এক দিকে রাজ্য প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের উপরে চাপ সৃষ্টি। পাশাপাশিই আত্মসমীক্ষার প্রস্তুতি। পঞ্চম ও শেষ দফার পঞ্চায়েত ভোটের আগে এক সঙ্গে দুই কাজই সেরে রাখল আলিমুদ্দিন। শেষ পর্যায়ের ভোটের আগে শরিকদের নিয়ে মরিয়া লড়াইয়ের কৌশল ঝালিয়ে নিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। আবার ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে অগস্টে চার দিনের রাজ্য কমিটির অধিবেশন ডাকল সিপিএম।
উত্তরবঙ্গের যে চার জেলায় কাল, বৃহস্পতিবার শেষ দফার পঞ্চায়েত ভোট, সেখানে বাম শরিকদের সাংগঠনিক অস্তিত্ব যথেষ্ট। কোচবিহার ও উত্তর দিনাজপুরের একাংশে ফরওয়ার্ড ব্লক শক্তিশালী। আবার জলপাইগুড়ি ও দক্ষিণ দিনাজপুরে আরএসপি বড় শক্তি। এই চার জেলাতেই তুলনামূলক ভাবে ভাল ফলের আশায় আছেন বাম নেতৃত্ব। এই প্রেক্ষিতেই শেষ দফার ভোটের আগে মঙ্গলবার আলিমুদ্দিনে বামফ্রন্টের বৈঠকে শেষ মুহূর্তের অঙ্ক বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বিমানবাবু, মঞ্জুকুমার মজুমদার, ক্ষিতি গোস্বামী, মনোজ ভট্টাচার্য, নরেন চট্টোপাধ্যায়েরা। বাম নেতৃত্বের আশঙ্কা, শেষ দফার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী তুলনামূলক ভাবে আরও কম থাকবে এবং সেই সুযোগে রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় রেখে ‘সন্ত্রাস’ চালাতে পারে শাসক দল। সেই কারণেই প্রশাসন এবং কমিশনকে চাপে রাখার চেষ্টায় এ দিন বৈঠকের পরে বিমানবাবু বলেছেন, “চার দফার ভোট থেকে বোঝা যাচ্ছে, কোথায় কত বেশি সন্ত্রাস হবে, তার প্রতিযোগিতা চলছে! ভোট লুঠের চেষ্টা হচ্ছে। গণতন্ত্র ধ্বংসের এ সব কারবার প্রশাসনকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে!”
শাসক দলের ‘সন্ত্রাসে’র কথা বললেও রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভাবে লোকসভা ভোটের মহড়া যে এখান থেকেই শুরু হয়ে যাবে, তা বিলক্ষণ জানে আলিমুদ্দিন। সে কথা মাথায় রেখেই সংগঠনের চেহারা বুঝে নিয়ে লোকসভা ভোটের চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে হাত দেওয়ার লক্ষ্যে আগামী ২২-২৩ অগস্ট সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। তার পরের দু’দিন, ২৪-২৫ অগস্ট বসবে রাজ্য কমিটির বর্ধিত বৈঠক। যেখানে ডাকা হয়েছে সব জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং গণসংগঠনের প্রতিনিধিদের।
সিপিএম নেতৃত্বই এখন বুঝতে পারছেন, তৃণমূলের বিরুদ্ধে এ বার যে অভিযোগ বিমানবাবুরা করছেন, অতীতে পঞ্চায়েত-সহ নানা স্তরের নির্বাচনে সেই গা-জোয়ারির রেকর্ডই রয়েছে তাঁদের নামে! লোকসভা ভোটের প্রস্তুতির দিকে এগোনোর সময় তাই দলে আত্মসমীক্ষার বার্তাও দিতে হচ্ছে সিপিএম নেতৃত্বকে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব যেমন এ দিনই হাওড়ায় ডিওয়াইএফআইয়ের মুখপত্রের প্রতিষ্ঠা দিবসের সভায় বলেছেন, “অনেক কলেজে ১৫ বছর ধরে নির্বাচনই হয়নি! যেখানে ১০ হাজার ভোটে জিতলেই চলে, সেখানে ৩০ হাজার ভোটে জিততে যাওয়ার কি দরকার ছিল?” বিভিন্ন এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদের কোনও প্রার্থীই খুঁজে পাওয়া যায়নি, অতীতের এই ঘটনা যে আদৌ বাস্তবসম্মত ও বিশ্বাসযোগ্য নয়, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন গৌতমবাবু। সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, শাসক দল হিসাবে তাঁদের অতীতের কিছু কাজকর্ম বিরোধী পক্ষে এসে ব্যুমেরাং হচ্ছে বুঝেই এমন আত্মসংশোধনের বার্তা দিতে হচ্ছে গৌতমবাবুদের।
দল ও ফ্রন্টের অন্দরে রাজনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশিই এ দিন ফের সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবের নেতৃত্বে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে বামেরা। অশান্তি এড়াতে ২৯ জুলাই পঞ্চায়েতের ভোট গণনা পুরনো প্রথা মেনে জেলা পরিষদ স্তর থেকেই শুরু করার আর্জি জানিয়েছে তারা। বাম নেতৃত্বের বক্তব্য, গত ১৭ জুন সর্বদল বৈঠকে কমিশনের তরফে বলা হয়েছিল জেলা পরিষদ থেকেই গণনা শুরু হবে। পরে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, গণনা শুরু হবে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে রেষারেষি বেশি বলে নিচু স্তর থেকে ফল আগে বেরোনো শুরু হলে অশান্তির আশঙ্কাও বেশি বলে বামেদের যুক্তি। কমিশনও সেই মর্মে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে।
|