|
|
|
|
বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ অস্বীকার আলতামাস কবীরের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
নজিরবিহীন ভাবে নিজের ভাবমূর্তি উদ্ধারের চেষ্টায় নেমে পড়লেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীর।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাঁর মেয়াদের একেবারে শেষ লগ্নে আলতামাসের বিরুদ্ধে তিন-তিনটি অভিযোগ উঠেছিল। যার মধ্যে সব থেকে বড় অভিযোগটি ছিল আর এক বাঙালি, গুজরাত হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ভাস্কর ভট্টাচার্যের। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ক্ষোভ থাকায় আলতামাস তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হতে দেননি বলে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি লেখেন ভাস্করবাবু।
মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের এক বিচারপতিকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করার জন্যও আলতামাস প্রথা ভেঙেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
পাশাপাশি, সহারা সংস্থাকে তিনি বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলেও আলতামাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল।
গত ১৯ জুলাই অবসর নিয়েছেন আলতামাস। তার পরেই রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিটি অভিযোগ খারিজ করেছেন তিনি। ভাস্কর ভট্টাচার্যকে চিঠি লিখে অভিযোগের জবাব দিয়েছেন। সেই চিঠির প্রতিলিপি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছেও পাঠিয়ে দিয়েছেন। আলাতামাসের বক্তব্য, তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যই এইসব অভিযোগ তোলা হয়েছে। ঘনিষ্ঠ মহলেও তাঁকে এ নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আর সেই কারণেই তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করার চেষ্টা করছেন।
ভাস্কর ভট্টাচার্যের অভিযোগ ছিল, কলকাতা হাইকোর্টে কর্মরত থাকাকালীন তিনি আলতামাস কবীরের বোনের কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তাঁর নিয়োগ আটকে যায়।
সেই ক্ষোভেই আলতামাস কবীর সুপ্রিম কোর্টে ভাস্করবাবুর নিয়োগ আটকে দেন। আলতামাসের পাল্টা যুক্তি, কী ভাবে বিচারপতি নিয়োগ হয়, তা ভাস্করবাবুর অজানা নয়। বিচারপতি নিয়োগের দায়িত্বে থাকে একটি কলেজিয়াম বা কমিটি। যে কলেজিয়ামে পাঁচ জন বিচারপতি থাকেন। তাঁরাই সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নেন। আর গুজরাতের প্রধান বিচারপতিকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ না করার বিষয়ে কলেজিয়ামের সকলেই এক মত ছিলেন।
ভাস্করবাবুকে পাঠানো চিঠিতে আলতামাস যুক্তি দিয়েছেন, বোনের উচ্চপদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও তাঁর কোনও ভূমিকা ছিল না। তিনি এ বিষয় থেকে নিজেকে পুরোপুরি সরিয়ে নিয়েছিলেন।
আলতামাস কবীরের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযোগটি ছিল, অবসরের মাত্র ১৫ দিন আগে তিনি মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের এক বিচারপতিকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগের চেষ্টা করেন। এ জন্য তিনি নিজেই ২ জুলাই কলেজিয়ামের বৈঠক ডাকেন। সেখানে ওই বিচারপতির হয়ে তিনি ওকালতি করেছিলেন। কিন্তু কলেজিয়ামের বাকি চার বিচারপতিই রুখে দাঁড়ালে সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। আলতামাস জানিয়েছেন, অনেক দিন ধরেই ওই বৈঠকটি হওয়ার কথা হচ্ছিল। কিন্তু নানা কারণে তা বার বার পিছোতে থাকে। শেষে অন্য বিচারপতিদের কথাতেই ২ জুলাই কলেজিয়ামের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। এবং ওই বৈঠকে তাঁকে জানানো হয় এই প্রসঙ্গে পাঁচ প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিদের মতামত নেওয়া হয়েছে। এবং যে হেতু পরবর্তী প্রধান বিচারপতি মনোনীত হয়ে গিয়েছেন তাই এ নিয়ে আর কোনও কলোজিয়াম ডাকা হবে না।
আলতামাসের বিরুদ্ধে তৃতীয় অভিযোগ ছিল, তিনি সহারাকে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সময়সীমা বাড়িয়ে দিয়ে সংস্থার সুবিধা করে দেন। ওই মামলাটি তখন সুপ্রিম কোর্টে অন্য একটি ডিভিশন বেঞ্চে চলছিল। যে বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণণ এবং বিচারপতি জে এস খেহর। বিচারপতিরা সহারাকে বেআইনি ভাবে সংগ্রহ করা ২৪ হাজার কোটি টাকার আমানত ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। বেআইনি ভাবে আমানত সংগ্রহ করার জন্য সহারাকে সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখেও পড়তে হয়েছিল।
কিন্তু প্রথম কিস্তির টাকা জমা দেওয়ার পরে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা জমা দেওয়ার জন্য প্রধান বিচারপতি সহারাকে বাড়তি সময় পাইয়ে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। আলতামাস কবীর যুক্তি দিয়েছেন, তিনি আমানতকারীদের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বাড়তি সময় নিয়ে সহারা যদি টাকা জমা দেয় তা হলে সেবি-র পক্ষে সরাসরি এবং অনেক তাড়াতাড়ি তা আমানতকারীদের ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। না হলে সহারার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পরে তা নিলাম করে আমাতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে দীর্ঘ সময় লেগে যেত।
|
পুরনো খবর: নিয়োগ রুখেছেন কবীর, অভিযোগ বিচারপতির |
|
|
|
|
|