিনিটের কাজ শেষ করতে ৪৫ মিনিট লাগবে।” ফলে বিমান ছাড়তেও দেরি হবে বলে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
ডিজিসিএ-এর তরফে বলা হয়েছে, তদন্ত করে সব দিক খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ডিজিসিএ-এর এক কর্তার কথায়, “নিরাপত্তাই অগ্রাধিকার হওয়ার কথা। সেখানে প্রয়োজনে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে।”
|