অর্থ দফতরের কাছ থেকে পাওয়া ঋণের ৬০ কোটি টাকার চেক ব্যাঙ্কে ভাঙানো হতে না হতেই সরকারের কাছে একেবারে ৫০০ কোটি টাকার ভর্তুকির অনুরোধ জানাল বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম। তারা বলছে, এই টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ সংস্থাদের পাওনা মেটাতে হবে। না মেটালে যে কোনও দিন বন্ধ হয়ে যাবে কয়লার জোগান। ফলে বন্ধ হয়ে যাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনও। আর গোটা রাজ্যে নেমে আসবে অন্ধকার।
এই ভর্তুকির অনুরোধ সম্পর্কে বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত বৃহস্পতিবার বলেন, “এর আগেও ওরা ভর্তুকি চেয়েছিল। অর্থ দফতর ভর্তুকি দেয়নি।” এ বারও অর্থ দফতর অনুরোধ ফিরিয়ে দেবে কি না, স্পষ্ট নয়। উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাও ২০০ কোটি টাকা ভর্তুকি চেয়েছে। কিন্তু অর্থ দফতর এখনও তার জবাব দেয়নি।
সরকারের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা ভর্তুকি চেয়ে শেষে ৬০ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে নিগম। কিন্তু নিগম যে এ ঋণ শোধ করতে অপারগ, তা জানেন বিদ্যুৎমন্ত্রী। তিনি বৃহস্পতিবার বলেন, “সরকারের কাছে আরও অনেক টাকার ঋণ রয়েছে নিগমের। শোধ দিতে না পারলে তার সঙ্গে ৬০ কোটি টাকা যোগ হবে, এই আর কি!” ওই ৬০ কোটি থেকে ইসিএল-কে বৃহস্পতিবার নিগম দিল ৪০ কোটি টাকা। ১০ কোটি করে পেল মহানদী কোলফিল্ডস এবং কয়লা আমদানিকারী সংস্থা আদানি এন্টারপ্রাইজ।
নিগমের ঋণের বোঝা কতটা ছিল? কোল ইন্ডিয়া সূত্রে জানা গিয়েছে, নিগমের কাছ থেকে ইসিএল পেত ২০০ কোটি, বিসিসিএল ২০০ কোটি, আদানি ১০০ কোটি, বেঙ্গল-এমটা ৫০ কোটি, মহানদী কোলফিল্ডস ১০ কোটি। এ দিন অবশ্য কিছুটা ধার শোধ করল নিগম।
এ দিকে, বকেয়া টাকার মধ্যে ৬০ কোটি মিলবে, এই কথা শোনার পরেই ইসিএল ফের কয়লা পাঠানো শুরু করেছিল। সে কথা উল্লেখ করে এ দিন এক শীর্ষ ইসিএল কর্তা বলেন, তাঁরা আগে শুনেছিলেন, ৬০ কোটি টাকা পাবেন। কিন্তু পেলেন মাত্র ৪০ কোটির চেক। তিনি বলেন, “এ ভাবে চলতে পারে না। আগামী সপ্তাহেই বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তকে আমরা বলে দেব, বকেয়া ২০০ কোটি টাকা মেটানোর ব্যবস্থা না করলে আমরা আর নভেম্বর থেকে কয়লা দিতে পারব না। এ ভাবে বকেয়া জমতে থাকলে আমরা কর্মীদের বেতন দেব কেমন করে? আমরা যে রুগ্ণ, বিআইএফআর-এ যাওয়া সংস্থা, সেটা তো অন্তত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মনে রাখা উচিত।” বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেন, “কয়লার বকেয়া শোধ তো দিতেই হবে। দেখছি কী করা যায়।”
সরকার ৬০ কোটি টাকা দেবে, এই ভরসা পাওয়ার পর ইসিএল গত কয়েক দিনে ১৭ মালগাড়ি কয়লা দিয়েছে। বাস্তবে তারা পেল ৪০ কোটি। কাজেই আর দু’চার দিনের মধ্যে ওই টাকা ফুরিয়ে গেলেই ইসিএল নিগমকে কয়লা পাঠানো বন্ধ করে দিতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
এ দিন সকাল থেকেই রাজ্য জুড়ে বিদ্যুৎ ঘাটতি শুরু হয়ে যায়। কয়লার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ বক্রেশ্বর ও সাগরদিঘি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র দু’টিতে। তাদের হাতে কয়লার কোনও মজুত নেই বললেই চলে। ওয়াগনে কয়লা আসামাত্র তা সোজা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বয়লারের কনভেয়র বেল্টে।
অন্য দিকে, সিইএসসি এলাকায় এ দিন সন্ধ্যা ছ’টায় বিদ্যুতের চাহিদা সর্বকালীন রেকর্ড ভেঙে পৌঁছে যায় ১৭২৭ মেগাওয়াটে। এর আগের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৭০৩ মেগাওয়াট। সেটা হয়েছিল পুজোর আগে তৃতীয়ার সন্ধ্যায়। এ দিন কোনও রকম আপাত কারণ ছাড়াই কেন এত লাফিয়ে বেড়ে গেল চাহিদা, তা ভেবে পাচ্ছেন না বিদ্যুৎকর্তারা। তবে সিইএসসি এলাকায় কিন্তু কোনও ঘাটতি হয়নি। এ দিন বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কাছে ‘সুখবর’, পুরুলিয়া জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পনেরো দিন পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আবার ৯০০ মেগাওয়াট, অর্থাৎ পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন করল। তার ফলে বিদ্যুৎ ঘাটতি নামিয়ে আনা সম্ভব হয়। বণ্টন সংস্থার এলাকায় সান্ধ্য ঘাটতি ছিল ১৫০ মেগাওয়াট। এই কয়েক দিন এক দিকে রাতে পাম্প করে জল তোলার জন্য বিদ্যুতের ঘাটতি ও অন্য দিকে এখানকার একটি ২২৫ মেগাওয়াটের ইউনিটের ‘ব্রেকার’ খারাপ হয়ে যাওয়ায় পুরো উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছিল না। |