আশঙ্কার মেঘ কাটল। আলো ফিরল শেখ আনিসের জীবনে।
এক মাস আগেও আনিসকে নিয়ে চিন্তার শেষ ছিল না পরিবারের। তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া আনিসের ডান চোখে জটিল রোগ হয়েছিল। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, দ্রুত অস্ত্রোপচার করা প্রয়োজন। না হলে চোখ নষ্টও হতে পারে। কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসারে চিকিৎসার খরচ জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। তখনই সর্বশিক্ষা মিশন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসার সব খরচ তারাই দেয়। সম্প্রতি কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে আনিসের ডান চোখে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখন সে বিপদমুক্ত। ঈদের আগে তাই স্বস্তিতে এই কিশোরের পরিবার। আনিসের মা পুতুল বিবি বলেন, “চিকিৎসার অভাবে যদি দু’টো চোখই নষ্ট হয়ে যায়। সব সময় এই ভয় করত। ডাক্তার জানিয়েছেন, আর ভয় নেই। প্রশাসন পাশে না থাকলে ছেলেটার চিকিৎসাই হত না।” আনিসের বাবা শেখ সাজ্জাকের কথায়, “গাড়ি চালিয়ে সামান্য যা রোজগার হয়, তা দিয়েই সংসার চলে। মাঝে দুর্ঘটনায় পড়েছিলাম। মাথায় চোট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। এখন বেশি কাজ করতে পারি না। প্রশাসন ছিল বলেই ছেলে সুস্থ হয়েছে।”
আনিসকে নিয়ে চিন্তায় ছিল প্রশাসনও। এলাকার দায়িত্বে থাকা স্পেশাল এডুকেটর পতিতপাবন চক্রবর্তী বলছিলেন, “আনিসকে নিয়ে আমরাও খুব চিন্তায় ছিলাম। একটা চোখের যা অবস্থা হয়েছিল। সফল অস্ত্রোপচারের ফলে ও অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পেল। পরে ডান চোখে অন্য কারও চোখ প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে।” |
তাঁর কথায়, “আমরা এমন আরও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুকে সমাজের মূলস্রোতে ফেরানোর চেষ্টা করছি। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। প্রশাসনই সব ব্যবস্থা করছে।” এই সব শিশুদের মধ্যে কেউ কানে কম শোনে। কেউ চোখে কম দেখে। অর্থাৎ, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কারও কানে ‘হিয়ারিং এইড’ লাগানো প্রয়োজন। কারও দরকার চশমা।
আনিসদের বাড়ি খড়্গপুর লোকাল থানার সাদাতপুরে। সামান্যই জমি রয়েছে। সংসারে অভাব-অনটন নিত্যদিনের সঙ্গী। দুই ভাইয়ের মধ্যে আনিসই বড়। বয়স ৮ বছর ৭ মাস। ছোট ছেলে শেখ আকাশের বয়স আড়াই বছর। সাদাতপুর প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আনিসের ডান চোখটি খারাপ হতে শুরু করে বেশ কিছু দিন আগেই। গত ফেব্রুয়ারিতে সর্বশিক্ষা মিশনের উদ্যোগে একটি স্বাস্থ্য শিবির হয়। সেখানেই চিকিৎসকেরা জানান, আনিসের চোখের রোগ জটিল। দ্রুত অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তকে বিষয়টি জানান সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পের জেলা আধিকারিক শাশ্বতী দাস। চিকিৎসার তোড়জোড় শুরু হয়। একটি সংস্থা কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আনিসের মায়ের হাতে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় অর্থ তুলে দেন জেলাশাসক।
অস্ত্রোপচারের পর বাড়ি ফিরে এসেছে আনিস। আনিসের মা বলছিলেন, “আপাতত ডান চোখে নকল চোখ বসানো হয়েছে। এখন আর প্রতিদিন স্কুলে যেতে পারে না। মাঝেমধ্যে যায়। চিকিৎসকেরা বৃষ্টিতে ভিজতে না বলেছেন। চোখের মধ্যে জল ঢুকে গেলে সমস্যা হবে। প্রশাসন পাশে ছিল বলেই কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে ওর চিকিৎসা করা সম্ভব হল।”
ফের একবার জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে রয়েছে পুতুল বিবির। তাঁর কথায়, “চিকিৎসার আগে একবার গিয়েছিলাম। উনি বলেছিলেন, ‘চিন্তার কিছু নেই। আমরা সকলে পাশে আছি।’ ওঁর আশ্বাসে মনে জোর পেয়েছি। ছেলেকে নিয়েই ফের ওঁর কাছে যাব।” |