তেলেঙ্গানা পৃথক রাজ্য হলে গোর্খাল্যান্ডকেও পৃথক রাজ্যের মর্যাদা দিতে হবে। এই দাবিতে এ বার কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ বাড়ানোর কৌশল নিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। গত দু’দিন ধরেই কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বিভিন্ন সদস্যদের কাছে দরবার করছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি সহ মোর্চা নেতারা। আজ তাঁরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর কাছেই এই দাবি তুললেন।
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে সম্প্রতি তেলেঙ্গানা নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ঠিক এই সময় দিল্লিতে চলে এসেছেন রোশন এবং মোর্চার কয়েকজন বিধায়ক। জিটিএ চুক্তিতে গোর্খাল্যান্ডের উল্লেখ থাকার কথাটিও তুলেছেন তাঁরা। রোশনের যুক্তি, “পাহাড়ে জিটিএ তৈরি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেটাকে আমরা অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবেই দেখি। আমাদের আসল লক্ষ্য পৃথক গোর্খাল্যান্ড। সেই দাবি আমরা ছেড়ে দিইনি। জিটিএ চুক্তিতে তার উল্লেখও রয়েছে।” জিটিএ চুক্তিতে গোর্খাল্যান্ডের উল্লেখ থাকলে পরবর্তী কালে যে সমস্যা হতে পারে, ত্রিপাক্ষিক চুক্তির পরেই সেই অভিযোগ উঠেছিল। মোর্চার দাবি, কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিতে তেলেঙ্গানার মতো গোর্খাল্যান্ড নিয়েও আলোচনা হোক। এখানে রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। কেন্দ্রকেই পদক্ষেপ করতে হবে।
তেলেঙ্গানা পৃথক রাজ্য হলে যে গোর্খাল্যান্ডের মতো দেশের বিভিন্ন পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন নতুন করে মাথাচাড়া দেবে, তা কংগ্রেস নেতৃত্ব তথা মনমোহন সরকারেরও অজানা নয়। সেই জন্যই বারবার তেলেঙ্গানা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। গোর্খা নেতারা দিল্লিতে এসে কার্যত সেই আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণ করেছেন। আজ তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্ডে থেকে এ কে অ্যান্টনি, পি চিদম্বরমরা মোর্চা নেতৃত্বকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, তাঁরা যেন নতুন করে আন্দোলনে না নামেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোশনদের জানান, গোর্খাদের অবদানকে কেন্দ্রীয় সরকার সবসময়ই সম্মান জানিয়ে এসেছে। কিন্তু রোশনরা পাল্টা যুক্তি দেন, জিটিএ তৈরি হলেও তার উদ্দেশ্য সফল হয়নি। গোর্খাদের পরিচিতি সত্তার সমস্যা রয়েই গিয়েছে। গোর্খাদের এখনও বিদেশি বলে ডাকা হচ্ছে। শিন্ডে তাঁদের বলেন, গোর্খা জনজাতির কোনও মানুষকেই বিদেশি বলে ডাকা হবে না।
তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছাড়াও গত দু’দিনে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির পাঁচ সদস্যের সঙ্গে দেখা করেছেন রোশনরা। দিগ্বিজয় সিংহ, অম্বিকা সোনি, মোহন প্রকাশ, বি কে হরিপ্রসাদ, অজয় মাকেনদের স্মারকলিপি দিয়ে মোর্চা নেতারা যুক্তি দিয়েছেন, তেলেঙ্গানার দাবির অনেক আগে থেকেই পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি উঠে আসছে। পৃথক রাজ্যের দাবিগুলির মধ্যে এই দাবি সব থেকে পুরনো। তবে উল্লেখযোগ্য হল, কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করলেও দিল্লি এসেও দার্জিলিংয়ের সাংসদ বিজেপি-নেতা যশোবন্ত সিংহর সঙ্গে দেখা করছেন না মোর্চা-নেতারা। রোশন বলেন, “দার্জিলিং ফিরে যাওয়ার পরে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক বসবে। তারপরেই সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ পরবর্তী আন্দোলন-কর্মসূচির কথা ঘোষণা করবেন।”
এ দিনই পাহাড়ে মোর্চার শাখা সংগঠন বিদ্যার্থী মোর্চা এবং যুব মোর্চা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে একটি আবেদনপত্র দিয়েছে। সেখানে দ্রুত জিটিএ ছেড়ে বাইরে এসে আলাদা রাজ্যের জন্য আন্দোলনে নামার অনুরোধ করা হয়েছে। এই দাবিতে এদিন দু’টি সংগঠন দার্জিলিঙে মিছিলও করেছে। এমনকী মোর্চার কেন্দ্রীয় নেতারা সাড়া না দিলেও তাঁরা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে টানা আন্দোলন করবেন বলে দু’টি সংগঠনের তরফেই জানানো হয়েছে। |