বিমানের খোলা দরজা থেকে মাটিতে পড়ে মারা গেলেন ইন্ডিগো বিমান সংস্থার এক কর্মী। মঙ্গলবার রাত তিনটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতা বিমানবন্দরের ২৩ নম্বর বে-তে। মৃতের নাম দেবাশিস দেব (৩৫)। পুলিশ জানিয়েছে, দাঁড়িয়ে থাকা বিমানটির পিছনের গেটটি খোলা ছিল। কিন্তু সেই গেটের সঙ্গে কোনও সিঁড়ি বা র্যাম্প লাগানো ছিল না। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, অসাবধানতায় খোলা দরজা থেকে পড়ে যান দেবাশিস। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।
ঘটনার তদন্তে নেমেছে বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন’ (ডিজিসিএ)। প্রশ্ন উঠেছে, গেট খোলা থাকা অবস্থায় কেন কোনও সিঁড়ি বা র্যাম্প লাগানো ছিল না ওই বিমানে? ডিজিসিএ-র এক কর্তার কথায়, “কোনও জরুরি অবস্থার সময়ে সমুদ্রে বা মরুভূমিতে বিমান গিয়ে নামলে তখনই সিঁড়ি বা র্যাম্প ছাড়া বিমানের দরজা খোলার কথা। কিন্তু বিমানে যখন যাত্রী থাকে না তখন এই সব নিয়ম মানার ক্ষেত্রে বিমান সংস্থা ততটা গুরুত্ব দেয় না।” বিমান-মন্ত্রক সূত্রের খবর, এই ঘটনার জেরে শাস্তির মুখে পড়তে পারে ইন্ডিগো।
বিধাননগর কমিশনারেটের অতিরিক্ত ডিসি সন্তোষ নিম্বালকারও বলেন, “সিঁড়ি বা র্যাম্প না থাকার জন্য বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগে মামলা শুরু করেছে পুলিশ।” তবে বিমান সংস্থার দাবি, ইঞ্জিন বন্ধ করে বিমান যখন দাঁড়িয়ে থাকে, তখন দরজা খোলা রেখে কাজ করা যায়। সেই সময়ে দরজায় আড়াআড়ি ভাবে (উদ্বোধনী ফিতে যে ভাবে লাগানো থাকে) একটি সেফটি বেল্ট লাগানো থাকে। বিমান সংস্থার এক অফিসারের কথায়, “সেফটি বেল্ট লাগানো থাকলে আর র্যাম্প বা সিঁড়ি ব্যবহার করাটা জরুরি নয় বলেই আমরা জানি।”
বিমান সংস্থা সূত্রের আরও খবর, এক টানা দু’মাস ধরে রাতের ডিউটি করছিলেন দেবাশিস। এর ফলে তাঁর ক্লান্তি আসাটা স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন সহকর্মীরা। কিন্তু তাঁকে কেন একটানা দু’মাস ধরে রাতের ডিউটি দেওয়া হল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সংস্থার অন্দরমহলে। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, স্বেচ্ছায় রাতের ডিউটি নিয়েছিলেন দেবাশিস। সে কারণে সপ্তাহে দু’দিন করে ছুটিও দেওয়া হচ্ছিল তাঁকে।
বিমান সংস্থা সূত্রের খবর, প্রতি রাতে কলকাতায় ইন্ডিগোর প্রায় আটটি বিমান থাকে। ভোরে সেগুলি আলাদা আলাদা গন্তব্যে উড়ে যায়। যে বিমান থেকে পড়ে দেবাশিস মারা যান, বুধবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ সেটির ভুবনেশ্বর যাওয়ার কথা ছিল। বুধবার সকালে সেটি অবশ্য কলকাতায় বেশ কিছুক্ষণ আটকে থাকে। পুলিশ এসে তদন্ত করে। তার পরে সেই বিমানটি পাঠানো হয় দিল্লিতে। রাতে যে বিমানগুলি রাখা থাকে, সেগুলি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। পরিষ্কার করার পরে দেবাশিসবাবু ঘুরে ঘুরে তা পরীক্ষা করতেন। তাঁর হাতে থাকত একটি ক্যামেরা। কোথাও রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটি ধরা পড়লে সেই জায়গার ছবি তুলে রাখতেন। সে ছবি পাঠিয়ে দিতেন দিল্লিতে। পরের রাতে সেই বিমান যে বিমানবন্দরে থাকত, সেখানে দিল্লি মারফত পৌঁছে যেত ওই ছবি। রক্ষণাবেক্ষণের কাজে তা সাহায্য করত সেখানকার বিমানকর্মীদের।
মঙ্গলবার রাত তিনটের সময়ে এই ঘটনা যখন ঘটে, তখন ওই বিমানে দেবাশিস ছাড়াও আরও তিন জন কর্মী ছিলেন। পুলিশের সন্দেহ, রাতে বিমানের পিছনের দরজার কাছে কোথাও নোংরা দেখে ছবি তুলতে যান দেবাশিস। সেফটি বেল্ট থাকলেও দরজার বেশির ভাগ অংশই খোলা থাকে। পুলিশের সন্দেহ, নিচু হয়ে বসে ছবি তুলতে গিয়ে সেই ফাঁকা জায়গা দিয়ে বেকায়দায় গলে পড়ে যান তিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয় তাঁকে। ১৫-১৬ ফুট উচ্চতা থেকে পড়ার ফলেই এই মৃত্যু বলে ধারণা চিকিৎসকদের।
সূত্রের খবর, দেবাশিস ছয় বছর ধরে কাজ করছিলেন ইন্ডিগো বিমান সংস্থায়। বেশ কিছু দিন ছিলেন বিমান সংস্থার ট্রাফিক বিভাগে। পরে বিমানের ভিতরের পরিষ্কার সংক্রান্ত কাজে নিয়োগ করা হয় তাঁকে। দেবাশিস ছিলেন এগ্জিকিউটিভ পদে। বুধবার তাঁর দেহ ময়না-তদন্তের পরে তুলে দেওয়া হয় বাড়ির লোকের হাতে। ঘটনার খবর পেয়ে দিল্লি থেকে এ দিনই চলে আসেন ইন্ডিগোর বেশ কিছু উচ্চপদস্থ কর্তা। দেবাশিসের পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সংস্থার তরফে। |