এসপিকে চিঠি নিহতের বৌমার
এ বার খুনের অভিযোগে নাম অনুব্রতর
ভিযোগের নিশানায় ছিলেনই। এ বার সরাসরি খাতায়কলমে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে নালিশ দায়ের করলেন নিহত সাগরচন্দ্র ঘোষের পুত্রবধূ শিবানী। নাম জড়ালো অনুব্রতর অনুগামীদেরও।
মঙ্গলবার বিকেলে বোলপুর ডাকঘর থেকে রেজিস্ট্রি করে অনুব্রতর বিরুদ্ধে বীরভূমের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগটি পাঠান শিবানীদেবী। একই সঙ্গে ওই অভিযোগের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন, রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল, বীরভূমের জেলাশাসক ও মানবাধিকার কমিশনকে। ঘটনাচক্রে, সংবাদপত্রের খবরের ভিত্তিতে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এই ঘটনার তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশন সূত্রের খবর, “কমিশনের সিনিয়র অফিসারের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চার সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করবে।”
রেজিস্ট্রি ডাকে পাঠানো ওই অভিযোগপত্রে শিবানীদেবী খুনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত হিসেবে ৪১ জনের নাম উল্লেখ করেন। প্রথম নামটিই অনুব্রতর। পরের দু’টি নাম তাঁরই ঘনিষ্ঠ আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি বিকাশ রায়চৌধুরী ও বোলপুরে তৃণমূলের সাত্তোর অঞ্চল কমিটির সম্পাদক শেখ মুস্তাফার। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তিদানের দাবি রয়েছে ওই চিঠিতে।
শুধু তাই নয়, সাগরবাবুর খুনের ঘটনায় জোর করে পরিবারকে দিয়ে এফআইআরের বয়ান লিখিয়ে নেওয়া এবং নিরীহ চার জনকে গ্রেফতার করার যে অভিযোগ উঠেছে পাড়ুই থানার বিরুদ্ধে, তার উল্লেখও রয়েছে শিবানীদেবীর অভিযোগপত্রে। বীরভূমের পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা বুধবার বলেন, “কোনও অভিযোগ পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ দিন অনেক বার ফোন করার পরে রাতে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত বলেন, “ব্যস্ত আছি। কথা বলার সময় নেই।”
নিহত সাগরচন্দ্র ঘোষের স্ত্রী। বাঁধনবগ্রামে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
সম্প্রতি বোলপুরের কসবা বাসস্ট্যান্ডে ভোটের প্রচারে এক জনসভায় অনুব্রত প্রকাশ্যেই নির্দল প্রার্থীদের উপরে চড়াও হওয়ার হুমকি দেন। তার পর গত সোমবার চতুর্থ দফার পঞ্চায়েত ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে বোলপুরের কসবা পঞ্চায়েতের বাঁধনবগ্রামে নিজের বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হন ৬৪ বছরের সাগরবাবু। তাঁর ছেলে হৃদয় ঘোষ ওই পঞ্চায়েতেরই নির্দল প্রার্থী (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল)। মঙ্গলবার বর্ধমান মেডিক্যালে সাগরবাবুর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় অনুব্রত-গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই আঙুল তুলেছেন কসবা অঞ্চলের বড় অংশের মানুষ।
এই অবস্থায় ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর উপরে ভরসা করছেন হৃদয়বাবু। এ দিন গ্রামের বাড়িতে বসে তিনি বলেছেন, “জেলাশাসকের কাছে আমি আমার পরিবারের নিরাপত্তার আবেদন জানিয়েছিলাম। তবু বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না। পাড়ুই থানা সাজানো অভিযোগ নিয়ে আমাদেরই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত চার জনকে ধরল। যাঁরা নির্দোষ। ফলে, পুলিশের উপরে বিশেষ ভরসা নেই।” তাঁর সংযোজন, “যাঁকে (মমতা) দেখে, যাঁর ভরসায় প্রথম থেকে এই দল করেছি, আজ তাঁর কাছেই ন্যায্য বিচারের আর্জি জানাচ্ছি গণমাধ্যমের সাহায্যে। তা ছাড়া, মুখ্যমন্ত্রীকে তো চিঠি লিখেও সব জানানো হয়েছে।”
এমন পরিস্থিতিতে অনুব্রতর অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছেন বর্ধমানের মঙ্গলকোট ব্লকের কিছু বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থী। স্বপ্না খাতুন, মানোয়ার গাজি, কাজি মানোয়ারুল হক-সহ ঝিলু ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েক জন নির্দল প্রার্থী (বিক্ষুদ্ধ তৃণমূল) কাটোয়া মহকুমা শাসকের দফতরে চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন যে, মঙ্গলকোট পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল প্রার্থী আবদুল বাসেদের (অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ) নেতৃত্বে দৃষ্কৃতীরা তাঁদের হুমকি দিচ্ছে। ভোট গণনাকেন্দ্রে গেলে তাঁদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে অবশ্য অনুব্রত বলেছেন, “অভিযোগ মিথ্যা। ওই সব অভিযোগ নিয়ে মাথাব্যথা করার কারণও নেই!” একই ভাবে বুধবার রায়না ১ ব্লকের ২৬ জন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থী (নির্দল হিসেবে লড়া) বর্ধমানের পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে ভোটগণনার দিন নিজেদের নিরাপত্তা দাবি করেছেন।
অভিযোগের এত চাপ সত্ত্বেও অনুব্রতর বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ-প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা বুধবারও স্পষ্ট হয়নি। কসবার সভায় প্ররোচনামূলক বক্তব্য পেশ করার জন্য অনুব্রতর বিরুদ্ধে পাড়ুই থানায় বীরভূমের জেলাশাসক অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে মঙ্গলবারই জানিয়েছিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সচিব তাপস রায়। জেলা পুলিশ সে ব্যাপারে মুখ খোলেনি। এ দিন কমিশন-সচিব বলেন, “এর আগেও অনুব্রতবাবুর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছিল। কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা এসপি-র কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।” একই ভাবে অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের প্ররোচনামূলক বক্তৃতা নিয়েও কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা ডিএম-এসপি’র কাছে জানতে চেয়েছে কমিশন।
রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র অবশ্য এ দিন মহাকরণে বলেন, “অনুব্রত বারবার বলেছে, ওই কথাগুলো (কসবার সভায় বক্তৃতা) তার মুখ ফস্কে বেরিয়ে গিয়েছে। এর জন্য প্রকাশ্যে দুঃখপ্রকাশও করেছে। তবু তার বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন।” কিন্তু, সাগর ঘোষের হত্যাকাণ্ডে তাঁর দলেরই বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার প্রসঙ্গে মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, “তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে, তৃণমূলের ‘ড্রেস’ পরে সিপিএম যে ওই কাজ করেনি, কে তা বলতে পারে? তদন্ত হোক, সত্যিটা বেরিয়ে আসবে।”
নিরপেক্ষ তদন্ত হোক, চাইছেন কসবা অঞ্চলের মানুষও। এবং স্থানীয় পাড়ুই থানার ভূমিকায় তাঁরা পুলিশের উপরে আস্থা হারিয়েছেন। এ দিন বাঁধনবগ্রামে গিয়ে দেখা গেল, পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে গ্রাম কার্যত পুরুষশূন্য। রাস্তায় রাস্তায় চলছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারি। এলাকারই এক তৃণমূল নেতার কথায়, “পুলিশ যে আবার ওই গ্রামে হানা দেবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? তাই পুরুষরা গ্রাম ছেড়েছে।” আর বাঁধনবগ্রামের একাধিক মহিলা বললেন, “যে খুন হল, তাঁর আত্মীয়-পরিচিতদেরই পুলিশ ধরল। আর আসল খুনিরা গা ঢাকা দিল! নিরপেক্ষ তদন্ত হলে, রাঘববোয়ালদের নাম বেরোবে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.