ছপরার মিড-ডে মিল কাণ্ডের ন’দিন পরে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার প্রকাশ্যে মুখ খুললেন। গত কাল দলের বিধায়ক ও কর্মকর্তাদের কাছে নীতীশ এই নিয়ে মুখ খোলেন। সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন। সতর্ক করেন, সজাগ করেন দলের নেতাদের। আর আজ অ্যানে মার্গে, মুখ্যমন্ত্রী আবাসে ডেকে পাঠান সাংবাদিকদের।
ছপরার ধর্মসতী-গণ্ডামান মিড ডে মিল কাণ্ড ভুলবশত হয়নি বলেই মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তাঁর মতে, এর পিছনে কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে। তবে কী উদ্দেশ্য, কারা করল, কেন করল তা নিয়ে বিশদ কোনও ব্যাখ্যায় নীতীশ যাননি। তাঁর বক্তব্য, “পুলিশ তদন্ত করছে। অভিযুক্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। আগে এই নিয়ে মন্তব্য করলে বলা হবে তদন্তকে প্রভাবিত করা হচ্ছে।” তবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এ ঘটনা ভুলবশত হয়নি। যে বা যাঁরা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ডিজিপি অভয়ানন্দও আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। তিনিও এই প্রসঙ্গে বলেন, “রিপোর্ট অনুযায়ী, এটা ভুল বশত হয়নি। কারণ তাতে বাজার চলতি কীটনাশকের চেয়ে বেশি বিষ ছিল। ইচ্ছাকৃত ভাবে এটা ঘটানো হয়েছে।”
শারীরিক কারণে গত কয়েকদিন মুখ্যমন্ত্রী বিশ্রামে আছেন। পায়ে চোট নিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শে বাড়ি ছেড়েই বেরোননি। এতদিন তিনি এই ঘটনা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্যও করেননি। তবে আজ মুখ খুলেই বিরোধীদের এক হাত নিয়ে নীতীশ বলেন, “এরকম একটি ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। ছপরা হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রাণপণে যখন বাচ্চাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন তখন বিরোধীরা এক জোট হয়ে বন্ধ ডেকে দিল। পুলিশের উপর আক্রমণ করা হল। পুলিশ প্রশাসনকে ওই গ্রামে যেতে বাধা দেওয়া হল।” তিনি বলেন, “এই ঘটনা নিয়ে যে ভাবে রাজনীতি করা হচ্ছে তা দুঃখজনক। আমি কোনওদিন এত নীচে নেমে রাজনীতি করতে পারব না।”
এই ঘটনার পর থেকে মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে বিরোধীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার পায়ে যে আঘাত রয়েছে তা অন্তত সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা জানেন। আগের দিন জনতা দরবারে সকলেই দেখেছেন।” ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী কেন নীরব, সে প্রসঙ্গে নীতীশ বলেন, “বলা হচ্ছে, আমি মৌন। আমি চুপ করে ছিলাম, কিন্তু বসে ছিলাম না। ঘটনার প্রতিটি মুহূর্তের খোঁজ রেখেছি। স্বাস্থ্য, পুলিশ এবং প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয় করেছি। আমি চুপ করে ঘরে বসে থাকার লোক নই।” বিরোধীদের উদ্দেশে বার্তা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমায় মানুষ যে দায়িত্ব দিয়েছে তা থেকে আমাকে সরানো যাবে না। যত ক্ষণ মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন তত ক্ষণ কারও কিছু করার নেই।” তিনি কটাক্ষ করেন, “কারও ভাগ্য কেউ গড়ে দিতে পারে না।” বিজেপির নাম না করে তিনি বলেন, “জোট সরকারকে মানুষ বিহারের উন্নতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। অন্য কোনও রাজ্যের (পড়ুন গুজরাত) নয়।” তবে এ দিন তিনি মিড ডে মিলের ব্যবস্থা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকরের সমালোচনা করতেও ছাড়েননি। তিনি বলেন, “রান্নার জন্য এক হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্প চালাতে গেলে আরও লোকের প্রয়োজন। এর জন্য আরও অর্থের প্রয়োজন।” তিনি বলেন, “এটা কেন্দ্রীয় প্রকল্প। সমস্যা শুধুমাত্র বিহারের নয়। সারা দেশের ব্যাপার। আমরা চাইছি এই নিয়ে আলোচনা হোক। সেখানে আমরা এই নিয়ে বক্তব্য জানাতে পারব।”
|
আত্মসমর্পণের আগেই ধৃত প্রধান শিক্ষিকা |
আদালতে আত্মসমর্পণের চেষ্টা করেছিলেন মীনা দেবী। কিন্তু তাঁকে সে সুযোগ পুলিশ দেয়নি। তার আগেই তাঁকে ছপরা শহর থেকেই গ্রেফতার করা হল। মিড-ডে মিল কাণ্ডে ২৩ শিশু মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ধর্মসতী-গণ্ডামান নবসৃজিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মীনা দেবী ফেরার ছিলেন। বুধবার তাঁর আইনজীবী ভোলা রাই ছপরার সিজেএম আদালতে মীনা দেবী ও তাঁর স্বামী অর্জুন রাইয়ের আগাম জামিনের আর্জি জানান। বৃহস্পতিবার মামলার শুনানির দিন ধার্য হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে মীনা দেবী আদালতে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আদালতের পথেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। রাজ্য পুলিশের ডিজিপি অভয়ানন্দ জানিয়েছেন, “আগামী কাল তাঁকে আদালতে তোলা হবে। আপাতত, পুলিশ তাঁকে জেরা করছে।”
|