স্কুলে যাওয়ার পথে স্কুলবাস দুর্ঘটনায় জখম হয়েছিল এক চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। অভিযোগ, স্কুল-কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ওই ছাত্রের জখম নজরেই পড়েনি কারও। অনেক পরে নজরে এলেও শুধু মলম লাগিয়েই বাড়ি পাঠানো হয় তাকে। বাড়ি গিয়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ।
ঘটনাটি ডিপিএস (নিউ টাউন) স্কুলের। ওই ছাত্রের বাবা মৈনাক মিত্রের অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি ওই ছাত্রকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নিয়ে চলে যেতে বলেন। মৈনাকবাবুর বক্তব্য, প্রধান শিক্ষিকার ওই কথা শুনে তাঁরা ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। তাঁরা নিউ টাউন থানায় লিখিত আকারে বিষয়টি জানান। যদিও স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সোনালি সেন বলেন, “দুর্ঘটনায় কয়েক জন ছাত্রের সামান্য চোট লেগেছিল। তবে স্কুলে প্রতিটি ছাত্রেরই প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছে। টিসি নিয়ে চলে যাওয়ার কথা আমি বলিনি। আমরা কোনও ছাত্রকেই এ রকম বলি না।” |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, দুর্ঘটনাটি ঘটে বুধবার। লেকটাউনের কাছে স্কুলবাসটিকে একটি বেসরকারি বাস ধাক্কা মারে। পড়ুয়াদের কারও হাতে, কারও মাথায়, কারও পায়ে লাগে। মৈনাকবাবুর অভিযোগ, “আমার ছেলের কানে লেগেছিল। রক্তও পড়ছিল। কেউ নজরই দেননি।” মৈনাকবাবু জানান, সে দিন তাঁর ছেলের পরীক্ষা ছিল। তাঁর অভিযোগ, পরীক্ষা চলাকালীন এক শিক্ষিকা তাঁর ছেলের চোট দেখতে পেলেও তিনি সে দিকে নজর না দিয়ে পরীক্ষা শেষ করে তার পর প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে যেতে বলেন।
মৈনাকবাবু জানান, তাঁর ছেলে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য গেলে তাকে মলম লাগিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ছেলে বাড়ি ফিরে অসুস্থ বোধ করে ও বমি করে। তার সিটি স্ক্যান করানো হয়। দক্ষিণেশ্বরের বাড়ি থেকে ওই ছাত্র ফোনে বলে, “আন্টি পরীক্ষা শেষ করে ফার্স্ট এডের জন্য যেতে বলেন। সেখানে শুধু মলম লাগিয়ে দেয়।”
শুক্রবার দুপুরে ওই স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে মৈনাকবাবু বলেন, “স্কুলে প্রাথমিক চিকিৎসার কোনও পরিকাঠামোই নেই। বড় কিছু ঘটলে দায় কে নিত?” যদিও প্রধান শিক্ষিকার দাবি, “দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটি যখন স্কুলের সামনে আসে তখন শিক্ষিকরা সকলেই দাঁড়িয়েছিলেন। ওই ছেলেটির কানে নয়, কানের পাশে গাল চিরে যায়। আমাদের প্রশিক্ষিত নার্সরা ছেলেটির চিকিৎসা করেন। তাকে একদম সুস্থ অবস্থায় বাড়ি পাঠানো হয়েছিল।”
নিউ টাউনের ওই স্কুলে এর আগেও প্রাথমিক চিকিৎসার গাফিলতি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। কয়েক মাস আগে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আরিয়ান দত্তের গলায় খাবার আটকে যায়। স্কুলেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। সেই সময় স্কুলের প্রাথমিক চিকিৎসার পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যদিও স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “স্কুলের প্রাথমিক চিকিৎসার পরিকাঠামো খুবই ভাল। প্রশিক্ষিত নার্স স্কুলে রাখা হয়।” এ দিনে ঘটনা প্রসঙ্গে বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসিপি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “লিখিত আকারে একটি অভিযোগ মিলেছে। ঘটনাটি ঠিক কী ঘটেছিল তা খতিয়ে দেখা হবে।” |