ভোট প্রচারের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস শাসিত অসম সরকারের বিরুদ্ধে গুন্ডা ঢোকানোর অভিযোগ কেন তুললেন, তা নিয়ে কোচবিহারের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। কংগ্রেস-সিপিএম ওই অভিযোগের সারবত্তা নিয়ে সরব হয়েছে। শাসক দল তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অনেকেই কোন প্রেক্ষাপটে, কার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী ওই অভিযোগ করেছেন, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। তৃণমূলের উপদলীয় কোন্দলের ফলেই এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলেও কটাক্ষ করেছেন বিরোধী কংগ্রেস-সিপিএম নেতাদের অনেকেই। |
তৃণমূলের অন্দরের খবর, যেখানে বেশ কয়েকটি এলাকায় নিচুতলায় কংগ্রেসের সঙ্গে অলিখিত ভাবে বোঝাপড়া হয়েছে, সেখানে এমন মন্তব্যে শেষ মুহূর্তে সমস্যার আশঙ্কা করছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের একাংশ। এমনকী, জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতা জানান, দলের ভোট সংক্রান্ত কোনও বৈঠকে অসম সরকারের বিরুদ্ধে গুন্ডা পাঠানোর অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়নি। সেখানে কেন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ওই অভিযোগ জানানো হল, তার উত্তর হাতড়ে বেড়াচ্ছেন তৃণমূলের অনেক নেতাই। যদিও তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী তো সবই স্পষ্ট করে বলেছেন। এটা নিয়ে বিরোধীরা নানা গালগল্প ছড়াতে চাইছে। উপদলীয় কোন্দলের অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মাথাভাঙার সভায় যান, সেই সময়ে দলেরই এক নেতা তাঁকে অসম সরকারের বিরুদ্ধে গুন্ডা ঢোকানো ও সিপিএমকে মদত দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে অভিযোগ করেন। দলের জেলা কমিটির অনেক সদস্য যে ব্যাপারে অবহিত ছিলেন না বলে দল সূত্রেই জানা গিয়েছে। তবে দলের তুফানগঞ্জের বিধায়ক অর্ঘ্য রায়প্রধান কিন্তু দাবি করেছেন, অসম সরকারের কাজকর্ম নিয়ে অবশ্যই সন্দেহের কারণ রয়েছে। তাঁর অভিযোগ, “অসম কংগ্রেস পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমকে মদত দিচ্ছে। সঙ্কোশ নদী পার হয়ে ফলিমারি ও ভানুকুমারির বেশ কিছু বুথ অসম লাগোয়া। সেখানে অসমের দুষ্কৃতীরা ঢুকে বাসিন্দাদের সিপিএমকে ভোট দেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। রবিবার আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বেশ কিছু দুষ্কৃতী ওই এলাকায় ঢুকেছিল। তাদের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগাযোগ থাকতে পারে। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে।” ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রী যে মঞ্চে বক্তৃতা দেন, সেখানে অর্ঘ্যবাবুও ছিলেন। প্রসঙ্গত, ওই মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, অসম সরকার এ রাজ্যে ভোটের সময়ে অশান্তি ছড়ানোয় মদত দিচ্ছে।
এই ব্যাপারে উত্তরবঙ্গে প্রচারে আসা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “অসম লাগোয়া তুফানগঞ্জে আমরা সে ভাবে মনোনয়ন দাখিল করতে পারিনি। মুখ্যমন্ত্রীর কথা যদি সত্যি হত, তবে ওখানে তৃণমূল মনোনয়ন জমা দিতে পারত না। তা ছাড়া অসমের সরকার এবং সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী যথেষ্ট ভদ্র। ওদের কী অন্য কাজ নেই!” প্রদীপবাবুর আশঙ্কা, উত্তরবঙ্গে ভোটের সময়ে সন্ত্রাসের ছক কষে নিজেদের দোষ আগে থেকে আড়াল করে রাখতে ওই সাফাই দিয়ে রাখার চেষ্টা করছে শাসক দল। কোচবিহার জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী জানান, তুফানগঞ্জে ৩৩০টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে কংগ্রেস ২৬টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে। যে এলাকায় লড়াইয়ে কংগ্রেস নেই, সেখানে কংগ্রেস শাসিত অসম সরকার দুষ্কৃতী ঢোকাবে বলে অভিযোগ করলে তা হাস্যকর মনে হয় বলে শ্যামলবাবুর দাবি।
সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায় অবশ্য জানান, অসম লাগোয়া এলাকায় ফের কেএলও সক্রিয় হলেও পুলিশি তত্পরতায় ২ জন ক’দিন আগে ধরা পড়েছে। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী অসম সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। কারণ কেএলও আর অসম সরকার এক নয়। জঙ্গিরা অসমেও বিভিন্ন নাশকতামূলক কাজ করছে। এর মধ্যে তৃণমূলের নিজেদের কোনও ব্যাপার আছে কি না, জানি না।” |