রেজিস্টার রয়েছে। সেই রেজিস্টারে অভিযোগও লিপিবদ্ধ হয়। অথচ পাঁচ বছরে তা নিয়ে সাধারণ সভা কিংবা জেলা সংসদে আলোচনা হয়নি। এই অভিযোগ করেন সিপিএম-পরিচালিত জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের বিরোধী দলের সদস্যরা। এমনকী, সিপিএমের সদস্যদের একাংশও সেই সুরেই সুর মিলিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, কোনও এলাকার উন্নয়নে ঢিলেমির অভিযোগ জানিয়ে সুফল মেলেনি। জলপাইগুড়ি সদরে রাস্তা, কালভার্ট তৈরি করায় টালবাহানার অভিযোগে সিপিএম জেলা পরিষদে বিক্ষোভ দেখায়।
ক্ষমতাসীন সিপিএমের দাবি, গত দু’বছরে রাজ্য সরকার যথেষ্ট টাকা না দেওয়ায় জেলার উন্নয়ন থমকে। কিন্তু বিরোধীরা বলছেন, পাঁচ বছরে উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয় না বলেই জেলায় সুসংহত উন্নয়নের পরিবেশ তৈরি হয়নি। বিরোধী দলনেতা, কালচিনির কংগ্রেস সদস্য মোহন শর্মার কথায়, “অভিযোগ রেজিস্টার কী জানলামই না। কখনও কোনও সভায় অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়নি। বিভিন্ন নির্মাণ কাজে অনিয়মের বা রূপায়ণে দেরি নিয়ে নালিশ জানিয়েছিলাম। কোনও আলোচনাই হয়নি।” জেলা পরিষদের বিদায়ী বোর্ডে ৩২ বাম সদস্য ছিলেন, বিরোধী কংগ্রেসের ছিল ২টি আসন।
|
জেলা পরিষদের বিদায়ী সিপিএম সভাপতি দীপ্তি দত্ত বলেন, “গণতান্ত্রিক ভাবেই বোর্ড চালানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি সভা ডাকা হয়েছে। নিয়ম মেনে আলোচনা হয়েছে। আমরা সব সময়ে আলোচনায় ভরসা রাখি।”
কিন্তু কংগ্রেসের অভিযোগ, জেলা জুড়ে একাধিক রাস্তা বেহাল হয়ে থাকলেও মেরামতির কাজে উদ্যোগী হয়নি জেলা পরিষদ। তা ছাড়া, জেলায় কত কিলোমিটার পথ জেলা পরিষদের দায়িত্বে রয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকাই কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। অনেক ক্ষেত্রেই রাস্তা মেরামতির বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হলে, জেলা পরিষদের রেকর্ডে সেই রাস্তার হদিস মেলেনি এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। এমন অনিয়ম ঘটতে পেরেছে কারণ জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে কত রাস্তা আছে, তা জেলা পরিষদের খাতাতেই নথিভূক্ত নেই।
সভাধিপতি অবশ্য বলেন, তালিকা নেই বলে কাজ আটকায়নি। তাঁর সাফাই, “গ্রামীণ এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিতে চেয়েছিলাম। গত দু’বছরে তো কোনও বরাদ্দ দেয়নি রাজ্য। যে খাতে টাকা পেয়েছি সেখানে কাজ হয়েছে। জেলা পরিষদের নিজস্ব খাত থেকেও রাস্তা, পানীয় জল ও নদী ভাঙন ঠেকানোরও কাজ হয়েছে।”
জেলা পরিষদের হিসেবই বলছে, বহু প্রকল্পের টাকা খরচ না-হয়ে, বা সামান্য খরচ হয়ে পড়ে। সব বরাদ্দ মিলিয়ে বছরের শেষে দেখা গিয়েছে, খরচ না হয়ে পড়ে রয়েছে প্রায় ৭৪ কোটি টাকা অর্থাৎ প্রায় ৩০ শতাংশ। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) দিব্যেন্দু দাস বলেন, “বর্ষার মরসুম ও পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতির কারণে চলতি বছরে বেশ কিছু প্রকল্পে খরচের হার কমেছে।”
জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের মোহন শর্মা বলেন, “এর জন্য দরকার সদিচ্ছা। এরা কাজ চালাতে যে প্রকল্পগুলি আবশ্যক সেগুলির জন্য খরচ করেছে। নিজে উদ্যোগী হয়নি।” তৃণমূল জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “জেলা পরিষদের নিজস্ব চিন্তা ভাবনা থাকলে শিক্ষার মতো খাতে বরাদ্দ ফেলে রাখার ঘটনা ঘটত না।”
|
খরচের খতিয়ান
|
কিছু প্রকল্প যাতে বরাদ্দের এক টাকাও গত অর্থবর্ষে খরচ হয়নি |
• সীমান্ত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প (৬৭ লক্ষ) • সম্পূর্ণ গ্রামীণ রোজগার যোজনা (৩৪ লক্ষ) • বন (২৮ লক্ষ) • বিএমএস (১৪ লক্ষ) • সেচ (১৩ লক্ষ) • জেলা পরিকল্পনা (৮ লক্ষ) • কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন (৮ লক্ষ) • কৃষি বিপণন (৫ লক্ষ) • জমি নথি সমীক্ষা (৬ লক্ষ) • উত্তরবঙ্গ তরাই উন্নয়ন প্রকল্প (৪ লক্ষ) • জওহর গ্রাম সমৃদ্ধি যোজনা (৩ লক্ষ) • স্বজলধারা (২ লক্ষ) • গ্রামীণ সংযোগ প্রকল্প (১ লক্ষ) • গ্রামোদয় অভিযান (১ লক্ষ) • তথ্য ও সংস্কৃতি (১ লক্ষ) • কমিউনিটি গ্রন্থাগার তথ্যকেন্দ্র (১ লক্ষ) |
কয়েকটি প্রধান প্রকল্পে যত খরচ হয়েছে |
প্রকল্প |
হাতে মোট টাকা |
পড়ে আছে |
খরচ হয়েছে (%) |
জল অনুসন্ধান ও উন্নয়ন |
৬৬ লক্ষ |
৬৪ লক্ষ |
৩.৮৩ |
শিশুশিক্ষা কেন্দ্র/ শিশুশিক্ষা |
১০ লক্ষ |
৯ লক্ষ |
৪.১৬ |
কৃষি |
১১ লক্ষ |
১০ লক্ষ |
৬.০৯ |
প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন |
৫২ লক্ষ |
৪১ লক্ষ |
২১.৯৩ |
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন |
৪ লক্ষ |
৩ লক্ষ |
২৬.৫৫ |
বিধায়কের এলাকা উন্নয়ন তহবিল |
৫৬ লক্ষ |
৩৯ লক্ষ |
৩০.৮৭ |
পশ্চাৎপদ শ্রেণিকল্যাণ |
১.০৩ কোটি |
৭১ লক্ষ |
৩১.৪৯ |
সাংসদের উন্নয়ন তহবিল |
২৯ লক্ষ |
১৯ লক্ষ |
৩৫.০৫ |
জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন |
২৫ লক্ষ |
১১ লক্ষ |
৫৬.৫৮ |
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ |
১৫.২৬ কোটি |
৬.২৫ কোটি |
৫৯.০০ |
টোটাল স্যানিটেশন ক্যাম্পেন |
৪১.২৪ কোটি |
১৬.৫৮ কোটি |
৫৯.৮০ |
রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা |
১.২৮ কোটি |
৪৮ লক্ষ |
৬২.৫২ |
গ্রামীণ জল সরবরাহ |
২.২৭ কোটি |
৬৯ লক্ষ |
৬৯.৭০ |
চিহ্নিত পশ্চাৎপদ গ্রাম |
১.৪০ কোটি |
৩১ লক্ষ |
৭৭.৬২ |
ইন্দিরা আবাস যোজনা |
৫৩.৭৪ কোটি |
২.৯০ কোটি |
৯৪.৬১ |
|