বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ
মেঝেয় শিশু-প্রসূতি, বিশ বাঁওয়ে ‘হাব’
দ্যোজাত এক শিশুর মত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে। বুধবারের ঘটনা। জন্মানোর পর থেকে অসুস্থ শিশুটিকে চিকিৎসকেরা দেখতে আসেননি বলে অভিযোগ করেছেন মৃত শিশুর বাবা পশ্চিম মেদিনীপুরের কোতওয়ালি থানার বাসিন্দা গৌতম রুইদাস। শিশু ও প্রসূতি বিভাগের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ আর পরিকাঠামোগত সমস্যার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে মৃত শিশুর আত্মীয়দের সঙ্গে অন্য রোগীর পরিজনেরাও বিক্ষোভ দেখান। পরে পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হাসপাতালের সুপার পঞ্চানন কুণ্ডুও অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
কিন্তু ওই ওয়ার্ডের অবস্থা কি বদলাবে? প্রশ্ন ছুড়েছেন রোগীদের পরিজনেরা। এখানে একাধিক বেডে দুই থেকে তিনটি করে সদ্যোজাত শিশুর ঠাঁই। ওয়ার্ডের মেঝেতেও পা ফেলার জায়গা নেই। বেডের অভাবে মেঝেতেই সদ্যোজাতকে বুকে আঁকড়ে শুয়ে থাকেন মা। বাথরুম থেকে ভেসে আসে দুর্গন্ধ। সেখান থেকে নোংরা জলও গড়িয়ে চলে আসে ওয়ার্ডে, শিশু ও মায়ের কাছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য, বাঁকুড়া মেডিক্যালের স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগে বেড রয়েছে ২২০টি। রোগী থাকে সাড়ে তিনশোর বেশি। দিনে গড়ে ৭০টি শিশু জন্ম নেয়। কয়েক মাস আগে একদিনে রেকর্ড ডেলিভারি হয়েছে ৯৭টি। প্রতিদিন গড়ে এই বিভাগে ৫৫ জন প্রসূতি ভর্তি হন। যার মধ্যে ৪০ শতাংশ প্রসূতি অন্য জেলার। চিকিৎসক রয়েছেন কম। কিন্তু পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ আটকে রয়েছে সেই সাবেক আমলেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাফাই, এই প্রচণ্ড চাহিদার মোকাবিলা করার মতো পরিকাঠামো না থাকাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মীদের।
চিকিৎসকদের মতে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত ‘মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ হাব’ প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন ঘটলে সমস্যা অনেকটাই দূর হবে। সেই সঙ্গে জেলার ব্লক ও মহকুমা হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে। কিন্তু ওই দু’টি উপায় কবে বাস্তব রূপ পাবে তা নিয়ে সংশয়ে জেলা স্বাস্থ্য কর্তারাই। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সফরে এসে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে নতুন একটি দশতলা ‘মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ হাব’ গড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। প্রায় ১৩ কোটি টাকা এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দও হয়েছে। তার ১০ শতাংশ টাকা স্বাস্থ্য দফতরের হাতে চলেও এসেছে। কিন্তু ঘোষণার দেড় বছর পরেও ওই প্রকল্পে একটি ইটও গাথা হয়নি।
হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, “প্রস্তাবিত হাবের জমির মাটি পরীক্ষার কাজ ও ভবনের পরিকল্পনা তৈরি আছে। কিন্তু তার পর কাজ বিশেষ এগোয়নি।” আটকে থাকার কী কারণ? জেলা পূর্ত দফতরের এক কর্তার আশ্বাস, ‘‘অগস্ট মাসেই ওই কাজের টেন্ডার ডাকা হবে।” তবে আড়ালে দু’তরফেই স্বীকার করেছেন, খুঁটিনাটি নানা বিষয়ে মত পার্থক্যের জেরে টেন্ডার ডাকতেই দেড় বছর কেটে গেল।
অন্য দিকে, ব্লক ও মহকুমা স্তরেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে চাঙ্গা করার কাজ বিশেষ এগোয়নি। এই জেলায় ২২টি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। মোট চিকিৎসক রয়েছেন ১৯৮ জন। যেখানে সব মিলিয়ে থাকার কথা ২৮৬ জন চিকিৎসকের। নানা অব্যবস্থার অভিযোগে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে বিক্ষোভ চলে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তাই স্বীকার করেছেন, জেলার দু’টি মহকুমা হাসপাতালের মধ্যে খাতড়ায় এখনও অস্ত্রোপচার বিভাগই চালু হয়নি। অন্য দিকে, বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালের পরিষেবা নিয়েও ভূরিভূরি অভিযোগ রয়েছে।
বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, “রোগীর চাপ অত্যন্ত বেশি থাকলেও সবাই সাধ্যমতো পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’’ তাঁর যুক্তি, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো ভাল হলে তবেই এখানকার চাপ কমবে।” তাঁর কথা মেনে নিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, “ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে পরিকাঠামোর কিছু সমস্যা রয়েছে ঠিকই। স্বাস্থ্য ভবনকে পুরো বিষয়টি জানে।” কিন্তু সেই ঘাটতি কবে মিটবে, তিনি আশ্বাস দিতে পারেননি। তবে প্রোগ্রেসিভ ডক্টরর্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সহ-সম্পাদক জয়মাল্য ঘরের আশ্বাস, “খাতড়া মহকুমা হাসপাতালের অস্ত্রোপচার বিভাগ দুর্গাপুজার আগেই চালু করার জন্য স্বাস্থ্য দফতর উদ্যোগী হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.