পূর্বাঞ্চলে থমকে যাওয়া প্রকল্পের আর্থিক জট ছাড়াতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে বুধবার কলকাতায় ব্যাঙ্ক ও শিল্প-কর্তাদের নিয়ে বসেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। এই বৈঠক আর্থিক ব্যবস্থা স্বচ্ছ করে তোলার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের দেশব্যাপী অভিযানের অঙ্গ।
শুরু হওয়ার পর কী কারণে মাঝপথে প্রকল্পের কাজ থেমে রয়েছে, এ বার থেকে তার খবর চটজলদি জানার জন্য উদ্যোগী হল কেন্দ্রীয় সরকার। প্রকল্পের প্রোমোটার এবং ব্যাঙ্ককে নিজেদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এ ব্যাপারে তথ্য জানানোর পরামর্শ দিলেন চিদম্বরম। পূর্বাঞ্চলে আটকে থাকা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলি নিয়ে ব্যাঙ্ক এবং শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকেই অর্থমন্ত্রী ওই পরামর্শ দেন। পূর্বাঞ্চলে ওই ধরনের ১০টি বড় প্রকল্প নিয়ে এ দিন ব্যাঙ্ক-কর্তা এবং প্রকল্পগুলির প্রোমোটারদের সঙ্গে আলোচনা করেন চিদম্বরম। ওই সব প্রকল্পে মোট ৩১,৫০০ কোটি টাকা লগ্নি হওয়ার কথা। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক দিয়েছে, ২৩,৭০০ কোটি। বৈঠকে স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরী ছাড়াও ইউকো এবং ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের সিএমডিরা ছিলেন। পরে অর্থমন্ত্রী এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের সিএমডি ও পরিচালন পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। |
থমকে থাকা প্রকল্পগুলি রূপায়ণের লক্ষ্যে মন্ত্রিসভার কিছু সদস্যকে নিয়ে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আটকে থাকার কারণ খতিয়ে দেখে সমাধানের রাস্তা বার করাই ওই কমিটির লক্ষ্য।
এই দিন আলোচিত পূর্বাঞ্চলের ১০টি প্রকল্পের মধ্যে ৩টি পশ্চিমবঙ্গের। দুটিই সড়ক প্রকল্প। পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’টি জায়গায় বাইপাস তৈরির কাজ আটকে রয়েছে। জমি জটের জন্যই প্রকল্পগুলি এগোতে পারছে না বলে অভিযোগ। অথচ প্রকল্পের প্রায় ৮০% কাজই শেষ হয়ে গিয়েছে। চিদম্বরম মন্তব্য করেন, ওই রাস্তা তৈরি হলে সাধারণ মানুষেরই উপকার হবে। দুটি প্রকল্পে ৮০০ কোটি টাকা লগ্নি হওয়ার কথা। এর মধ্যে ব্যাঙ্কঋণ ৫৫০ কোটি টাকা।
বাকি প্রকল্পগুলি পশ্চিমবঙ্গের বাইরে। বিশেষত ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ডে। তবে প্রকল্পগুলি যে-সব সংস্থা করছে, তারা সকলেই পশ্চিমবঙ্গের। অধিকাংশই ইস্পাত এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প। প্রধানত কয়লা পাওয়ার সমস্যা এবং পরিবেশ দফতরের অনুমোদন পেতে দেরি হওয়ার জন্যই সেগুলি আটকে আছে। ফরাক্কায় দ্বিতীয় একটি সেতু তৈরি নিয়েও বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়।
ব্যাঙ্কের নগদ সমস্যা নিয়ে। এ দিন ব্যাঙ্ক শিল্প নিয়ে ফিকির আলোচনাসভায় যোগ দিতে এসে স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরী বলেন, রেপো খাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে-নির্দেশ দিয়েছে, তাতে ব্যাঙ্কগুলিতে নগদ টাকার সমস্যা হতে পারে। তবে তাঁর আশা, টাকার পতন ঠেকাতে শীর্ষ ব্যাঙ্ক যে-পদক্ষেপ করেছে, তা সাময়িক। তবে, এর ফলে গাড়ি-বাড়ি ঋণের খরচ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন প্রতীপবাবু। পাশাপাশি তিনি বলেন, ব্যবসা বাড়ানোর জন্য দীর্ঘ মেয়াদে কিন্তু ওই সব খুচরো ঋণের উপরেই ব্যাঙ্কগুলিকে জোর দিতে হবে। প্রতীপবাবু জানান, শেয়ার বাজারের হাল খারাপ হওয়ার পর মিউচুয়াল ফান্ড থেকে লগ্নিকারীরা টাকা তুলে ব্যাঙ্কে জমা দিচ্ছেন। কেবল স্টেট ব্যাঙ্কেই প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ওই ভাবে এসেছে।
|