রাজ্যের একমাত্র ইউনানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কি অকালমৃত্যু ঘটতে চলেছে?
আগের বাম সরকার এবং বর্তমান পরিবর্তনের সরকারের মনোভাবের জেরে তেমনই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কলকাতার তপসিয়ায় প্রায় দু’দশকের পুরনো সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এই হাসপাতাল অবহেলা ও উপেক্ষায় এখন তালাবন্ধ হওয়ার মুখে। সেখানে আর চিকিৎসা এবং পঠনপাঠন হয় না, ৬টি আউটডোরের সব ক’টি বন্ধ। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, নতুন রোগী ভর্তিও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। চিকিৎসক ও কর্মীদের বেতন বাকি পড়েছে দু’মাস।
অথচ এই হাসপাতালটি অধিগ্রহণ করার জন্য ২০১০-এর ১৯ মার্চ রাজ্য বিধানসভায় বিল পাশ করে তদানীন্তন বাম সরকার। কিন্তু তার পর থেকে হাসপাতালের জন্য সরকারি বরাদ্দ প্রতি বছর কমছে বলে অভিযোগ। অধ্যক্ষ মহম্মদ আয়ুবের কথায়, “স্বাস্থ্য দফতর পরপর মেডিক্যাল কলেজ খোলার কথা ঘোষণা করছে। অথচ তিন বছর আগে একটি চালু হাসপাতাল অধিগ্রহণের বিল পাশ হলেও সরকার কেন নির্লিপ্ত, বুঝছি না!” তাঁর অভিযোগ, “স্বাস্থ্য ভবনের কর্তা ও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে, চিঠি দিয়েও লাভ হয়নি।” |
সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ এনে অবিলম্বে এই মেডিক্যাল কলেজে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোর দাবিতে গত ১৭ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছেন সেখানকার চিকিৎসক-চিকিৎসাকর্মী ও পড়ুয়ারা। তবে সরকার যে এ বিষয়ে তেমন উৎসাহী নয়, স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্যেই পরিষ্কার। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ইউনানি চিকিৎসা অবশ্যই সরকার স্বীকৃত। কিন্তু হাসপাতাল অধিগ্রহণের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের থেকে আমাদের কাছে কোনও সবুজ সঙ্কেত আসেনি।” প্রশাসনের একটি অংশ শহরে এমন হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
এখানকার ৬০টি আসনে গড়ে ৩৫-৪০ জন ভর্তি থাকতেন। আছে মেডিসিন, সার্জারি, পেডিয়াট্রিক্স, গাইনি, ইএনটি ও ফিজিওথেরাপি ছ’টি আউটডোর। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রতিদিন ১০০-১২০ জন রোগী আউটডোরে দেখাতে আসতেন। ইউনানির ডিগ্রি কোর্সে আসন সংখ্যা ৪০। ১৭ তারিখ থেকে সে সব বন্ধ।
সরকারের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ২০১১-১২ সালে এই মেডিক্যাল কলেজের জন্য প্রায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, পরের আর্থিক বছরেই তা দাঁড়ায় ৭০ লক্ষ টাকায়। চলতি আর্থিক বছরে মেলে তারও অর্ধেক। অধ্যক্ষের কথায়, “কেন্দ্রীয় ইউনানি কাউন্সিল ২২৩ জন কর্মী রাখার অনুমতি দিলেও রয়েছেন তার অর্ধেক। চিকিৎসক ৩১ জন। কিছু দিন আগে সরকার ১৭ লক্ষ টাকা পাঠায়। তাতে দু’মাসের বেতন হয়েছে। আরও দু’মাসের বাকি। এর মধ্যে হাসপাতালের আধুনিকীকরণ, উন্নত ওষুধ বা যন্ত্রপাতি আনার কথা ভাবাই যাচ্ছে না।” ইউনানি বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য দফতরের যুগ্মসচিব মিসবাউল হকের অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, “হাসপাতালের এই অবস্থার জন্য সেখানকার পরিচালন গোষ্ঠীই দায়ী। ৬০ শয্যার মেডিক্যাল কলেজ অনেক কম লোক দিয়ে চালানো যায়। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি লোক নেওয়ায় প্রায় সব টাকাই বেতনে যাচ্ছে। পরিকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছুই পড়ে থাকছে না।” |