রাজ্য সরকারের নীতি মেনে যারা এ রাজ্যে বিভিন্ন শিল্পপ্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে, তারা উৎসাহ ভাতা (ইনসেনটিভ) পাচ্ছে না। কোষাগারে টাকা নেই, তাই ওই ভাতা দেওয়া যাচ্ছে না বলে বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে জানিয়েছে রাজ্য। যা শুনে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, তা হলে সরকার চলছে কী ভাবে?
উৎসাহ ভাতা না পেয়ে রেশমি মেটালিক নামে একটি সংস্থা হাইকোর্টে মামলা করেছে। এ দিন ছিল তার শুনানি। ওই সংস্থা ঝাড়গ্রামে একটি কারখানা তৈরি করেছে। সরকারের নীতি অনুযায়ী তাদের উৎসাহ ভাতা পাওয়ার কথা। হাইকোর্টে রেশমি মেটালিক জানিয়েছে, গত দু’বছর উৎসাহ ভাতা বাবদ কোনও অর্থ তারা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পায়নি। এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি টাকা। ভাতার জন্য সরকারের কাছে দরবার করেও কোনও সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি। অথচ টাকার অভাবে কারখানা চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
রেশমি মেটালিকের বকেয়ার কথা স্বীকার করে সরকারের প্রতিনিধি আদালতকে জানান, আর্থিক টানাটানির জন্য উৎসাহ ভাতার টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। তবে সরকার চেষ্টা করছে কিস্তিতে পাওনা টাকা মিটিয়ে দিতে। রাজ্য সরকারকে ১৫ দিনের মধ্যে হলফনামা দিয়ে উৎসাহ ভাতা সম্পর্কে তাদের মতামত জানাতে বলেছে হাইকোর্ট।
শুধু রেশমি মেটালিক নয়, গত কয়েক বছরে রাজ্যে বিনিয়োগকারী কয়েকশো ছোট-বড় সংস্থার এমন অভিজ্ঞতা রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহাকরণের খবর, সরকারের কাছে লগ্নিকারীদের উৎসাহ ভাতা বাবদ প্রাপ্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা। মহাকরণের এক মুখপাত্র জানান, উৎসাহ ভাতা বাবদ প্রতি মাসে ২৫ কোটি টাকার বেশি দিতে পারবে না সরকার।
রাজ্য শিল্প দফতর সূত্রের খবর, এখন দু’ধরনের প্রকল্পের জন্য লগ্নিকারী সংস্থাকে উৎসাহ ভাতা দেওয়া হয়। একটি ওয়েস্টবেঙ্গল ইনসেনটিভ স্কিমের মাধ্যমে, অন্যটি বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে। শিল্প কর্তারা জানিয়েছেন, বিনিয়োগ টানার ক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতেই শিল্প সংস্থাগুলিকে উৎসাহ ভাতা দেওয়া হয়। সম্প্রতি প্রকাশিত শিল্পনীতির খসড়াতেও তা বলা হয়েছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, খাতায় কলমে থাকলেও বাস্তবে তা দেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের একটি সূত্র বলেছে, আগামী ১ অগস্ট সরকার মুম্বই যাচ্ছে শিল্পপতিদের প্রতি রাজ্যে বিনিয়োগের ডাক দিতে। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে উৎসাহ ভাতা দেওয়ার টাকা নেই, সেখানে বড় শিল্পকে সরকার কী দেখিয়ে রাজ্যে ডাকবে?
রাজ্যের এক অগ্রণী বণিকসভার কটাক্ষ, “সরকার বাউলদের উৎসাহ ভাতা দিতে যতটা আগ্রহী, বিনিয়োগকারীদের জন্য ততটা নয়। এই সরকার কলা শিল্পের জন্য টাকা জোগাড় করে ফেলতে পারলেও কারখানা চালু রাখার জন্য উৎসাহ ভাতা দিতে পারছে না!” |