সেবি-র আইন সংশোধন সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স এবং সংসদের অধিবেশন ডাকার ফাইল দু’টি একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। অসন্তুষ্ট রাষ্ট্রপতি প্রশ্ন তুললেন, সংসদ ডাকার ব্যাপারে সরকার যখন মনস্থির করেই ফেলেছে, তখন অর্ডিন্যান্স জারি করা হচ্ছে কেন? ক্যাবিনেট সচিবালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কর্তারা রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করা এবং ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়ার পরে অবশ্য দু’টি ফাইলেই সই করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তবে এই ঘটনায় সংবিধান এবং প্রচলিত প্রথার প্রতি দায়বদ্ধ প্রণব মুখোপাধ্যায় আরও এক বার আত্মপ্রকাশ করলেন বলে সরকারি কর্তাদের অভিমত।
সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার। তার আগের দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেবি-র আইন সংশোধন সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স জারির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। আবার তার দু’দিন আগে সংসদের বাদল অধিবেশন ডাকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সংসদ বিষয়ক কমিটি। এই দু’টি ফাইলই এক সঙ্গে রাষ্ট্রপতির কাছে সই করার জন্য পাঠান ক্যাবিনেট সচিব অজিত শেঠ।
এতেই ক্ষুব্ধ হন প্রণববাবু। তিনি বলেন, অর্ডিন্যান্স তখনই জারি করা হয়, যখন তড়িঘড়ি সংসদের অধিবেশন ডাকা সম্ভব নয়। এটাই সাংবিধানিক রীতি। এখন সংসদের অধিবেশনের মুখে তিনি যদি অর্ডিন্যান্সে সই করেন, তা হলে ভবিষ্যতে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বিশেষত, খাদ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স নিয়ে যখন ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ফাইল দু’টিতে তৎক্ষণাৎ সই না-করে তাঁর সচিবালয়ের মাধ্যমে নিজের অসন্তোষের কথা ক্যাবিনেট সচিবকে জানিয়ে দেন প্রণববাবু।
রাষ্ট্রপতির অসন্তোষের কথা জানার পরে হইচই পড়ে যায় সরকারের অন্দরমহলে। প্রশাসনিক কর্তারা রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। রাষ্ট্রপতিকে জানানো হয়, আসলে অনেক আগেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেবি সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স অনুমোদনের কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে দেরি হয়ে যায়। ইতিমধ্যে সংসদের অধিবেশনের সময় হয়েছে। এই ভুলের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাও চান ওই কর্তারা।
এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মতে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রণববাবু পুরোদস্তুর ‘কপিবুক’। সরকারের সঙ্গে কোনও রকম সংঘাতে তিনি যেতে চান না। সেই কারণেই আজমল কসাব বা আফজল গুরুর মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি খারিজের সুপারিশের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান নিয়ে কোনও আপত্তি তোলননি। আবার ‘কপিবুক’ বলেই সরকারের এই কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু তা নিয়ে অযথা হইচই করতে চান না বলেই নিজের অসন্তোষের কথা ঘরোয়া ভাবে সরকারকে জানিয়েছেন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে প্রণববাবু বরাবরই সাংবিধানিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার পক্ষে জোরদার সওয়াল করেছেন। দিল্লির রাজনীতির অলিন্দে তিনি ‘ম্যান অফ সিস্টেমস’ বলেই পরিচিত। প্রচলিত সাংবিধানিক রীতির লঙ্ঘন হলে এহেন প্রণববাবু যে চুপ করে থাকবেন না, সেটা সরকারি কর্তাদের বোঝা উচিত ছিল বলেই অনেক রাজনীতিকের মত।
|