তিন বছরেও ব্যবহার হয়নি পর্যটনের জন্য বরাদ্দ
রাজাদের স্মৃতি-বিজড়িত কোচবিহার জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্যের নানা নিদর্শন। কোচবিহারে রাসমেলার বয়স দু’শো বছর পেরিয়েছে, প্রতি বছর সেখানে ভিড় হয় কয়েক লক্ষ দর্শকের। রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারত কোচবিহার। তাই পর্যটনের পরিকাঠামো উন্নয়ন বাবদ জেলা পরিষদকে ৯৩ লক্ষ টাকা দিয়েছিল রাজ্য সরকার। তিন বছরে এক টাকাও খরচ হয়নি। অবহেলায় ধুঁকছে রাজ আমলের বহু নির্দশন। শীতলখুচিতে ভেষজ উদ্যান গড়ে তোলার প্রকল্পও নেওয়া হয়েছিল। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন বাবদ ৪৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। যে টাকা খরচ হয়নি। কোচবিহার জেলা পরিষদের বিদায়ী সিপিএম সভাধিপতি দিলীপ বিশ্বাসের সাফাই, “বড় মাপের ভেষজ উদ্যান, রাজবাড়িতে ভাইব্রেটিং কার চালু করার কথা ভেবেছিলাম। বাড়তি বরাদ্দ মেলেনি বলে কাজ শুরু করা যায়নি।” কিন্তু যা বরাদ্দ মিলেছে তা খরচ করতে পারলে তো বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া যেত। তা হলে? এই ব্যাপারে সভাধিপতির জবাব মেলেনি। এমন নানা অমনোযোগিতার ছাপ সর্বত্র। যেমন বছর তিনেক একই ভাবে পড়ে রয়েছে চ্যাংরাবান্ধা ট্রাক ট্রার্মিনাস তৈরির টাকা। কোনও বছরই খরচ হয় না দাই প্রশিক্ষণের এক টাকাও। সাড়ে তেরো কোটি টাকার বরাদ্দ পড়ে আছে শৌচাগার তৈরির প্রকল্প ‘টোটাল স্যানিটেশন ক্যাম্পেন’-এর অধীনে।
রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের কাজে গয়ংগচ্ছ মনোভাবের জেরে বহু গ্রাম এখনও অন্ধকারে। ফি বর্ষায় সন্ধ্যার পরে গ্রামের রাস্তায় যাতায়াত করতে গিয়ে সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা তাই কমেনি। রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুৎ যোজনা প্রকল্প ও গ্রামীণ বিদ্যুৎ যোজনা প্রকল্পে কোচবিহার ১ ব্লকে ১৯,৭৪৬টি পরিবারকে সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। আট হাজারেরও বেশি পরিবার এখনও বিদ্যুৎ পায়নি। তুফানগঞ্জ ২ ব্লকে লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ১২ হাজার পরিবার। সংযোগ এখনও পায়নি সাড়ে চার হাজার পরিবার। বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিল দে’র অভিযোগ, “গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ জেলার অন্তত ৫০ শতাংশ এলাকায় পৌঁছয়নি।” বেহাল রাস্তা, ভাঙাচোরা সেতু, জলের অভাব নিয়ে গড়িমসির অভিযোগ তো আছেই। কত রাস্তা রয়েছে জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে, তার মধ্যে কত রাস্তা সারানো প্রয়োজন, তার কোনও তথ্য নেই তাদের কাছে। জেলা পরিষদের পুস্তিকাও বলছে, ২০০৭-০৮ সালে অনুমোদিত স্বজলধারা প্রকল্প আজও চলছে খুঁড়িয়ে। জেলা পরিষদের কংগ্রেস সদস্য মজিবর রহমানের অভিযোগ, নদী ভাঙন ঠেকাতেও উদ্যোগী হয়নি জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা, তৃণমূল কংগ্রেসের শেফালি বর্মন অভিযোগ করেছেন, “দায়সারা কাজ হয়েছে। রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্টের হাল দেখে মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছেন। কাগজে-কলমে কাজ হয়েছে।”
বিদায়ী সভাধিপতি দিলীপবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, ইন্দিরা আবাস যোজনা, স্বাস্থ্য পরিষেবায় রাজ্যের প্রথম কোচবিহার জেলা পরিষদ। রাজ্য ও কেন্দ্রের অর্থ কমিশনের বরাদ্দ খরচে তৃতীয় স্থান। “কাজের মূল্যায়ন হয়েছে বলে আমরা ওই সব স্বীকৃতি পেয়েছি।” তবে তাঁরই দফতরের হিসেব বলছে, নিজস্ব তহবিলের ৩ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারেনি জেলা পরিষদ। অথচ যে কোনও উন্নয়নের কাজে ওই টাকা অবাধে ব্যবহার করা চলত।

খরচের খতিয়ান
২০১২-১৩ সালের হিসেব
কিছু প্রকল্প যাতে বরাদ্দের এক টাকাও গত অর্থবর্ষে খরচ হয়নি
• সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলায় বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প (৩.৪৪ কোটি) • পর্যটন (৯৩ লক্ষ) • সম্পূর্ণ গ্রামীণ রোজগার যোজনা পরিবহণ (৬৭ লক্ষ) • রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা (৪০ লক্ষ) • হলদিবাড়িতে দমকল কেন্দ্র (৩৬ লক্ষ) • জনশিক্ষা প্রসার ভারতী প্রকল্প (৬ লক্ষ) • শিক্ষার মানোন্নয়ন (২ লক্ষ) • সহায় (৪ লক্ষ) • উন্নতমানের বীজের জন্য অনুদান (৩ লক্ষ) • চ্যাংরাবান্ধা ট্রাক টার্মিনাস নির্মাণ (৩ লক্ষ)
কয়েকটি প্রধান প্রকল্পে যত খরচ হয়েছে
প্রকল্প হাতে মোট টাকা পড়ে আছে খরচ হয়েছে (%)
বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল ২১ লক্ষ ২০ লক্ষ ১.৮৩
ক্ষুদ্র সেচ ১.১৩ কোটি ১.০৩ কোটি ৮.৯৯
সাংসদের উন্নয়ন তহবিল ৯০ লক্ষ ৭২ লক্ষ ১৯.১০
ক্রীড়া ও যুব পরিষেবা ২০ লক্ষ ১৬ লক্ষ ২১.৬০
জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন ৯৪ লক্ষ ৬.৪০ কোটি ৩০.২১
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নয়ন ১.৩০ কোটি ৮৬ লক্ষ ৩৪.০৬
সীমান্ত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প ৫.৯৭ কোটি ৩.৪৪ কোটি ৪২.৩৯
রাজ্য গ্রামোন্নয়ন ১.২৮ কোটি ৬৭ লক্ষ ৪৭.৫১
টোটাল স্যানিটেশন ক্যাম্পেন ২৬.১০ কোটি ১৩.৫০ কোটি ৪৮.২৮
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ ১.৩৩ কোটি ৫৭ লক্ষ ৫৭.২৪
বিপর্যয় ত্রাণ তহবিল ৩৮ লক্ষ ৫ লক্ষ ৮৬.৫৯
জেলা জনস্বাস্থ্য সেল ৫২ লক্ষ ৫ লক্ষ ৯০.১৩
স্বজলধারা ১০.৭৫ কোটি ৯০ লক্ষ ৯১.৬৫
ইন্দিরা আবাস যোজনা ৭২.৪৩ কোটি ৭ লক্ষ ৯২.৭৪
ত্বরান্বিত গ্রামীণ জল সরবরাহ ১.০৩ কোটি ৫ লক্ষ ৯৫.১৬
বন ২২ লক্ষ ০.২২ লক্ষ ৯৯.০৩



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.