ছপরা কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত ধর্মসতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মীনা দেবীর পলিগ্রাফ পরীক্ষা করাবে বিহার পুলিশ। আজ আদালত তাদের সেই অনুমতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষ তদন্তকারী দলের (স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম)-এর প্রধান তথা সারনের পুলিশ সুপার সুজিত কুমার। ঘটনার পর থেকে ফেরার মীনা দেবীকে গত কালই পুলিশ ছপরায় গ্রেফতার করে। আজ তাঁকে ছপরার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তোলা হয়। সিজিএম অনিল ঝা তাঁর ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি, মীনা দেবী নিজে এই মিড ডে মিল কেলেঙ্কারির তদন্ত সিবিআইকে দিয়ে করানোর দাবি তুলেছেন।
ধরা পড়ার আগে, গত কালই স্থানীয় একটি চ্যানেলকে মীনা দেবী জানিয়েছেন, “এই ঘটনায় আমার আত্মীয়ের বাচ্চাও মারা গিয়েছে। তা হলে কেন আমি এই কাজ করতে যাব।” সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানোর দাবি জানিয়ে মীনা দেবী বলেন, “রাজ্য পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করবে না। কারণ তারা আগে থেকেই আমার বিরুদ্ধে একটা ধারণা তৈরি করে রেখেছে।”
সে দিন কী ঘটেছিল তা বলতে গিয়ে প্রধান শিক্ষিকা জানান, ‘‘খাওয়ার পরে বাচ্চাদের পেটে ব্যাথা হয়। তারপর ওরা বমি করতে থাকে। যে ক’জন বাচ্চা সেই সময় অসুস্থ হয়েছিল তাদের আমি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।” মীনাদেবী বলেছেন, “আমি প্রতিদিন রান্নার তেল এনে দিই। সে দিনও সর্ষের তেল এনে দিয়েছিলাম।” তবে সেই খাবার তিনি যে খাননি তা জানিয়ে বলেন, “আমি কোনও দিনই স্কুলের খাবার খেতাম না।” নিয়ম অনুযায়ী এই খাবার তাঁর খাওয়ার কথা, তা হলে কেন তিনি খেলেন না? তার কোনও জবাব অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা দেননি। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, “কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই। তাঁর স্বামীর কোনও দোকানও নেই। বাজারের একটি দোকান থেকে তেল আনা হয়েছিল।”
ছপরার পুলিশ সুপার সুজিত কুমার জানান, গ্রেফতারের পর মীনা দেবীকে লাগাতার জেরা করা হয়েছে। জেরায় তিনি যা বলেছেন তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। তবে দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তির নাম এখনও পাওয়া যায়নি। যদিও মীনা দেবী তাঁর জায়ের দিকে সন্দেহের তির ছুড়েছেন। ঘটনার কয়েকদিন আগে নাকি পারিবারিক ঝগড়ার সময় তাঁর জা তাঁকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়েছিলেন। পুলিশ সব দিকই খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, “পলিগ্রাফ পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি পেয়েছি। এ বার প্রয়োজন হলে অভিযুক্তকে ফের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার জন্য আমরা আদালতে আবেদন জানাবো।”
আজ থেকে রাজ্যের প্রায় তিন লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী মিড ডে মিলে অংশ না নেওয়ায় কয়েক লক্ষ পড়ুয়া খাবার পায়নি। রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষক সঙ্ঘ ২৫ জুলাই থেকে মিড ডে মিলের কাজে অংশ না নেওয়ার কথা বলেছিল। বিষাক্ত মিড ডে মিল খেয়ে ২৩টি বাচ্চার মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান শিক্ষিকা মীনা দেবী অভিযুক্ত হওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে ভয় তৈরি হয়েছে। সংগঠনের সম্পাদক দীনেশ সিংহের বক্তব্য, মিড ডে মিল ব্যবস্থায় সব দোষ শিক্ষকদের উপর চাপানো হচ্ছে। শিক্ষকদের বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। শিক্ষা বিভাগের প্রধান সচিব অমরজিৎ সিন্হা আন্দোলনকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। |