ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে ‘ওয়াটার করিডর’ নিয়ে তৈরি হওয়া জট কাটাতে ডাকা বৈঠকে এল না ‘জমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’। ফলে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের মুখে দাঁড়িয়েও বিদ্যুৎকেন্দ্রে জল সরবরাহের সমস্যার সমাধানসূত্র বেরোল না। এই প্রেক্ষিতে আগামী ৬ অগস্ট ফের বৈঠক ডেকেছে ডিভিসি। কমিটির অবশ্য দাবি, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে তাদের চিঠি দিয়ে ডাকা হয়নি বলে তারা অনুপস্থিত থেকেছে। ডিভিসি-র পাল্টা দাবি, কমিটির নেতাদের কাছে সংস্থার আধিকারিকদের নিজেরা গিয়ে বৈঠকে থাকার জন্য অমুরোধ করেছিলেন।
জমি মালিকদের একাংশের বিরোধিতায় রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র মেগা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে জল সরবরাহের জন্য প্রস্তাবিত ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়াটার করিডর’ নির্মাণের কাজ শুরুই করতে পারছে না ডিভিসি। প্রথম থেকেই বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে উৎপাদন শুরুর নির্ধারিত সময় থেকে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে একটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর অবস্থায় থাকলেও জল সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় উৎপাদন শুরু করা যাচ্ছে না।
নিতুড়িয়ার রায়বাঁধ এলাকায় ওই ‘ওয়াটার করিডর’ তৈরি হবে। ৫১ একর জমি লাগবে। জমি মালিকের সংখ্যা প্রায় ১৬০০। ডিভিসি সূত্রের খবর, তাঁদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ জমি-মালিক চেক নিয়ে নিয়েছেন। ৫১ একরের মধ্যে ৪৭ একর জমি জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই ডিভিসি-কে হস্তান্তর করে দিয়েছে। কিন্তু, চেক না নেওয়া বাকি অর্ধেক জমি-মালিক ‘জমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’ গড়ে জমির বিনিময়ে প্রকল্পে পরিবার পিছ ুস্থায়ী চাকরির দাবি তুলেছে। কিন্তু, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্যাকেজে নিয়ম অনুযায়ী ডিভিসি জমিহারাদের স্থায়ী চাকরী দিতে পারবে না বলে জানানোয় জট বেধেছে। কমিটির সঙ্গে থাকা কিছু জমি-মালিক ‘ওয়াটার করিডর’ তৈরিতে সক্রিয় বিরোধিতা করায় জমি পেয়েও পাইপ লাইন নির্মাণ করতে পারছে না ডিভিসি।
এই অবস্থায় ডিভিসি দ্বারস্থ হয়েছিল প্রশাসনের। মূলত প্রশাসনিক পরামর্শেই এ দিন দুমদুমিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রশাসনিক ভবনে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট জিগীষেন্দ্র সিংহ, বিদ্যুৎ প্রকল্পে ডিভিসি-র দুই মুখ্য বাস্তুকার এবং পুলিশ ও প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা। এ ছাড়াও ছিলেন জমিহারাদের একাংশ ও রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা। কিন্তু, ‘ওয়াটার করিডর’ তৈরিতে বাধা দিচ্ছে যারা, সেই কমিটির তরফে কেউ বৈঠকে না আসায় আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। ডিভিসি-র এক পদস্থ কর্তা বলেন, “যাঁদের জমি নেওয়া হয়েছে, তাঁদের সকলকেই এই বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ডাকা হয়েছিল। একটা বড় অংশ এলেও বাকিরা আসেনি। বৈঠকে প্রশাসন ও উপস্থিত জমিহারাদের একাংশের পরামর্শ দিয়েছে আরও সময় নিয়ে বৈঠক ডাকার।”
রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দোপাধ্যায় বলেন, “ওয়াটার করিডর নিয়ে তৈরি হওয়া সমস্যা সমাধানে প্রশাসন ও পুলিশ ডিভিসি কর্তৃপক্ষ এবং জমি মালিকদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানসূত্র বের করতে চাইছে। কিন্তু, জমি মালিকদের সকলে উপস্থিত না হওয়ায় দ্বিতীয় বৈঠকের দিন স্থির করা হয়েছে।”
|