ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ও তাঁর স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে। হাসপাতালের নতুন ভবন তৈরির কাজও তাঁরা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ওই ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ছোটন মণ্ডল বৃহস্পতিবার স্থানীয় থানায় ১২ জনের নামে এই অভিযোগ করেছেন। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছেন পুলিশকে। এক মাস হল এই হাসপাতালের নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়েছে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালের পুরনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন তৈরির জন্য মোট ৬ কোটি টাকা অনুমোদিত হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ২ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। সেই টেন্ডার পেয়ে মালদহ শহরের এক ঠিকাদার সংস্থা কাজও শুরু করেছে। ছোটনবাবুর অভিযোগ, তার পর থেকেই তৃণমূলের স্থানীয় ১০-১২ জন কর্মী তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন ওই ঠিকাদারের ফোন নম্বর দেওয়ার জন্য। অভিযোগ, ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ রাখতে বলার জন্যও হুমকি দেন তাঁরা। ছোটনবাবু সে কথা জানান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিধান মিশ্রকে। তিনি হুমকিতে আমল না দিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশই দেন ছোটনবাবুকে। ছোটনবাবু বলেন, “বুধবার রাতে ওই যুবকেরা হাসপাতালে ঢুকে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হুমকি দিয়ে গালিগালাজ করেছে। এ দিন সকালে আমি কোয়ার্টারে ছিলাম। সেই সময় তারা আমার উপর চড়াও হয়ে মারধর করে। আমাকে বাঁচাতে এক স্বাস্থ্যকর্মী এগিয়ে এলে তাঁকেও ওরা মারধর করেছে। ওই যুবকদের হাত থেকে আমার স্ত্রীও রক্ষা পাননি।” তিনি বলেন, “হাসপাতালের নতুন ভবনের কাজ বন্ধ করে দেয় ওই যুবকেরা। রোগীর পরিবারের লোকেরা এগিয়ে এসে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে রক্ষা করেন।” এরপরেই ছোটনবাবু থানায় অভিযোগ করেন। হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি শেখ খলিল বলেন, “যে ১২ জন যুবকের নামে অভিযোগ হয়েছে, তারা সকলেই তৃণমূল কর্মী। তোলা আদায়ের জন্যই ওরা মারধর করছিল।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “তোলা আদায়ের জন্যই তৃণমূলের কিছু কর্মী ওই ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে ঠিকাদারের নাম ও ফোন নম্বর চায়। তা না পেয়েই হামলা করেছে।”
হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “যে কেউ থানায় অভিযোগ জানাতেই পারেন। কিন্তু কোন বিএমওএইচের উপরে কারা হামলা করেছে, তা বলতে পারব না।” তবে এই ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী সাবিত্রীদেবী বলেন, “কিছুতেই এই ঘটনা মেনে নেওয়া যাবে না। পুলিশ সুপারকে বলেছি, যারা হাসপাতালের নতুন ভবনের কাজ বন্ধ করে ব্লক স্বাস্থ্যকর্তাকে মারধর করেছে, তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করুন।” ওই হাসপাতালে সারা দিনই আতঙ্কের পরিবেশ ছিল। কাজ হচ্ছে তবে ভয়ও যাচ্ছে না। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিধানবাবু বলেন, “হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে।” জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় জানান, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। |