পণসামগ্রী ফেরাতে হবে এজলাসেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
অন্য কোথাও নয়। বরপণের টাকা আর গয়না নির্যাতিতা বধূর হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে বিচারপতির এজলাসেই। বধূ তাঁর প্রাপ্য টাকা এবং সমস্ত গয়না যাতে হাতে পান, সেটা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এই নির্দেশ দিয়েছেন।
শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতন এবং পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার বিচার চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বাইশ বছরের গৃহবধূ বাসন্তী মণ্ডল। বিচাপতি এর আগেই বাসন্তীর শ্বশুরবাড়িকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁরা যেন পণের টাকা-গয়না এবং যাবতীয় দানসামগ্রী বাসন্তীকে ফেরত দেন। বিচারপতির নির্দেশ মেনেই গত সপ্তাহে গয়নাগাটি হাইকোর্টে নিয়ে এসেছিলেন বাসন্তীর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। বিচারপতি বাসন্তীকে গয়না দেখে নিতে বলেছিলেন। বাসন্তী তখন বলেন, গলার চেন আর দুল বদলে দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি তখন বাসন্তীকে গয়নার তালিকা জমা দিতে বলেন আদালতে। |
হাইকোর্টে বাসন্তী। —নিজস্ব চিত্র |
বৃহস্পতিবার মামলাটির শুনানি চলাকালীন বাসন্তীর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা জানান, দানসামগ্রী তাঁরা ইতিমধ্যেই বাসন্তীর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বাসন্তীর পরিবার তা গ্রহণ করেনি। জবাবে বাসন্তীর আইনজীবী সৈয়দ মসিহার রহমান জানান, ওই দিন বাড়িতে কেউ ছিলেন না বলেই জিনিসপত্র নেওয়া যায়নি। জিনিসপত্রে অদলবদল করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে। সেই সূত্রেই গয়না বদলের প্রসঙ্গটিও ফের উত্থাপিত হয়। বিচারপতি তখন সরকারি আইনজীবীকে দায়িত্ব দেন, তালিকা অনুযায়ী সঠিক গয়না চিহ্নিত করে আগামী মঙ্গলবার হাইকোর্টে জমা দিতে হবে।
এই সময় বাসন্তীর শ্বশুরবাড়ির তরফে বলা হয়, তাঁদের বাড়ি হাওড়ার শ্যামপুরে। সেখান থেকে পণের টাকা ও গয়না হাইকোর্টে নিয়ে আসায় ঝুঁকি রয়েছে।
এ কথা শুনে কড়া প্রতিক্রিয়া জানান বিচারপতি। তিনি বলেন, একটি মেয়ে বিবাহিত জীবনে নির্যাতনে বিচার চেয়ে প্রতিদিন আদালতে এত মানুষের সামনে এসে দাঁড়াচ্ছেন! সেই ঝুঁকিটার কথা ভাবা হোক! মেয়েটির সামাজিক অবস্থানের কথা ভাবা হোক! বিচারপতি এর পরেই ফের জোর দিয়ে বলেন, টাকা ও গয়না হাইকোর্টে এসেই ফেরত দিতে হবে!
আইনজীবী মহলের অনেকে মনে করছেন, বিচারপতির এই নির্দেশ বর্তমান আইনের মধ্যে নারীদের সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পণের টাকা ও গয়না ফিরে পেলে কোনও মহিলার পক্ষে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর একটা সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন। বাসন্তী মণ্ডলের মামলার কথা সংবাদমাধ্যমে জেনে আরও অনেক মহিলা নিজেদের প্রাপ্য চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন বলেও জানান তাঁরা।
বাসন্তী নিজে আদালতে বলেছেন, পণের টাকা-গয়না ও অন্যান্য দানসামগ্রী ফিরে পেলে তিনি আবার বিয়ে করে নতুন ভাবে বাঁচার চেষ্টা করবেন। তাঁর কথায়, “সুযোগ পেলে আমিও যে ভাল ভাবে সংসার করতে পারি, সেটাই পৃথিবীকে দেখিয়ে দিতে চাই।”
|