ব্যাপক রাজস্ব-ঘাটতির জেরে চূড়ান্ত আর্থিক টানাটানি চলছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। বিভিন্ন সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সংস্থা রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্পোরেশন (আরইসি) বা গ্রামীণ বিদ্যুৎ নিগম থেকেই ঋণ নেওয়া হবে। কারণ, সংস্থার রাজস্ব-ঘাটতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, ঋণ না-নিলে সংস্থা চালানো দায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বণ্টন সংস্থার এই বেহাল অবস্থার জন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদও বিপদে পড়েছে। পর্ষদ সূত্রের খবর, বণ্টন সংস্থার কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে তারা সব টাকা পাচ্ছে না। (পর্ষদ তাদের উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই বিক্রি করে বণ্টন সংস্থার কাছে)। ফলে পর্ষদের ৪০০ কোটি টাকারও বেশি পাওনা হয়ে গিয়েছে বণ্টন সংস্থার কাছে। বিদ্যুৎ বিক্রির টাকা বাজারে পড়ে থাকলে আগামী কয়েক মাস পর্ষদেরও কয়লা কিনতে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যদিও বণ্টন-কর্তৃপক্ষের দাবি, আয় বাড়াতে তাঁরা ইতিমধ্যেই যে-সব ব্যবস্থা নিয়েছেন, তাতে ভাল ফল পাওয়া যাচ্ছে। জুলাইয়ে বিল আদায় কিছুটা হলেও বেড়েছে। কর্মীরাও আয় বাড়াতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। বিদ্যুৎ ভবন সূত্রের খবর, বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত বণ্টন সংস্থার কর্তাদের নিয়ে বুধবার মনিটরিং কমিটির যে-বৈঠক করেছেন, সেখানে রাজস্ব-ঘাটতির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বণ্টন সংস্থার আর্থিক দুর্দশার কথা জানতে পেরে রাজ্য সরকারও তাদের বিদ্যুৎ বিল বাবদ পাওনা টাকার কিছুটা মিটিয়ে দিয়েছে। মহাকরণের খবর, অর্থ দফতর সম্প্রতি সরকারের অন্য দু’টি দফতরের কাছে বিল বাবদ পাওনার ১২৫ কোটি টাকা বণ্টন সংস্থাকে দিয়েছে। এর ফলে আর্থিক সঙ্কটে জর্জরিত বণ্টন সংস্থার কিছুটা সুরাহা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিল বাবদ বেশ কিছু পুরসভা এবং বিভিন্ন সরকারি দফতরের কাছে বণ্টন সংস্থার পাওনার পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। কয়েকটি পুরসভা আগেই দাবি জানিয়েছে, কলকাতা পুরসভার বিদ্যুৎ বিলের টাকা যেমন রাজ্য সরকার মিটিয়ে দেয়, একই ভাবে তাদের টাকাও মেটানো হোক। সরকার কেন শুধু কলকাতা পুরসভার বিদ্যুৎ বিল মেটাবে আর অন্যান্য পুরসভার বিল দেবে না, সেই প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক চলছে দীর্ঘদিন ধরে। বিদ্যুৎ বিল বাবদ শুধু পুরসভাগুলির কাছেই বণ্টন সংস্থার পাওনা দাঁড়িয়েছে কমবেশি ২৫০ কোটি টাকা। রাজ্য প্রশাসন সম্প্রতি বণ্টন সংস্থার বেহাল আর্থিক অবস্থার কথা জানতে পারে। তার পরেই সরকার আপাতত কিছু টাকা মিটিয়ে দিয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর বিদ্যুৎ বিল বাবদ বণ্টন সংস্থাকে দিয়েছে ১০০ কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি টাকা ক্ষুদ্র সেচ দফতরের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে।
রাজ্যের এক বিদ্যুৎকর্তা জানান, স্বাস্থ্য, সেচ, পুলিশ-সহ বেশ কয়েকটি সরকারি দফতরের কাছে তাঁদের কয়েকশো কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। কিন্তু কোনও টাকাই আদায় হচ্ছিল না। এই নিয়ে মাসখানেক আগে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের সঙ্গেও বৈঠক হয়। কিন্তু রাজ্যের কোষাগারেও আর্থিক টানাটানি চলায় সরকার বিল মেটাতে পারছিল না বলে ওই কর্তা জানান। এ বার বকেয়া মেটানো শুরু হয়েছে।
|